প্রচারবিমুখ এক কিংবদন্তির গল্প
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপশ্চিমাঞ্চল আইওয়া অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা জ্যাসন অগলেসবি। পেশায় নির্মাণ শ্রমিক অগলেসবি নৌকাডুবির এক ঘটনায় জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে এক নারীকে উদ্ধার করে খেতাব পেয়েছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তির; জয় করেছিলেন আইওয়ার মানুষের মন।
তবে প্রচারবিমুখ থেকেছেন সব সময়। মঙ্গলবার শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন মার্কিন এই কিংবদন্তি। অগলেসবিকে হারিয়ে শোক পালন করছেন আইওয়ার বাসিন্দারা।
একটু ভিন্ন প্রকৃতির এই কিংবদন্তি মানুষের বিপদে কখনো নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারতেন না। ২০০৯ সালের ৩০ জুন। এই দিনে আইওয়ার দেস মোইনস নদীতে দম্পতিবাহী একটি ছোট্ট নৌকা ডুবে যায়। দেস মোইনসে নিয়ে আসা হয় উদ্ধার সামগ্রী।
পাশেই কাজ করছিলেন সুঠাম দেহের অধিকারী জ্যাসন। ডুবতে থাকা দম্পতিকে উদ্ধারে দ্রুতই ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। ক্রেনের মাথায় শেকলে নিজের কোমড় বাঁধেন জ্যাসন। শেকলে ঝুলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডুবন্ত দম্পতিকে উদ্ধারে নামেন তিনি। পাট্টি রালফ নিলি নামের ডুবন্ত নারীকে তীব্র স্রোত থেকে টেনে তুলে লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে তীরে নিয়ে আসেন তিনি।
নৌকাডুবির এ ঘটনায় দুঃসাহসিক উদ্ধার কাজের পর দ্রুতই বিশ্বজুড়ে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন জ্যাসন। নদীর তীর থেকে জ্যাসনের সেই উদ্ধার কাজের নাটকীয় ও দুঃসাহসিক মুহূর্তের ছবি ক্যামেরাবন্দী করেন রেজিস্টারের অালোকচিত্রী ম্যারি উইলি। ২০১০ সালে এই ছবির জন্য সাংবাদিকতার নোবেলখ্যাত ‘পুলিৎজার পুরস্কার’ লাভ করেন।
জ্যাসন নদীর তীব্র স্রোতে যে উদ্ধার কাজে এগিয়ে এসেছিলেন সেদিন; শেকল থেকে ফসকে গেলেই তাকেও বরণ করতে হতো সেই একই পরিণতি। রালফ নিলি বলেছিলেন, তিনি আমাকে ছোট ময়দার বস্তার মতো আঁকড়ে ধরে টেনে তুলেছিলেন।
৫৩ বছর বয়সী জ্যাসন মঙ্গলবার সকালের দিকে আইওয়া মেথডিস্ট মেডিক্যাল সেন্টারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গত ২৯ মার্চ ক্রিস্টনে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে স্থানীয় একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয় তাকে। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় দেস মোইনসের একটি হাসপাতালে হেলিকপ্টার করে নিয়ে যাওয়া হয়।
জ্যাসন কখনোই নিজেকে ‘হিরো’ ভাবতেন না। কেউ তাকে হিরো হিসেবে ডাকলেও অস্বস্তি প্রকাশ করতেন তিনি। জ্যাসনকে যতটা না স্থানীয়রা চিনতেন সেই সময়; তার চেয়ে দেশের বাইরের বেশি মানুষ তাকে চিনতেন। উদ্ধারকাজের ছবি ছড়িয়ে পড়ার কারণে তিনি বিশ্বজুড়ে দ্রুত পরিচিতি লাভ করেন।
রালফ নিলি সেই দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করে বলেন, জ্যাসন সেদিন দেবদূত হিসেবে এসেছিলেন। তবে তার স্বামী অ্যালানকে বাঁচানো যায়নি নৌডুবির সেই ঘটনায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম জ্যাসনের সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছিল; কিন্তু প্রচারবিমুখ এই কিংবদন্তির ভাষ্য ছিল, ‘আমি কোনো হিরো নই।’
আইওয়ার এক নারী বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছিল। হঠাৎ বিচ্ছেদে অন্ধকারে পড়েন তিনি। বাবার বাড়িতেও যেতে পারতেন না। পরিচয় হয় জ্যাসনের সঙ্গে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। আইওয়ায় তার বাড়ির পাশেই একটি বাসা ভাড়ায় নিয়ে দেন ওই নারীকে।
শুধু তাই নয়; দুটি বাচ্চাও দত্তক নিয়ে দেন তাকে। জ্যাসন নিজেও বেড়ে উঠেছিলেন দত্তক নেয়া বাবা-মা’র ঘরে। সবার বিপদে এগিয়ে যেতেন তিনি। মাদকাসক্ত অনেক তরুণকেও সুস্থ্য জীবনে ফিরিয়ে এনেছিলেন জ্যাসন। তার চলে যাওয়া মানতে পারছেন না আইওয়ার বাসিন্দারা। কিংবদন্তি এক হিরোকে হারিয়ে শোক পালন করছেন তারা।
সূত্র : ইউএসএ ট্যুডে।
এসআইএস/পিআর