ছোট ইলিশের পেটে ডিম, বিপদের শঙ্কা বিজ্ঞানীদের
আর সবকিছু একই, কেবল আকারে ছোট ইলিশগুলো। কিন্তু ছোট আকৃতির ইলিশগুলোই মা হতে চলেছে। তবে তুমুল চাহিদা থাকায় পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বিভিন্ন হাট-বাজারে এখন কম দামের ছোট মা-ইলিশের চাহিদা ব্যাপক।
গত দুই সপ্তাহ ধরে কলকাতার কাঁথি ও এগরার বাজারে মিলছে এসব ছোট ছোট ইলিশ। সব ইলিশের পেটে ডিম। তবে এসব মাছের বেশিরভাগেরই ওজন ১০০ গ্রামের মতো। পেটভর্তি ডিমওয়ালা এ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে তিনশ টাকা কেজি দরে।
এদিকে কম দামে ডিমওয়ালা ইলিশ পেয়ে ক্রেতারা খুশি হলেও প্রমাদ গুণছেন ইলিশ-বিজ্ঞানীরা। সার্বিক পরিস্থিতি বিচারে তারা আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, দূষণ ও ছোট অবস্থায় ধরা পড়ার অতিরিক্ত প্রবণতাই ইলিশ প্রজাতিকে বিপন্ন করে তুলেছে। তাই প্রকৃতিগতভাবেই অন্য নিয়মে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে ইলিশ। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই পেটে ডিম আসছে ইলিশের।
একই মত কলকাতার মৎস্যজীবীদের। তারা জানান, গত কয়েক বছর ধরেই উপকূলে ডিমভরা ছোট ইলিশ ধরা পড়ছে। তবে এবার বেশি পরিমাণে ধরা পড়ছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুগত হাজরা জানান, ইলিশের প্রজননের সময় বছরে তিন বার। ফেব্রুয়ারি-মার্চ, জুন-জুলাই ও অক্টোবর-নভেম্বর। সাধারণত জুন থেকে নভেম্বর সময়ে বড় ইলিশ নদীর পাড়ের দিকে ডিম পাড়তে আসে। তবে ছোট ইলিশ ডিম পাড়তে আসছে শীত শেষে ফেব্রুয়ারি-মার্চের দিকে অল্প পানিতে। প্রজাতি বিপন্ন হয়ে পড়ায় অভিযোজনের কারণেই এমন হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
ভারতের কেন্দ্রীয় মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের বিভাগীয় প্রধান বিজয়কালী মহাপাত্র বলেন, এত দিন যে বয়সে ইলিশ ডিম ধারণ করত, এখন তার চেয়ে কম বয়সে করছে। তাই ১০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের পেটে থাকছে ডিম। ফলে প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়ছে ইলিশ।
অন্যদিকে দেশটিতে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সমুদ্রে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু ছোট ইলিশও পাড়ের কাছাকাছি আসায় সহজেই ধরা পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে ইলিশ সংকট দেখা দেবে বলে মনে করেন মৎস্যজীবীরা।
দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সহ-সভাপতি দেবাশিস শ্যামল নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। তবে পূর্ব মেদিনীপুরের সহ-মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) রামকৃষ্ণ সর্দার বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা বাড়ালে রাজ্যের মৎস্যজীবীরা বঞ্চিত হবেন।
এসআর/পিআর