যুক্তরাষ্ট্র- উ. কোরিয়া যুদ্ধে চীন-রাশিয়ার লাভ কী?


প্রকাশিত: ০৪:০৫ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০১৭

যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শতাধিক যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী কার্ল ভিনসনকে অনুস্মরণ করতে উত্তর কোরিয়ার জলসীমায় গোয়েন্দা জাহাজ মোতায়েন করেছে চীন এবং রাশিয়া। কোরীয় উপদ্বীপে মার্কিন ওই রণতরী মোতায়েন ঘিরে উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চরম উত্তেজনার মাঝে গোয়েন্দা জাহাজ মোতায়েন করেছে বেইজিং ও মস্কো।

জাপানের একাধিক সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির জাতীয় দৈনিক দ্য ইয়োমুরি শিমবুনের এক প্রতিবেদনে চীন এবং রাশিয়ার নৌ-বাহিনীর ওই গোয়েন্দা বিমান মোতায়েনের তথ্য জানানো হয়েছে।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার বলছে, উত্তর কোরিয়া সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন রেখেছে পিয়ং ইয়ংয়ের দীর্ঘদিনের মিত্র রাশিয়া। ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া সংঘাতের নতুন বলি হতে পারে এই দেশ।

চীন-রাশিয়া উভয় দেশই উত্তর কোরিয়াকে বাফার স্টেট হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। নিজ নিজ দেশের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই পিয়ং ইয়ংকে স্থিতিশীল রাখা প্রয়োজন বেইজিং এবং মস্কোর জন্য।

কয়েকদিন আগেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসেন বলেছেন, এ যাবৎকালের সবচেয়ে খারাপ সম্পর্ক বিরাজ করছে ওয়াশিংটন এবং মস্কোর মধ্যে। ফলে কোরিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে সিরিয়ার মতো পরিস্থিতিতে যে যুক্তরাষ্ট্র পড়বে তা সহজেই অনুমেয়। তবে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে রয়েছে জাপান। সোমবার দ্য ইয়োমুরি শিমবুনের এক জরিপে বলা হয়েছে, অন্তত ৬৪ শতাংশ জাপানি নাগরিক চায় পিয়ং ইয়ংয়ের পারমাণবিক অস্ত্রের লাগাম টানতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ প্রয়োগে তাদের সম্মতি রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়ার যুদ্ধের দামামা এমন এক সময় বাজছে যার কয়েকদিন আগেই ফ্লোরিডায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচির লাগাম টেনে ধরতে ও দেশটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চীনের সহায়তা চায় ওয়াশিংটন। তবে এর কয়েক ঘণ্টা পার না হতেই কোরীয় দ্বীপে পারমাণবিক যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করেন ট্রাম্প।

২০০৬ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচবার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। কিন্তু ষষ্ঠবার পরীক্ষা চালানোর ঘোষণা দেয়ায় দেখা দিয়েছে বিপত্তি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে দেয়ার মতো অবস্থানে নেই বলে জানিয়েছেন। এরপরও রোববার উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায় এবং তা ব্যর্থ হয়।

কোরীয় দ্বীপে জঙ্গিবিমানবাহী মার্কিন রণতরী মোতায়েন ঘিরে উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যেকোনো সময় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে চীন। একই সঙ্গে দুই দেশকে যুদ্ধংদেহী অবস্থান থেকে সরে আসারও আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং।

কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে তা চীনের জন্য ব্যাপক পীড়াদায়ক হতে পারে। এই যুদ্ধে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। বিবিসি বলছে, উত্তর কোরিয়ার মিত্র চীনের শঙ্কা যুদ্ধ শুরু হলে পিয়ং ইয়ংয়ের স্বৈরশাসকের পতন ঘটবে। এর ফলে দেশটির সঙ্গে তাদের সীমান্ত সমস্যা তৈরি হবে।

শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যেকোনো সময় সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে। উভয়পক্ষকে উত্তেজনা ও হুমকি পাল্টা হুমকি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায় চীন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই এ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।

এদিকে, উত্তর কোরিয়া যদি পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করে তাহলে ‘কড়া এবং অপ্রতিরোধ্য জবাবের হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। কোরীয় উপদ্বীপে স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে চীন, রাশিয়া। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থানে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়া।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে উত্তর কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সংকটের সমাধান করা উচিত। এছাড়া উত্তর কোরিয়ার জলসীমায় গোয়েন্দা জাহাজ মোতায়েনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে যে সতর্ক বার্তা দিতে চাচ্ছে চীন এবং রাশিয়া সে বিষয়টিও পরিষ্কার।

এদিকে উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে কৌশলগত ধৈর্য্যের যুগ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স পিয়ং ইয়ংয়ের বিরুদ্ধে একতরফা হামলার হুমকিও দিয়েছেন। তার এই হুমকির পর সোমবার মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক পথ।

তিনি বলেছেন, সিরিয়ার মতো একই ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে না যুক্তরাষ্ট্র বলে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।

এসআইএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।