পোশাক খাতের সুশাসনে প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি


প্রকাশিত: ০৮:২৪ এএম, ২১ এপ্রিল ২০১৫

রানাপ্লাজা ট্রাজেডি-উত্তর পোশাক খাতের সুশাসন নিশ্চিতকরণে সরকার ও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের বহুমুখী উদ্যোগসমূহ বাস্তবায়নে গত এক বছরে ৬০ শতাংশ অগ্রগতি হলেও শ্রমিক অধিকার, চাকরিকালীন নিরাপত্তা ও বিবিধ সুবিধা প্রদানে বিভিন্ন কারণে অনেক প্রকল্পে প্রত্যাশিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) মঙ্গলবার এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

‘তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন বাস্তবায়নে গৃহীত পদক্ষেপ : গত এক বছরের অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীষর্ক এ গবেষণা প্রতিবেদনটি আজ সকালে ধানমণ্ডিস্থ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন নাজমুল হুদা মিনা, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার- রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।

২০১৪-১৫ সালের নতুন একটিসহ ৫৫টি সূচকে চলমান ৮০টি উদ্যোগের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে টিআইবি বলেছে, গৃহীত উদ্যোগের মধ্যে ১২টির বাস্তবায়ন সম্পন্ন এবং ৪৮টির বাস্তবায়ন চলমান থাকলেও এর মধ্যে ১২টি উদ্যোগের বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং অন্য ২০টি উদ্যোগের বাস্তবায়ন স্থবির হয়ে পড়ায় পোশাক খাতে অর্জিত সুশাসনের অগ্রগতি ধরে রাখা এখন বিবিধ চ্যালেঞ্জের জন্ম দিয়েছে।

২০১৩ সালে পরিচালিত টিআইবির ‘তৈরি পোশাক খাত: সুশাসনের সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের দ্বিতীয় ফলোআপ হিসেবে বর্তমান গবেষণাটি ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তৈরি পোশাক খাতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত ৬৩টি বিষয়ের মধ্যে ৫৫টি বিষয়ে উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। কারখানার নিরাপত্তা ও শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতকরণে এবং সুশাসনের অন্তরায় দূরীকরণে সরকারের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপসমূহ হচ্ছে : ইপিজেড আইন, ২০১৩ সংশোধনীর উদ্যোগ, শ্রম ট্রাইবুনালে শ্রমিকদের সুবিধার জন্য আইনজীবী প্যানেল নিয়োগ এবং শ্রমবিধিমালা চূড়ান্তকরণের ও সাবকন্ট্রাক্ট ফ্যাক্টরির গাইডলাইন প্রস্তুতে উদ্যোগ গ্রহণ।

অন্যান্য অংশীজন কর্তৃক গৃহীত উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপসমূহ হচ্ছে : কারখানা মালিক কর্তৃক মজুরি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত হারে প্রায় ৯৫ শতাংশ কারখানায় মজুরি প্রদান এবং অধিকাংশ কমপ্লায়েন্স কারখানায় শ্রমিকদের পরিচয়পত্র প্রদান।

বিজিএমইএ কর্তৃক শ্রমিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সুইডিশ ব্র্যান্ড এইচ অ্যান্ড এম এর সহযোগীতায় “সেন্টার ফর এক্সিলেন্স” স্থাপন এবং নিয়মিত অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে কোর্স পরিচালনা করছে। অপরদিকে ইউরোপিয়ান বায়ারদের জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ (অ্যাকর্ড) ও আমেরিকান বায়ারদের জোট অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়াকার্স সেফটি (অ্যালায়েন্স) কর্তৃক কারখানার অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও কাঠামোগত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রতিশ্রুত জরিপ কার্যের অধিকাংশ সম্পন্ন করেছে।

এছাড়া রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের সহায়তার উদ্দেশ্যে গঠিত রানা প্লাজা ডোনার্স ট্রাস্ট ফান্ডে এ পর্যন্ত ১৯ মিলিয়ন ডলার সংগৃহীত হয়েছে এবং এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল হতে ২.৪৮ মিলিয়ন সংযুক্ত করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা যায়, শ্রম আইন সংশোধিত হলেও গত এক বছরে শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারা (২৩, ২৭, ১৮৯, ২(৬৫) সমূহের মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত ও শ্রমিকের সংগঠন করার অধিকার দমনে অপব্যবহার করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৩ প্রণয়নের উদ্যোগ গৃহীত হলেও এখন পর্যন্ত তার কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি এবং শ্রম আইনের বিধিমালা প্রস্তুতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে কারখানাসমূহে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কমিটি গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না।

একইভাবে রানাপ্লাজা দুর্ঘটনা পরবর্তী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা সমূহের তদন্ত প্রতিবেদন এখনো জমা দেয়া হয়নি। এছাড়া শ্রম আদালতে মামলা পরিচালনায় দীর্ঘসূত্রতা এবং বিভিন্ন তদারকি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে শিথিলতা লক্ষণীয়। সেইসঙ্গে কলকারখানা পরিদর্শন অধিদফতর কর্তৃক অনলাইনে আবেদন গ্রহণ ও নিরাপত্তার অভিযোগ।

এসএ/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।