নেপালে এক বোতল পানির দাম ৩২০ রুপি!


প্রকাশিত: ০১:৫৮ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০১৫

২৫ তারিখের ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়েছে নেপাল। দিনটার অভিজ্ঞতা যেন চোখের সামনে এখনও জীবন্ত। স্বাভাবিক জীবনযাপন কেমন তছনছ হয়ে গেল প্রকৃতির রোষে। মাটির কম্পন কয়েক মুহূর্তেই পাল্টে দিয়েছে গোটা ছবিটা। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত নেপালে আটকে পড়ার পর নানা ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেন বহু পর্যটক।

ভারতের উত্তরপ্রদেশের বদ্রীনাথ চৌবে। বছর ৪৫। এই সরকারি চাকরিজীবী স্ত্রী ও বড় মেয়ের সঙ্গে নেপালে ১০ দিনের ট্যুরে গিয়েছিলেন। ২৪ তারিখই পৌঁছান নেপালে। সেদিনটা বিশ্রাম নিয়ে পরের দিন থেকে ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা ছিল।

দেশে ফিরে নেপাল ভূমিকম্পের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ ভারতীয় পর্যটকদের চৌবে বাবু বললেন, ভূমিকম্পের ভয়াবহতা দেখলাম। তবে মনে হচ্ছে, ভূমিকম্পের পরের চিত্রটা আরও বেশি ভয়ঙ্কর। মেয়ের ডান পায়ের উপর ভেঙে পড়েছিল একটা বিশাল বড় থাম। ও পা-টা নাড়াতেই পারছে না। অথচ হাসপাতালে চিকিৎসকরা তার চিকিৎসার সময়ই পাচ্ছেন না। তাদেরও দোষ দিই না। হাসপাতালে এত রাশ, তার উপর অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। তাদের চিকিৎসা আগে প্রয়োজন, কিন্তু চোখের সামনে মেয়েটাকেও যে এই অবস্থায় দেখতে পারছি না।

অন্যদিকে ঋষি আহুজা। ভূমিকম্পের জেরে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়েছিল ঋষি। বের হতে পারছিলেন না। ঋষির কথায়, সে স্তূপ শুধু ইট কাঠ পাথরের ছিল না, ছিল মৃত ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া কিছু ঠাণ্ডা শরীরেও। তারই মধ্যে টানা আড়াই দিন আটকে ছিলাম। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে, বমি যেন গলার কাছে দমক দিচ্ছে। তবুও কোনও উপায় নেই। মিথ্যা বলব না ওই পরিস্থিতিতে সত্যিই অনেকবার মৃত্যু কামনা করেছিলাম।

যদিও আইএএফ-এর জাম্বো জেটে জরুরিকালীন অবস্থান ভারতে ফিরে আসতে পেরেছেন ঋষি। নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন ভার্গভ ত্রিবেদীও, ভূমিকম্প, আফটার শক, সব পেরিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য যখন বিমানবন্দরে পৌঁছলাম, তখন দেখি প্রায় ৬-৭ হাজার মানুষ ততক্ষণে বিমানবন্দরের মাটি আকঁড়ে পড়ে গিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই ভারতীয়। সবাই বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়। নেপালি পুলিশকর্মীরা ভিড় সামলাতে নাকানিচোবানি খাচ্ছেন। ফলে বিরক্ত হয়ে, কখনও ধাক্কাও মারছেন ভিড় হঠাতে। ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের ফোন সুইচড অফ। দিশেহারা অবস্থা।

অনুভব বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভূমিকম্পের জেরে নেপালে আটকে পড়েছিলেন। অনুভব জানালেন, কাউকে খাটো না করেই বলছি, নেপালের ভূমিকম্পে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারের জন্য সমবেদনা জানাই তবে যাঁরা বেঁচে গিয়েছেন তাদের অবস্থাও কিন্তু বেশ শোচনীয় ছিল। সময় যত বাড়ছে তত মানুষের বিরক্তি বাড়ছে, হাসপাতালে জায়গা নেই, একটা রোগীর গায়ের উপরই প্রায় আর একজনকে এনে ফেলে রাখা হচ্ছে। ওষুধ নেই। খাবার নেই।

কাঠমান্ডু বিমানবন্দর থেকে একটা পানির বোতল ৩২০ রুপি দিয়ে কিনতে হচ্ছিল। বিস্কুটের ছোট ১০ রুপির প্যাকেট সাড়ে ৪০০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছিল। আমরা তা কিনতে বাধ্যও হচ্ছিলাম। সৃষ্টিকর্তার অশেষ দয়া শেষমেষ দেশে ফিরে আসতে পেরেছি।

বিএ/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।