উ. কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার ক্ষমতা নেই যুক্তরাষ্ট্রের
কোরীয় উপদ্বীপে পাড়ি জমানো মার্কিন রণতরী ইউএসএস কার্ল ভিনশনের ওজন প্রায় ৯৭ হাজার টন। এতে রয়েছে কয়ক ডজন স্টিলথ জেট (রাডার ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম যুদ্ধবিমান), ভারী অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত ৫ হাজার মার্কিন নৌ-সেনা। তবে ব্যাপক ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও ক্ষেপণাস্ত্রে গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করার সক্ষমতা নেই মার্কিন রণতরী কার্ল ভিনশনের।
পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জেরে ওয়াশিংটনের সঙ্গে পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মাঝেই মার্কিন এই রণতরী দক্ষিণ কোরিয়ার জলসীমায় পৌঁছেছে। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন পুরোদমে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি দেয়ায় সিউলের জলসীমায় ওই রণতরী মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভারী গোলাবর্ষণের সক্ষমতা থাকলেও কার্ল ভিনশন থেকে গোলা ছুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার সক্ষমতা নেই বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক নিউজ উইক। তবে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র উত্তর কোরিয়ার হাতে ২০ থেকে ১২০টি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। উত্তর কোরিয়ার এসব ক্ষেপণাস্ত্র দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে স্কটল্যান্ড, আলাস্কা অথবা কানাডায় আঘাত হানতে সক্ষম।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার জন্য দূর্ভেদ্য নজরদারি ব্যবস্থা থাকতে হবে রণতরীতে। এটি শুধুমাত্র মার্কিন রণতরী কার্ল ভিনশনই নয়; দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সর্ববৃহৎ যুদ্ধ জাহাজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্য তিন যুদ্ধজাহাজ- ইউএসএস ওয়েনি ই. মেয়ার, ইউএসএস মাইকেল মারফি ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরিচালিত ইউএসএস লেক চ্যাম্পিয়নেও এ ব্যবস্থা নেই।
কিন্তু কোরীয় দ্বীপে দীর্ঘ খেলা খেলে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার প্রথমবারের মতো দক্ষিণ কোরিয়ায় ওয়াশিংটনের অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘থাড’ পৌঁছেছে। তবে এখনো তা স্থাপন করা হয়নি; দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন থাড পৌঁছানোর পর দেশটিতে প্রতিবাদও দেখা গেছে। চীনও যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছে।
ইউএসএস কার্ল ভিনশনের ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়ে পেন্টাগণের এক মুখপাত্র ব্লুমবার্গকে বলেন, আমরা অস্ত্র ব্যবস্থার নির্দিষ্ট সক্ষমতার বিষয়ে আলোচনা করছি না। সব ধরনের হুমকি মোকাবেলার সক্ষমতা নির্দিষ্ট একক কোনো ব্যবস্থার নেই। বরং এটি একটি সমন্বিত পদক্ষেপ; যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে স্থল ও সমুদ্রভিত্তিক বিভিন্ন স্তরের ব্যবস্থা রয়েছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা অথবা অন্য কোনো স্থান অভিমুখে ছুটে চলা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত চারটি যুদ্ধজাহাজ প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে। মার্কিন এই কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া উচিত। দক্ষিণ কোরিয়ার আশ-পাশের অন্তত ১৫টি ঘাঁটি রয়েছে; যেখানে মার্কিন সৈন্য ও অস্ত্র আছে।
বুধবার উত্তর কোরিয়া হুমকি দিয়ে বলেছে, প্রতি ছয় সপ্তাহে অন্তত একটি করে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে তাদের। এর একটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে; যাতে জুড়ে দেয়া হয়েছে দেশটির নেতা কিম জং উনকে। পিয়ংইয়ং ওই ছবি প্রকাশের পর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ কিমের ছবি ‘ডিসকো বল’ হিসেবে মন্তব্য করেছে। উল্লেখ্য, ক্ষেপণাস্ত্রের ভেতরে অত্যন্ত ছোট আকারের স্থাপন করা যায় এই ‘ডিসকো বল’।
গত ১১ বছরের মধ্যে সম্প্রতি ষষ্ঠবারের মতো পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। কিন্তু সর্বশেষ এই পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে পিয়ংইয়ং। মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ তিন ক্ষেপণাস্ত্র হিরোশিমায় ফেলা বোমার আকারের মতো বলে উল্লেখ করেছে।
সূত্র : নিউজ উইক, ব্লুমবার্গ।
এসআইএস/আরআইপি