আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করলে কী ঘটবে যুক্তরাষ্ট্রে?


প্রকাশিত: ০৪:০৫ পিএম, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ক্ষমতায় আরোহনের পর থেকেই মার্কিন বিচার বিভাগের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক কার্যত বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে। প্রেসিডেন্টের একাধিক নির্বাহী আদেশ ও আদালতের স্থগিতাদেশে দেশটিতে সাংবিধানিক সংকট জটিল আকার ধারণ করেছে। সাত মুসলিম দেশের শরণার্থী ও পর্যটকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও পরে দেশটির বিচারবিভাগ তা স্থগিত করায় এ সংকট আরো দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।

সরকারি কোনো পদের কিংবা কাজের অভিজ্ঞতা নেই এই মার্কিন প্রেসিডেন্টের। মার্কিন ধনকুবের থেকে প্রেসিডেন্ট বনে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে কী ঘটবে? দেশটির প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে সেই তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।

সাত মুসলিম দেশের শরণার্থী ও পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পর দেশটির একটি আদালত তা স্থগিতের নির্দেশ দেয়। এর পরপরই হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে আদালতের আদেশকে ‘ভয়াবহ’ উল্লেখ করে। যদিও পরে ‘ভয়াবহ’ শব্দটিকে মুছে ফেলে নতুন করে বিবৃতি দেয়া হয়।

এরপরে ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক টুইট আসে। এসব টুইটে বিচারকের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। আদালতের কাছে এক আপিলে ট্রাম্প প্রশাসন প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশে নিম্ন আদালতের বিচারকের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করে।

প্রশাসন আদালতের আদেশ পালন শুরু করেছে। কিন্তু ট্রাম্পের ভীতিকর সব টুইট এবং বিচারকের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সংশয় দেখা দিয়েছে যে যদি তিনি বিচারকের আদেশের তোয়াক্কা না করেন কিংবা বিচারককে স্বীকৃতি না দেন তাহলে কি সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে না?

দেশটির বিশেষজ্ঞরাই বা কী ভাবছেন? অনেকেই বলছেন, আদালতের এই নির্দেশনাকে মেনে নিতে পারেন ট্রাম্প। তবে বিপক্ষ মতও রয়েছে অনেকের। জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড্যানিয়েল পি ফ্রাঙ্কলিন বলেন, তারা একটি বিনাশকারী লড়াইয়ের আশঙ্কা করছেন; যে লড়াই পপুলিস্টপন্থীরা করেন।

তিনি বলেন, আমি মনে করি; এই লড়াই এখন দৃশ্যমান হচ্ছে; এই ইস্যুতে না হলেও অন্য কোনো ইস্যুতে তা হতে পারে।

ড্যানিয়েল পি ফ্রাঙ্কলিন বলেন, আদালতের বিশেষ এই আদেশ কিংবা অন্য কোনো আদেশ উপেক্ষার ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত দেয়নি ট্রাম্প প্রশাসন। তারা আপিল করেছে এবং রোববার সকালে নাইন সার্কিট ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের নির্দেশ স্থগিত করেছেন। তবে কখন একজন প্রেসিডেন্ট আদালতের আদেশ উপেক্ষা করতে পারেন সেবিষয়ে তিনি অব্গত নন বলে ফ্রাঙ্কলিন মন্তব্য করেছেন।

কিন্তু সরকারের বিভিন্ন শাখার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও সাংবিধানিক সংকট তৈরি করতে পারে এমন কিছু বিষয়ে প্রেসিডেন্ট অনেক সময় আদালতের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের সঙ্গে ট্রাম্পকে অনেকেই তুলনা করছেন। মার্কিন ওই প্রেসিডেন্ট আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে নজির সৃষ্টি করেছিলেন;

মার্কিন সপ্তম প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সময় দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ও বিচারপতি জন মার্শাল ন্যাটিভ আমেরিকানদের একটি জমি বাজেয়াপ্তের রায় দিয়েছিলেন। সেই সময় বিচারকের এই আদেশ উপেক্ষা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জ্যাকসন। মার্কিন এই প্রেসিডেন্টকে এখনো স্মরণ করা হয় ওই সময় তার এক উক্তির কারণে। প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন,  জন মার্শাল তার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এখন তাকে বাস্তবায়ন করতে দিন। যদিও তার এই উক্তির যথার্থতা নিয়ে এখনো বিতর্ক আছে।

যুক্তরাষ্ট্রে আদালতের আদেশ উপেক্ষার নজির আরো আছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন গৃহযুদ্ধের সময় এ ধরনের এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। গৃহযুদ্ধের সময় বাল্টিমোর থেকে ওয়াশিংটনের দিকে সেনাবাহিনীর একটি দলকে যাওয়ার সময় মেরিল্যান্ড প্রদেশের আইনজীবী জন মেরিম্যান বাধা দেন। এই আইনজীবীকে গ্রেফতার করে সেনাবাহিনী। পরে জন মেরিম্যানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্তের জন্য তার এক আইনজীবী আদালতে রিট দায়ের করেন। ওই সময় বন্দীদের অধিকার স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন। কিন্তু সেনাপ্রধান গ্রেফতারকৃত আইনজীবীকে ছাড়তে অস্বীকার করেন।

এ সময় বন্দীদের অধিকার স্থগিতে প্রেসিডেন্টের এখতিয়ার নেই বলে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রজার টেনি রুল জারি করেন। পরে এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট লিঙ্কন কোনো আপিল, আদেশ জারি কিংবা মেরিম্যানের মুক্তিও চাননি।

এদিকে আদালতের আদেশ যদি প্রেসেডেন্ট উপেক্ষো করেন; তাহলে কী করতে পারেন বিচারকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেন আদেশ মানা হবে না তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করতে পারেন। যথাযথ কারণ দর্শাতে না পারলে ফেডারেল মার্শাল আদেশ মানতে বাধ্য করতে পারে অথবা কারাগারেও পাঠাতে পারেন; যা একটি সংকটের মুখে ঠেলে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্রকে।

উল্লেখ্য, গত ২৭ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। অভিবাসন সীমিত করতে নির্বাহী আদেশে সই করেন তিনি। আদেশে বলা হয়, ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেনের শরণার্থীরা তিন মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়া সিরীয় শরণার্থীরা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পাবে না।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশ সাময়িকভাবে স্থগিত করে সিয়াটলের একটি আদালত। পরে সাত মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবেদন খারিজ করে দেন  আদালত। শিগগিরই অভিবাসন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালে আপিল আদালতে এই আবেদন করা হয়েছিল।

দেশটির সংবিধান বিশেষজ্ঞ নিকোলাস বলেন, আমার মনে হয়, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিচারক অস্থায়ী আদেশ জারি করতে পারেন। তবে আমি নিশ্চিত নই যে; তারা এটি করতে পারেন কিংবা এর প্রয়োজন নাও হতে পারে।

এসআইএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।