উ. কোরিয়ার পারমাণবিক মিসাইল কি যুক্তরাষ্ট্রে আঘাতে সক্ষম?


প্রকাশিত: ০৩:২৪ পিএম, ১৫ এপ্রিল ২০১৭

যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়ে ওয়াশিংটনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এরই মধ্যে পীত সাগর ও জাপান সাগরের তীরবর্তী কোরীয় দ্বীপটিতে উত্তেজনা শুরু হয়ে গেছে।

তবে হুমকি-ধমকি, সামরিক শক্তি প্রদর্শন করে উত্তর কোরিয়া কি পারবে যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক মিসাইলের আঘাত হানতে?

উত্তর কোরিয়া শনিবারই যেকোনো সময় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাতে পারে- এ আশঙ্কায় ওই অঞ্চল ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। যুদ্ধের আশঙ্কা করছে চীন আর উত্তর কোরিয়ার মিসাইল পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

তবে ওয়াশিংটনের উদ্বেগের মূল কারণ, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে মনে করা হচ্ছে উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রে পরমাণু হামলা চালানোর ক্ষমতা অর্জন করছে।

এ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘটনাটি হবে উত্তর কোরিয়ার ষষ্ঠবারের মতো পরমাণু বোমার পরীক্ষা। উত্তর কোরিয়ার ১০০০ হাজারের বেশি বিধ্বংসী মিসাইল আছে বলে ধারণা করা হয়, যা আমেরিকায়ও সরাসরি আঘাত হানতে সক্ষম।

এসব মিসাইল দূরপাল্লার এবং বিভিন্ন ধরনের ক্ষমতাসম্পন্ন। পিয়ংইয়ং তার পরমাণু কর্মসূচি গত কয়েক দশকে ব্যাপকভাবে এগিয়ে নিয়েছে।

ষাট এবং সত্তরের দশকের আর্টিলারি রকেট থেকে আশি এবং নব্বইর দশকে স্বল্প এবং মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রে সক্ষমতা অর্জন করে। এরপর দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পথে দেশটি অনেকটাই এগিয়ে গেছে।

atom

তবে সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া ঘোষণা দিয়েছে, তারা আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্রেরও পরীক্ষা চালানোর দক্ষতা অর্জন করেছে। এর ফলে পশ্চিমা কোনো দেশে লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পারবে উত্তর কোরিয়া। আন্তঃমহাদেশীয় বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রই সর্বোচ্চ দূরবর্তী ক্ষমতাসম্পন্ন মিসাইল, যা ৫৫০০ কিলোমিটারের বেশি দূরপাল্লার হয়।

উত্তর কোরিয়ার মাঝারি মাত্রার যেসব ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে তা দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা জাপানে আঘাত হানতে পারে। ২০১৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ এ তথ্য দিয়েছে।

দেশটি ব্যাপক ক্ষমতাসম্পন্ন মুসুডান মিসাইল নিয়েও দীর্ঘ গবেষণার পর গেল বছর বেশ কয়েটি পরীক্ষা চালায়।

সবচেয়ে কম মাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র যেমন পুরো দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানে লক্ষবস্তুতে আঘাত হানতে পারে তেমনি এর উচ্চমাত্রার মিসাইল গুয়ামে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানতে সক্ষম।

দেশটির মাল্টি-স্টেজড মিসাইল শক্তিও এগিয়ে গেছে গত কয়েক দশকে। তায়পেডং-টু নামের মিসাইল অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের অনেক এলাকা এবং অন্যান্য দেশে আঘাত হানার ক্ষমতা রাখে।

আর আন্তঃমহাদেশীয় বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরে। পেন্টাগন মনে করে, এ ধরনের ক্ষমতাসম্পন্ন অন্তত একাধিক মিসাইল রয়েছে পিয়ংইয়ংয়ের হাতে।

তবে এ বছরের জানুয়ারিতে দেশটির নেতা কিম জং আন ঘোষণা দেন, উত্তর কোরিয়া আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রে ‘সর্বশেষ ধাপে’ রয়েছে।

আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও উত্তর কোরিয়ার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, উত্তর কোরিয়া শনিবার একটি শক্তিশালী পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালাতে পারে। তাদের জাতির পিতা ‘কিম ইল-সুংয়ের’ জন্মদিনকে কেন্দ্র করে। তবে এমনটা হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও ছেড়ে দিয়ে কথা বলবেন না। বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে হোয়াইট হাউসও।

শনিবার পিয়ংইয়ং সামরিক কুচকাওয়াজে তাদের শক্তি প্রদর্শন করে। এ সময় নতুন আন্তঃমহাদেশীয় হার্ডওয়্যার, সাবমেরিন, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্র প্রদর্শন করা হয়। আকাশেও ছিল সেনাবাহিনীর বিমান মহড়া।

উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুংয়ের ১০৫তম জন্মদিন উপলক্ষে সামরিক শক্তি প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়। ইল সুং দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের দাদা।

প্রতি বছর উত্তর কোরিয়ায় ‘ডে অব দ্য সান’ হিসেবে পালিত হয় দিনটি। বেশ ক’দিন ধরেই আলোচনায় ছিল উত্তর কোরিয়া। আর এ আলোচনায় ঘি ঢেলেছে তাদের এ সামরিক শক্তির মহড়া এবং দেশটির সর্বোচ্চ নেতা ও উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হুমকিও।

বিশ্লেষকদের মতে, এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুধু সামরিক শক্তি প্রদর্শনই নয়, উত্তর কোরিয়া ওয়াশিংটন, সিউল, টোকিওকে কঠোর বার্তা পাঠাতে চায়।

এর আগে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে উত্তর কোরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান সং রয়েল বলেন, উত্তর কোরিয়া তাদের সামরিক শক্তি প্রদর্শনে প্রস্তুত। সামরিক আগ্রাসনের কোনো লক্ষণ দেখলে তা উৎক্ষেপণ করা হবে।

তিনি বলেন, নতুন পারমাণবিক পরীক্ষার জন্য আইন অমান্য করা হবে না। তবে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করে ওয়াশিংটন ভবিষ্যতের দিকে এগোতে পারে।

এর আগে এ সপ্তাহের প্রথম দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার টুইটার অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘উত্তর কোরিয়া উত্তেজনা বাড়াতে চাইছে।’

‘চীন যদি সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে তা হবে গ্রেট। যদি না হয় তাহলে তাদের ছাড়াই এ সমস্যার সমাধান করবে যুক্তরাষ্ট্র।’

এদিকে পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক ও আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম- এমন যুদ্ধাস্ত্র বহনকারী রকেট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথাও জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া।

শনিবারের সামরিক প্রদর্শনী ওয়াশিংটনের প্রতি একটি নতুন বার্তাই দিচ্ছে পিয়ংইয়ং।

উত্তর কোরিয়া এরই মধ্যে পাঁচটি পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে। ২০১৬ সালে দুটি পরীক্ষা চালানো হয়। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে দেশটি। এর মধ্যে তিনটি জাপানের কাছাকাছি জলসীমায় পড়েছে। উত্তর কোরিয়া শিগগিরই ষষ্ঠ পারমাণবিক পরীক্ষা চালাতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

তবে হোয়াইট হাউস বলেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে সেনাসহ রণতরী ‘ইউএসএস কার্ল ভিনসন’ রওনা হয়েছে।

এমএমএ/এমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।