প্লিজ আমাকে একটু বোঝো


প্রকাশিত: ০৫:৩৬ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

দু’চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। বুকের মধ্যে কষ্ট, হাহাকার। সেই সঙ্গে বাবা-মায়ের কাছে তীব্র আকুতি, ‘প্লিজ... আমাকে একটু বোঝো। তোমাদের প্রত্যাশার দমবন্ধ চাপ বইতে বইতে আমি ক্লান্ত।’

মার্কিন সংস্থা পেপসির কোমল পানীয় মিরিন্ডার তিন মিনিটের একটি বিজ্ঞাপন সামাজিক মাধ্যমে ঝড় তুলেছে। পরীক্ষা নিয়ে রাতজাগা, উদ্বেগ, ভাল নম্বর পাওয়ার টেনশন আর বাবা-মায়ের প্রত্যাশা মেটানোর প্রাণান্তকর চাপ আর যন্ত্রণা সেখানে উঠে এসেছে একদল কিশোর-কিশোরীর হাতে লেখা চিঠির বয়ানে। এসব কথা মুখে বলতে না পেরে বাবা-মাকে তারা চিঠিতেই লিখেছে।

বাড়ির বড়দের বিশেষ করে বাবা-মাকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এই বিজ্ঞাপন। সন্তানের আকুতির সেই চিঠি পড়তে গিয়ে বাবা-মায়েরও বুক ভেঙে কান্না এসেছে। অপরাধবোধে কুঁকড়ে গেছেন তারা। স্বপ্নের রঙিন দুনিয়া কিংবা কোমল পানীয়ের সঙ্গে সহজে খাপ খাওয়া ফূর্তি আর হই হুল্লোর নয় বরং সমাজে ক্যানসারের মতো দ্রুত বাড়তে থাকা সমস্যাকেই বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তু করেছে মিরিন্ডা।

ইউটিউবে প্রকাশিত এই বিজ্ঞাপন আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে মূলত দু’টি কারণে। এক, আজকের প্রজন্মের চাপা দুঃখ, কষ্ট, রাগ, উদ্বেগ, যন্ত্রণা, অসহায়ত্ব সব কিছুই সেখানে নিখুঁত ভাবে উঠে এসেছে। অপরদিকে, সমাজের কোনো একটি জ্বলন্ত সমস্যার উপর আলো ফেলে বিজ্ঞাপন তৈরির রেওয়াজ কর্পোরেট সংস্থাগুলির মধ্যে কিভাবে বাড়ছে, তা স্পষ্ট হয়েছে এখানে।

এই সমস্যা সম্পর্কে মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম বলেন, ‘সন্তানের জন্য চিন্তা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, তার কুপ্রভাব বাচ্চাদের উপরে পড়বেই।’

একাধিক সমীক্ষাও বলছে, এই চাপের জেরে জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে শিশুরা। বাড়ছে অবসাদ, আত্মহত্যার প্রবণতাও। ডিপিএস-নিউটাউনের প্রধান শিক্ষিকা সোনালি সেন বলছেন, ‘একটু চাপ থাকলে হয়তো নিজের সবটুকু উজাড় করার তাগিদ বাড়ে। কিন্তু চাপ মানে একতরফা প্রত্যাশা নয়। ছোটদের সঙ্গে অনবরত আলোচনা করা, তাদের সময় দেওয়া জরুরি। তাদের মন বোঝাও দরকার।’

এই বিজ্ঞাপনটি যেন শিশুদের সবার মনের কথা হয়ে উঠেছে। সাড়া ফেলে দেওয়া এই বিজ্ঞাপনে মিরিন্ডার নাম এসেছে একেবারে শেষে কয়েক সেকেন্ডের জন্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক সমস্যা তুলে ধরার বুনোট নিখুঁত হলে, সম্ভাব্য ক্রেতার মাথায় নিজেদের নাম গেঁথে দিতে ওইটুকু সময়ই যথেষ্ট। আর সেটা মিরিন্ডা খুব ভালোভাবেই করতে পেরেছে।



টিটিএন/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।