ব্রিটেনের নির্বাচন : জরিপে এগিয়ে টিউলিপ
রোববার ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘দি ইনডিপেনডেন্ট` টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে দীর্ঘ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনের শিরোনাম হলো ‘টিউলিপ সিদ্দিক : ফাইটিং ফর ব্রিটেনস মোস্ট মার্জিনাল সিট ইন দ্য শ্যাডো অব ট্র্যাজেডি’। এতে বলা হয়, ৩২ বছর বয়সী টিউলিপ আত্মবিশ্বাস নিয়েই প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনে পার্লামেন্ট নির্বাচনে হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে লেবার দলের হয়ে লড়ছেন ।
প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়, প্রচার চালানোর পাশাপাশি নিরাপত্তা প্রশ্নে পরিবারকেও আশ্বস্ত করতে হয় টিউলিপকে। ১৯৭৫ সালে তার নানা বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যা করে সেনারা। টিউলিপের মা শেখ রেহানা ও খালা শেখ হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) সে সময় ছিলেন জার্মানিতে। তারা দুই বোন জীবন সাজান ভিন্নভাবে। বড় বোন শেখ হাসিনা দেশে ফিরে বাবার মতো রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তিনি এখন ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী; বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীদের একজন। ছোট বোন শেখ রেহানা উত্তর লন্ডনে শান্তিপূর্ণ জীবন বেছে নেন। তারই কন্যা টিউলিপ হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে নির্বাচনে লড়ছেন।
তিন ভাইবোনের মধ্যে টিউলিপ দ্বিতীয়। তিনি বলেন, ‘আমার মা আমাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন। আমি কোথায় আছি, কী করছি তা জানতে চান সব সময়। আমার মনে হয়, আমি রাজনীতিতে যোগ দেওয়ায় তিনি সন্তুষ্ট নন। রাজনীতির কারণেই আজ তার জীবনটা অন্য রকম। ব্রিটেনের রাজনীতিটা বাংলাদেশের মতো নয়, তাকে এটি বোঝাতে অনেক সময় লেগেছে।’
২০১০ সালে এ আসনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জিতেছিলেন লেবার প্রার্থী গ্লেনডা জ্যাকসন। অস্কার বিজয়ী সাবেক অভিনেতা জ্যাকসন ১৭ হাজার ৩৩২ ভোট পেয়েছিলেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থীর চেয়ে মাত্র ৪২ ভোট বেশি পেয়েছিলেন তিনি। এটি ছিল সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়। এ আসনে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী লিবারেল ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বিজয়ী জ্যাকসনের চেয়ে ৮৪১ ভোট কম পেয়েছিলেন। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, আগামী ৭ মের নির্বাচনে টিউলিপ সিদ্দিক অল্প ব্যবধানে জয়ী হবেন। তবে টিউলিপ মনে করেন, জয় নিশ্চিত করতে তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে।
জনগণকে বোঝাতে হবে, বিজয়ী হলে বাড়ির ট্যাক্স, বাড়িভাড়া, ব্যাংক ঋণের বিষয়গুলোতে কল্যাণকর নতুন কিছু করবে লেবার পার্টি। তিনি বলেন, অনেকেই ভাবছেন, এবার লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির ভোট স্বাভাবিকভাবেই লেবার দলের বাক্সে যাবে। তবে তিনি মনে করেন, হিসাবটা এত সহজ নাও হতে পারে। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেক ভোটার হয়তো ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতেই থাকতে চাইবেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হাস্যোজ্জ্বল টিউলিপ আত্মবিশ্বাস নিয়েই ভোট চাইছেন। নির্বাচনী এলাকা সম্পর্কেও তার ভালো ধারণা আছে। টিউলিপ তার স্বামী খ্রিস্টিয়ান পারসির সঙ্গে বর্তমানে বাস করছেন ওয়েস্ট হ্যাম্পস্টিডে। পরিবার এবং রাজনৈতিক ঐতিহ্য প্রসঙ্গে টিউলিপ বলেন, ‘আমি যখন এ-লেভেলে পড়ি, তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন পুরো পরিবারকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে স্মৃতিতে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছে দক্ষিণ আফ্রিকার নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার বাংলাদেশ সফর। আমার বয়স যখন ১২ বছর, তখন ম্যান্ডেলা বাংলাদেশ সফর করেন। তার সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নিয়েছি। বিষয়টি ছিল খুবই উৎসাহব্যঞ্জক।’
২০১০ সালে টিউলিপ ক্যামডন কাউন্সিলে নির্বাচিত হন প্রথম বাঙালি প্রতিনিধি হিসেবে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি যোগ দিয়েছিলেন লেবার পার্টিতে। এবার পার্লামেন্ট নির্বাচনে দলের নেতা হওয়ার লড়াইয়ে এড মিলিব্যান্ডের পক্ষে প্রচার চালান।
তবে নির্বাচনী প্রচারে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নেরও মুখোমুখি হতে হয় তাকে। সম্প্রতি একটি ছবি নিয়ে তার বিপক্ষে প্রচার চালানো হয়েছে। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে মস্কোতে তোলা ওই ছবিতে টিউলিপ আছেন তার খালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে। সে সময় বহু কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি করা হয়। এ প্রসঙ্গে টিউলিপ বলেন, তিনি সরকারি প্রতিনিধি দলে ছিলেন না। পারিবারিক সফরে সেখানে গিয়েছিলেন। এই ছবি নিয়ে কেন সমালোচনা হচ্ছে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। টিউলিপ সিদ্দিক জোর দিয়ে বলেন, রাজনীতিতে পরিবারের ছায়ার বাইরে এসে কিছু করে দেখাতে চান।
এসএস/এআরএস/পিআর