ভারত সফরের প্রথম দিনে যা হলো


প্রকাশিত: ০১:৩০ পিএম, ০৮ এপ্রিল ২০১৭

চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরের প্রথম দিন (শনিবার) বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে অন্তত ২২টি চুক্তি ও চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ও রয়েছে এসব চুক্তিতে।

তবে দীর্ঘ প্রতিক্ষীত ও ২০ বছরের বেশি সময় ধরে আলোচিত তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে কোনো আশার আলো দেখাতে পারেনি নয়াদিল্লি। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই এই চুক্তি আলো দেখতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে দেশের ভেতরে প্রধানবিরোধী দল বিএনপি প্রতিবেশি এই দেশটির সঙ্গে সব চুক্তি প্রকাশের দাবি জানিয়েছিল। চুক্তি স্বাক্ষরের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সব চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করেছে।

শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া প্রতিরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের জন্য দিয়েছেন ৫০ কোটি মার্কিন ডলার।

মোদি বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অানন্দের। এই সম্পর্ক রক্ত এবং আত্মীয়তার। আমাদের জনগণের ভবিষ্যত নিরাপত্তা ও মঙ্গলের জন্য এই সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার মাধ্যমে দুই দেশ সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সম্মত হয়েছে। সন্ত্রাসবাদকে শুধু দুই দেশের জন্য নয় বরং এই অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছেন নরেন্দ্র মোদি।

ক্ষমতার সাত বছরের মধ্যে প্রথম বারের মতো ভারত সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার দেশ যে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে তা অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত করতে তার সরকার কাজ করবে বলে অঙ্গীকার করেছেন শেখ হাসিনা।

দুই দেশের সরকার সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করলেও বহুল প্রতীক্ষিত তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। দুই দেশের মাঝে ট্রেন ও বাস সার্ভিস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তিস্তা ইস্যুতে তার আগের অবস্থান থেকে সরে আসেননি।

তিস্তা পানি বণ্টন ইস্যুতে মোদি বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্কের জন্য এই চুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী শিগগিরই এই চুক্তিতে সমর্থন জানাবেন বলে প্রত্যাশা করেছেন মোদি।

ভারতের এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি খুবই খুশি যে, আজ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আমার সম্মানিত অতিথি। বাংলাদেশের বিষয়ে তার চিন্তা-ভাবনা আমার মতোই আন্তরিক। খুব শিগগিরই এই চুক্তির সমাধান হবে বলে বিশ্বাস করেন মোদি।

কলকাতা এবং বাংলাদেশের মধ্যে একটি নতুন বাস ও ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়েছে। নতুন সীমান্ত হাট চালুর জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এই খাতে ৫০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার ঘোষণা এসেছে মোদির কাছে থেকে। বেসামরিক পারমাণবিক বিদ্যৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে।

প্রতিরক্ষা খাতের চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশে সামরিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ করবে ভারত।

এর আগে শনিবার সকালে রাষ্ট্রপতি ভবন ‘রাইসিনা হিলে’ আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেয়া হয় শেখ হাসিনাকে। ভারতের তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে রাজঘাটে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।

পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত ভারতীয় সেনাসদস্যদের পরিবার ও স্বজনদের সম্মাননা জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নয়াদিল্লির মানেকশ সেন্টারের অয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা দেয়া হয়।

এসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারতকে নিয়ে আমার স্বপ্ন যেরকম একই ধরনের স্বপ্ন আছে বাংলাদেশকে নিয়ে।

এসআইএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।