প্রধানমন্ত্রী পদে বহালই থাকলেন নওয়াজ শরিফ


প্রকাশিত: ১০:০৯ এএম, ২০ এপ্রিল ২০১৭

পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য নেই বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে যৌথ তদন্ত দল গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের এ নির্দেশের ফলে ক্ষমতায় থাকতে নওয়াজের জন্য কোনো বাধা থাকল না। পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার বিভক্ত রায় দিয়েছে বলে দেশটির জাতীয় দৈনিক ডন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ সুপ্রিম কোর্টের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন, শীর্ষ আদালতের রায় ৩-২ এ বিভক্ত। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে চিঠিতে বলেছিলেন যে, এ বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করা উচিত। আদালতও তাই বলেছেন- বলেন তিনি।

আসিফ বলেন, ‌‘আমরা সব ধরনের তদন্তের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। আজ এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, আমাদের বিরোধীরা আদালতের কাছে যে তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন তা পর্যাপ্ত নয়। আমরা জয়ী হয়েছি।’

পাক প্রধানমন্ত্রীর কন্যা মরিয়ম নেওয়াজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে নওয়াজ শরিফ ও পরিবারের সদস্যদের ছবি টুইট করেছেন। সেখানে রায়ের বিজয় উদযাপন করতে দেখা যায়। কোনো ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ বরাবরই নাকচ করে দিয়েছেন নওয়াজ শরিফ ও তার পরিবার। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ অভিযোগ আনা হয়েছে বলে দাবি করেছে পাক প্রধানমন্ত্রীর পরিবার।

গত বছর পানামা পেপারসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্ষমতাসীন নেতা ও তাদের আত্মীয়-স্বজনরা অর্থপাচারে জড়িত বলে কয়েক লাখ নথি প্রকাশ করা হয়। ওই সময় পানামার আইনি প্রতিষ্ঠান ‘মোসাক ফনসেকা’ থেকে এসব গোপন দলিল ফাঁস হয়ে যায়। নথি বিশ্লেষণ করে ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) জানায়, অর্থপাচারে বিশ্বের শতাধিক রাষ্ট্রপ্রধান, ২০০ দেশের রাজনীতিক, খেলোয়াড়, চলচ্চিত্র তারকাসহ ২ লাখের বেশি মানুষ জড়িত।

কর ফাঁকি দিয়ে অর্থপাচার কেলেঙ্কারিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কন্যা মরিয়াম, ছেলে হাসান ও হুসেইন নেওয়াজের নাম উঠে আসে। এতে বলা হয়, আটটি অফশোর কোম্পানি রয়েছে পাক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের। এছাড়া চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও তার আত্মীয়-স্বজন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠজন, আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুনডার ডাভিড গুনলাগসন এবং বার্সেলোনার ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি।

অর্থপাচারে জড়িত বিশ্বের প্রভাবশালী বিভিন্ন নেতার নাম প্রকাশের জেড়ে হইচই শুরু হয় বিশ্বজুড়ে। পানামা পেপারস নামে পরিচিতি পাওয়া এ গোপন দলিলপত্র এযাবৎ কালের সবচেয়ে ব্যাপক গোপন তথ্য ফাঁসের খেতাব পায়। এতে ক্ষমতাধর রাজনীতিক থেকে শুরু করে নামকরা সেলিব্রেটি অনেকের কর ফাঁকির গোপন তথ্য বেরিয়ে আসে।

ওই সময় পানামা পেপারসে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের পরিবারের আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়ে তথ্য ফাঁস হওয়ার পর দেশটির রাজনৈতিক দল পিটিআই’র প্রধান ইমরান খান বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। পানামা পেপারসে তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর নওয়াজের দেশ শাসনের নৈতিক অধিকার নেই বলেও দাবি করেন ইমরান। বলেন, আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর মতো নওয়াজেরও পদত্যাগ করা উচিত। কর ফাঁকি দেয়ার জন্য কিংবা কালো টাকা রক্ষার জন্য শরিফের পরিবার এবং স্বজনরা বিদেশে অর্থ পাচার করছে।

বৃহস্পতিবার পাক প্রধানমন্ত্রীর এ কেলেঙ্কারির অভিযোগের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে অন্তত দেড় হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। অফশোর কোম্পানিতে থাকা নওয়াজের সম্পদের তদন্তে একমত হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

 

এসআইএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।