শিক্ষা বঞ্চিত বেদে সম্প্রদায়ের শিশুরা
`জল আর ডাঙাই যাদের নিত্যসঙ্গী` ওদের জন্ম, বিয়ে এবং সকলের শেষ ঠিকানা যেখানে ওদেরও শেষ ঠিকানা সেখানে। নিতান্ত দুর্ঘটনা ছাড়া অন্য সকলের চেয়ে ওদের পার্থক্য হল মৃত্যুর পর তাদের নিজ নিজ প্রথা অনুযায়ী বিভিন্নভাবে সমাহিত করা হয়। কিন্তু বেদে পরিবারগুলোর জন্ম হয় জীবন চলার পথে কখনও জলে আবার কখনও ডাঙায়, ওদের প্রথা অনুযায়ী বিয়েও হয় তাও জলে-ডাঙায় আর মৃত্যুর পর ভাসিয়ে দেয়া জলে। তারা হল বেদে সম্প্রদায়।
এই বেদে সম্প্রদায়ের মাঝেও আবার একটি শ্রেণি হত দরিদ্র। জনশ্রুতি রয়েছে, দেশে যখনই কোন নির্বাচনী প্রক্রিয়া আসে তখন প্রায়শই একদল অতিথির মত নিজের পক্ষে লোক ভেড়াতে তাদের কৌশল হিসেবে ব্যাবহার করা হয় তাদের।
বেশ কয়েকদিন উপকূলীয় দক্ষিণাঞ্চল ঘুরে কথা হয় বেদে সম্প্রদায়ের কিছু মানুষের সঙ্গে। কেউ কেউ আফসোস করে বলেন সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই! কথাগুলো যেন অনেকাংশে বলার জন্য বলা।
পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলায় শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি সেতুর নিচে একদল শিশু কিশোরদের উপস্থিতি দেখা গেল। কথা হয় সবুর (১১) নামের এক শিশুর সঙ্গে। সবুর জানান, আমাদের তো আর স্কুল নেই! কি করব, নৌকায় ভেসে বেড়াই। পরিবারের আয় রোজগার নেই। তাস খেলা বুঝিনা তাই ছবি মিলিয়ে ক`জনে সময় পার করছি।
ওই এলাকায় ২৭টি নৌকার বহর দেখা গেছে। কয়েকজন বেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমরাতো আর স্থায়ী না। বছরের শুরু থেকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়াই। তাই ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারি না। আমাদের সরদার আছেন। সে চেষ্টা করে যাচ্ছে একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য। আমাদের দাবি সরকার যদি আমাদের স্থায়ী আবাসনের ব্যাবস্থা করে তাহলে ছেলে-মেয়েদের পড়া লেখা করাতে পারতাম।
তারা আরো বলেন, আমাদের যদি ভোট থাকত তাহলে হয়তো রাজনৈতিক নেতারা আমাদের বিষয়টি ভাবতেন।
বরিশাল বিভাগীয় বেদে সরদার আব্দুর রহিম জাগো নিউজকে বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের সঙ্গে দেখা করে আমরা একটি স্থায়ী বসবাসযোগ্য স্থান ও ভোটের নিশ্চয়তার দাবি জানিয়েছিলাম। তিনি আমাদের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। তারপর পট পরিবর্তন হওয়ায় তা আর হয়ে ওঠেনি।
তিনি আরো বলেন, ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমানের কাছেও গিয়েছিলাম সেখান থেকেও আশ্বাস ছাড়া অন্য কিছুই মেলেনি। বর্তমানে কালকিনি, মুলাদী, বাবুগঞ্জ, নলছিটি, ঝালকাঠীসহ দেশের ২২টি স্থানে মোট ৭৩ হাজার ৭শত ৯ জন বেদে রয়েছেন। বর্তমানে এই পেশায় ধ্বস নেমেছে। তাই অনেকে মাছ শিকার, রাজ মিস্ত্রিসহ নানা কাজে জড়িয়ে গেলেও বার বার স্থানান্তরিত হওয়ায় ছেলে মেয়েদের পড়া লেখা করানোর সুযোগ নেই।
আব্দুর রহিম জানান, আমরা বিষয়টি নিয়ে ধর্না দিতে দিতে এখন ক্লান্ত। বঙ্গবন্ধুর আশ্বাসের ফলে কাজটির প্রক্রিয়া শুরু হলেও অন্য দল ক্ষমতায় এসে আগের সরকারের সব কাজ পরিবর্তন করে ফেলে। তাই বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের জোর দাবি যত দ্রুত সম্ভব আমাদের জন্য একটি স্থায়ী আবাসন নির্মাণ যেন তিনি করে দেন। অন্তত মৃত্যুর আগেও যদি দেখে যেতে পারতাম আমাদের ছেলে মেয়েরাও অন্য ছেলে মেয়েদের মত স্কুলে যেতে পারছে।
এমজেড/পিআর