‘নিজেকে হিন্দু প্রমাণ দিয়েই পুরীর মন্দিরে ঢুকতে হবে মমতাকে’


প্রকাশিত: ০৩:১১ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০১৭

পুরীর মন্দির হিন্দুদের; জগন্নাথ শুধুমাত্র হিন্দুদের দেবতা। তাই সেই মন্দিরে প্রবেশ করে জগন্নাথকে পূজা দিতে হলে নিজেকে ‘হিন্দু’ প্রমাণ করতে হবে। এমন দাবিই তুলেছে কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)।

পরিষদের ওড়িশার দায়িত্বে থাকা পূর্ব ক্ষেত্রের প্রমুখ শচিন সিংহ বলেন, ‘পুরীতে জগন্নাথ শুধু হিন্দুদেরই দেবতা। ওই মন্দির শুধু হিন্দুদের। কিন্তু গোটা দেশের কাছে মমতা ব্যানার্জি সম্পর্কে ‘হিন্দুবিরোধী’ ইমেজ তৈরি হয়েছে। তাই এখন মুখ্যমন্ত্রীকে জোর গলায় ‘আমি হিন্দু’ বলতে হবে।

গত তিনদিন ধরে ওড়িশার কটকে ভিএইচপির বৈঠক চলে। বৈঠক শেষ করে মঙ্গলবার কলকাতায় এসেছেন শচিন সিংহ। তিনি এ দিন বলেন, “ওই বৈঠকের সময়ই দেখেছি ওড়িশায় মমতা ব্যানার্জির সম্পর্কে নানা বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে। শুধু ওড়িশাতেই নয়, গোটা দেশেই তিনি ‘হিন্দুবিরোধী’ বলে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। মনে হচ্ছে, তারই ফলশ্রুতি হিসেবে পুরী মন্দিরের দ্বৈতাপতিরা মন্দিরে প্রবেশ নিয়ে বাধা তৈরি করেছে।”

সম্প্রতি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক হয় ওড়িশায়। ভুবনেশ্বরে বৈঠক ছাড়াও রোড শো করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর পরই মমতা ব্যানার্জির ভুবনেশ্বর সফর নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে।

পরে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, এ সফর আদৌ রাজনৈতিক নয়। রোজভ্যালি কাণ্ডে জেলবন্দি নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে হাসপাতালে দেখতে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে পুরীর মন্দিরে পূজা দেবেন তিনি।

শচিন সিংহ জানান, শুধু রাজনৈতিক মহলই নয়, ওড়িশায় সাধারণ মানুষের মধ্যেই ধারণা ছিল এ সফরে কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ করবেন মমতা। সম্প্রতি একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওড়িশায় কিছু কিছু জায়গায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এখনও উত্তেজনা রয়েছে। বহু মানুষ ঘরছাড়া। এর মধ্যে মমতা ব্যানার্জির সভা উত্তেজনা অশান্তি বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল।

শচিন সিংহ আরও বলেন, ‘মমতার সভা থেকে অশান্তি বাড়তে পারে বলে বিশ্ব হিন্দু পরিষদেরও আশঙ্কা ছিল। এছাড়া সভায় বাধা দেয়ার জন্য তৈরি ছিল বজরঙ্গ দল।’

যে কারণে মমতাকে জগন্নাথ মন্দিরে ঢুকতে না দেয়ার আন্দোলন!

রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে গিয়েও পূজা দেবেন। কিন্তু মমতার সেই আশায় জল ঢালার জন্য পথে নামল পুরীর শ্রী জগন্নাথ সেবায়েত সম্মিলনী।

তাদের দাবি, কোনোভাবেই মমতাকে পুরীর মন্দিরে ঢুকতে দেয়া যাবে না। তাকে প্রবেশাধিকার দিলে সেটা জগন্নাথের লক্ষ লক্ষ ভক্তের ভাবাবেগে আঘাত দেয়া হবে। কারণ হিসেবে সেবায়েত সম্মিলনী বলছে, মমতা গোমাংস খাওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন।

সংগঠনের সম্পাদক সোমনাথ কুন্তিয়ার বক্তব্য, ‘অহিন্দু এবং যারা গোমাংস খায়, তাদের মন্দিরে প্রবেশাধিকার নেই। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী যদি এই ব্যাপারে তার অবস্থান স্পষ্ট করেন, তবেই আমরা ভেবে দেখব, তাকে মন্দিরে ঢুকতে দেয়া হবে কি না।’

এর পরেই পুরীর পুলিশ সোমনাথ কুন্তিয়াকে আটক করেছে। পুলিশ বলছে, মমতার পুরী সফর নিয়ে তারা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটতে দেবে না।

এদিকে তৃণমূলের অভিযোগ, এর পেছনে বিজেপির মদত রয়েছে। তারাই মমতার পুরী যাত্রা নিয়ে রাজনীতি করছে। তবে ওড়িশা রাজ্য বিজেপি সভাপতি বসন্ত পণ্ডা দাবি করেছেন, তারা কোনো রাজনীতি করছেন না। বসন্তর বক্তব্য, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভগবান জগন্নাথের আশীর্বাদ নিতেই পারেন। পুরীর মন্দির সব হিন্দুর জন্যই উন্মুক্ত।’

তৃণমূল সূত্রে খবর, বুধবার বিকেল ৫টায় নির্ধারিত সূচি মেনেই মমতা পুরীর মন্দিরে যাবেন।

এসআইএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।