সু চির অগ্নিপরীক্ষা
এক বছর আগে সু চি নেতৃত্বাধীন সরকার মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসার পর দেশটিতে এই প্রথম বড় ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারের ক্রমবর্ধমান লড়াইয়ের মাঝে শনিবার দেশটির পার্লামেন্টের ১৯টি আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এ নির্বাচনকে সু চির জন্য অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সু চির নেতৃত্বের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিরও ইঙ্গিত মিলবে।
দেশটির জাতীয় এবং আঞ্চলিক পার্লামেন্টের ১৯টি আসনে এমন এক সময় এ উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে; যখন আকাশচুম্বী প্রত্যাশার সঙ্গে খাপ খাওয়ার লড়াই করছেন সু চি; যা তার রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে (এনএলডি) ক্ষমতায় নিয়ে যায়।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে সংস্কার এবং উন্নয়নের শ্লথগতি নিয়ে জনগণের হতাশার কথা স্বীকার করেন সু চি। এ সময় তিনি মিয়ানমারের জাতিগত দ্বন্দ্ব; যা দেশটিকে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে গেছে, তা অবসানে তার শীর্ষ অগ্রাধিকারের পুনরাবৃত্তি করেন।
এ নির্বাচনের ফল পার্লামেন্টে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ সু চির এনএলডির ক্ষমতার ভারসাম্যে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে প্রশাসনের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের একটি সুযোগ। মিয়ানমারে মতামত ভোটের কোনো সুযোগ নেই।
এনএলডির শীর্ষস্থানীয় নেতা উইন হতেইন বলেন, শান রাজ্যের জেলাগুলোতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তার দল। সম্প্রতি এ রাজ্যের কিছু এলাকায় লড়াই তীব্র আকার ধারণ করেছে।
এনএলডির এই নেতা বলেন, ‘আমরা শান রাজ্যের পরিস্থিতি উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করছি। স্থানীয় জনগণ বার্মিজ ভাষা বুঝতে পারেন না। এজন্য আমাদের নীতিমালা শান ভাষায় অনুবাদ করতে হয়েছে।’
সু চির শান্তি প্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যানকারী শান রাজ্যসহ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের প্রধান বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সেনাবাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে আসছে। সু চি দায়িত্ব নেয়ার পর বেশ কিছু দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের এক পরিসংখ্যান বলছে, এতে অন্তত ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
দেশটির সোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১০ লাখ মানুষ শনিবারের উপ-নির্বাচনে দিতে পারবেন।
গত বছরের অক্টোবরে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে সহিংস হামলার পর অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। মিয়ানমার সেনাবাহিনী এই অভিযানে ৭০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় শান্তি নোবেল বিজয়ী সু চি আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। রাখাইনে ত্রাণ কর্মীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও বেসামরিক নাগরিক হত্যার অভিযোগও উঠেছে।
মন্ত্রী পদে যোগদানের পর শূন্য অাসনে এ উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়া সহিংসতার কারণে গত নির্বাচনে সংখ্যালঘু কিছু এলাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি; এবার এসব এলাকার কয়েকটি আসনে এ উপ-নির্বাচন হচ্ছে। শনিবার সন্ধ্যার দিকে নির্বাচনী ফল আসতে পারে বলে দেশটির নির্বাচন কমিশন প্রত্যাশা করেছে।
সূত্র : রয়টার্স, সিনহুয়া।
এসআইএস/জেআইএম