‘সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণ করছে ভারত
দক্ষিণ এশিয়ায় মহাকাশ কূটনীতির পথে নতুন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ভারত। সাত প্রতিবেশী দেশের জন্য বিনা খরচে কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বা যোগাযোগ উপগ্রহ ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে নয়াদিল্লি।
এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৪৫০ কোটি টাকা খরচ করে মহাকাশে ‘সাউথ এশিয়ান স্যাটেলাইট’ পাঠাচ্ছে ভারত। আগামী ৫ মে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো’র জিও-সিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (জিএসএলভি-৯) অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে ‘সাউথ এশিয়ান স্যাটেলাইট’ নিয়ে উড়ে যাবে মহাকাশে। প্রতিবেশী দেশগুলোকে আগামী ১২ বছর বিনা খরচে যোগাযোগ সেবা দেবে এ উপগ্রহ।
প্রথমবারের মতো এ ধরনের কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে নয়াদিল্লি। দক্ষিণ এশিয়ায়ও এই কূটনৈতিক পদক্ষেপ প্রথম। এক দেশ উপগ্রহ পাঠিয়ে অন্য দেশকে ব্যবহারের সুযোগ দেয়া নতুন কিছু না হলেও সম্পূর্ণ নিজের খরচে মহাকাশে উপগ্রহ পাঠিয়ে তা অন্যান্য দেশের জন্য উৎসর্গ করছে, এ ঘটনা বিরল।
এর আগে একই সঙ্গে ১০৪টি উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠিয়ে ইতিহাস গড়ে ইসরো। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ইসরোর বিজ্ঞানীদের এক প্রস্তাবে বলেন, এমন কোনো মহাকাশ কর্মসূচি নেয়া যায় কিনা যা ভারতের প্রতিবেশীদের উপকারে আসবে।
মোদির প্রস্তাব অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়া থেকে দারিদ্র্য দূর করার মূল অস্ত্র হচ্ছে শিক্ষার প্রসার ঘটানো। শিক্ষার দ্রুত প্রসার ঘটাতে ইন্টারনেট সেবাই সবচেয়ে কার্যকরী হবে বলে মনে করেন তিনি। ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দক্ষিণ এশিয়ার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতেই মহাকাশে সার্কভুক্ত দেশের জন্য একটি উপগ্রহ পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন মোদি।
ইসরোর বিজ্ঞানীদের ওই প্রস্তাব দেয়ার পর ২০১৪ সালের শেষ দিকে সার্কের বৈঠকেও মোদি একই প্রস্তাব দেন। সার্কভুক্ত সব দেশ ভারতের প্রস্তাবে প্রথমে রাজি হলেও ২০১৫ সালে পাকিস্তান জানিয়ে দেয়, ভারতের পাঠানো উপগ্রহের সহায়তা তাদের দরকার নেই। কারণ তাদের নিজস্ব মহাকাশ কর্মসূচি রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার বলছে, ভারত ছাড়াও পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপ যাতে উপগ্রহটিকে ব্যবহার করতে পারে, সে কথা মাথায় রেখেই প্রথমে কাজ শুরু করেছিলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। ২০১৬ সালেই উপগ্রহটিকে মহাকাশে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু মাঝপথে পাকিস্তান এই উপগ্রহের সুবিধা নিতে না চাওয়ায় কাজ কিছুটা পিছিয়ে যায়। উপগ্রহটির ফ্রিকোয়েন্সি কো-অর্ডিনেশনে আবার রদবদল ঘটাতে হয় বিজ্ঞানীদের।
পাকিস্তান প্রকল্প থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করার পর উপগ্রহটির নাম বদলে দিয়েছে ভারত। একে সার্ক স্যাটেলাইট নামে ডাকা হচ্ছে না। এখন নয়াদিল্লি একে ‘সাউথ এশিয়ান স্যাটেলাইট’ বলছে। নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ইতোমধ্যেই এ উপগ্রহ ব্যবহার করতে চেয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেছে বলে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আফগানিস্তানের সঙ্গেও কয়েক দিনের মধ্যেই চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।
এসআইএস/জেআইএম