ইদলিবে রাসায়নিক হামলা: তুঙ্গে রুশ-পশ্চিমা বিশ্ব বিরোধ


প্রকাশিত: ০২:৪৪ পিএম, ০৫ এপ্রিল ২০১৭

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের রাসায়নিক হামলা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে রাশিয়ার বিরোধ দেখা দিয়েছে। এক প্রতিবেদনে রাশিয়া হামলার জন্য সিরীয় বিদ্রোহীদের দায়ী করলেও তা ধোপে টিকেনি। পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো গ্যাস হামলার জন্য রুশ মিত্র সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ সরকারকেই দায়ী করেছে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সিরীয় বিদ্রোহীদের এক কমান্ডার ও অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ওই হামলা চালিয়েছে। তবে সিরীয় বাহিনী রাসায়নিক হামলার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

সিরীয় ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এক জরুরি বৈঠকে বসেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় ত্রাণ-সহায়তা নিয়ে আলোচনা ৭০টি দাতা দেশের আলোচনা ম্লান হয়েছে ব্রাসেলসে। জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ সমন্বয়ক স্টিফেন ও ব্রায়েন বলেছেন, বুধবার আরো পরের দিকে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।

syria

মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলছে, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের ইদলিব প্রদেশে সম্ভাব্য রাসায়নিক হামলায় ২০শিশুসহ অন্তত ৭২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরো ৪ শতাধিক।

ইদলিব খান শেইখোনের ওই গ্যাস হামলার পর ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শিশুসহ অনেক বেসামরিক নাগরিক পড়ে আছেন। এদের অনেকের মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতরা বিমান হামলার লক্ষ্য হয়েছিলেন। আহত অনেকের চিকিৎসা চলছে দেশটির সঙ্গে তুরস্ক সীমান্তের কাছে।

আহত এক নারী বলেন, আমরা গ্যাসে আক্রান্ত হয়েছিলাম। আমরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি। মাথা ঝিমঝিম করছিল এবং অসুস্থ হয়ে পড়ি। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়েছিল। আমি নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না।

syria

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, হতাহতদের অনেকের শরীরে বিষাক্ত নার্ভ অ্যাজেন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

কী বলছে রাশিয়া?
সিরিয়া প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ নেতৃত্বাধীন সরকারের অন্যতম মিত্র রাশিয়া বলছে, খান শেইখোনে সিরীয় বিমান থেকে হামলা হয়েছে। ইরাকের সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত রাসায়নিক গুদামে চালানো বিমান হামলা থেকে তা ছড়িয়ে পড়েছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এলগর কনোশেনকভ বলেন, ‘মঙ্গলবার সিরিয়ার স্থানীয় সময় সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ইদলিবের খান শেইখোনের উপকণ্ঠে সন্ত্রাসীদের বৃহৎ একটি রাসায়নিক গুদামে সিরীয় বিমান থেকে হামলা হয়েছে।’ 

পশ্চিমা বিশ্ব যা বলছে
ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, হামলার সব তথ্য-উপাত্ত আসাদ সরকারের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ ঘটনায় শিগগিরই একটি আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল বর্বর রাসায়নিক হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, যা ঘটনা তা  পরিষ্কার করার জন্য যত শীঘ্র সম্ভব রাশিয়ার সব কিছু করা উচিত।

syria

সিরীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী ফ্রি ইদলিব আর্মির কমান্ডার হাসান হজ আলী বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, গ্যাসসহ বোমা হামলায় ব্যবহৃত বিমানটি প্রত্যেকেই দেখেছেন।

স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, শহরটিতে সেনাবাহিনীর অবস্থান নেই; তবে ওই এলাকা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। এদিকে গ্যাস হামলা নিয়ে রাশিয়ার প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা সমালোচনার মুখে পড়েছে।

রাসায়নিক হামলার জন্য আসাদ সরকারকে দায়ী করছে যুক্তরাষ্ট্র
রাসায়নিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ কর্ণেল হ্যামিশ ডে ব্রেটন গর্ডন বিবিসিকে বলেছেন, রাসায়নিক হামলা নিয়ে রাশিয়ার দাবি অত্যন্ত কাল্পনিক। হামলায় নার্ভ গ্যাস যেমন সারিন ছড়িয়ে পড়ে থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আসাদ সরকারের এই ঘৃণ্য কাজের নিন্দা জানিয়েছেন।

এসআইএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।