যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা সম্পর্কে নতুন অধ্যায়
নানা ইস্যুতে ভিন্নমত থাকলেও সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে একমত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো। ভিন্নমত প্রকাশেও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও শিষ্টাচার বজায় রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।
অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে সাপে-নেউলে সম্পর্ক থাকা দুটি দেশের শীর্ষ নেতাদের এ ঐকমত্য হয় শনিবার রাতে পানামা সিটিতে। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টার এক ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হন সম্পূর্ণ বিপরীত আদর্শের দুই রাষ্ট্রপ্রধান। একই দিনে প্রথমবারের মতো ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গেও বৈঠক করেন ওবামা। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি অনলাইনের।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কিউবার আনুষ্ঠানিক সম্পর্কচ্ছেদ হয় ১৯৬১ সালে। তার ৫ বছর আগে ১৯৫৬ সালে দুই দেশের প্রেসিডেন্টরা সর্বশেষ বৈঠক করেছিলেন। ওই বৈঠকের তিন বছর পরই কিংবদন্তির বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রো তার গেরিলা বাহিনী নিয়ে মার্কিন মদদপুষ্ট বাতিস্তা সরকারকে উৎখাত করে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। এতে ক্ষুব্ধ ওয়াশিংটন হাভানার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদ করে। শুরু হয় অন্তহীন এক বৈরিতার।
যে বছর এ বৈরিতার আনুষ্ঠানিক শুরু, সে বছরই জন্ম হয় বারাক ওবামার। ৫৪ বছর পর সেই ওবামাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বৈঠক করলেন কিউবা বিপ্লবের অন্যতম নায়ক রাউল কাস্ত্রোর সঙ্গে। বৈঠকে একে অন্যের অকুণ্ঠ প্রশংসাও করেন দুই নেতা। ওবামাকে সৎ মানুষ বলে বর্ণনা করেন ৮৩ বছর বয়সী রাউল কাস্ত্রো। আর খোলামন ও সৌজন্যবোধের জন্য রাউলকে ধন্যবাদ দেন ওবামা।
পানামায় আমেরিকান দেশগুলোর সম্মেলনের প্রথম দিন শুক্রবার তারা করমর্দন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেছিলেন। দ্বিতীয় দিন করলেন আনুষ্ঠানিক বৈঠক। সম্মেলন কেন্দ্রের ছোট একটি কক্ষে বৈঠকে বসেন ওবামা-রাউল। সেখানে কোনো আড়ম্বর ছিল না। ছিল না দু`দেশের পতাকাও। একেবারেই ঘরোয়া পরিবেশে হাসিমুখে কথা বলেন তারা।
পরে ওবামা বৈঠককে `অকপট ও ফলপ্রসূ` আখ্যা দিয়ে বলেন, `বিভিন্ন ইস্যুতে ভিন্নমত অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ এগিয়ে নিতে পারে।` তিনি বলেন, `আমরা এ বিষয়ে একমত হয়েছি যে, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও শিষ্টাচারের চেতনা ধারণ করেই আমরা ভিন্নমত পোষণ করতে পারি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পক্ষে ইতিহাসের পাতা উল্টে দু`দেশের মধ্যে নতুন সম্পর্কের সূচনা করা সম্ভব।`
কিউবান প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো বলেন, `প্রয়োজনে ভিন্নমত প্রকাশ করতেও আমরা একমত হয়েছি। আমরা সব বিষয়ে ধৈর্যের সঙ্গে কথা বলতে সম্মত হয়েছি। কিছু বিষয়ে হয়তো আমরা একমত হব, কিছু বিষয়ে হয়তো হব না।` ওয়াশিংটন-হাভানা বৈরিতার জন্য ওবামা দায়ী নন উল্লেখ করে রাউল বলেন, `যে ঘটনা তার (ওবামা) সময়ের আগে ঘটেছে, সে জন্য তিনি দায়ী নন।` ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাসহ আমেরিকান দেশগুলো ওবামা-রাউল বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছে।
এআরএস/এমএস