নোটবন্দি ছায়ায় ভোটের গন্ধের বাজেট ঘোষণা ভারতে


প্রকাশিত: ১১:১২ এএম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

নতুন বছরের শুরুতেই সংসদে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করেছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। বাজেট ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নোট বাতিলের ক্ষতে প্রলেপ দিতে অরুণ জেটলি কর ছাড়ের মলম এগিয়ে দিতে পারেন বলে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল আগেই।

করের বোঝা কিছুটা কমবে এই আশায় বুক বেঁধেছিলেন দেশটির মধ্যবিত্তরা। বাজেটে তাদের একেবারে হতাশ করেননি অরুণ জেটলি। ঢালাও সুবিধা না দিলেও জানালেন, বছরে আড়াই লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত যাদের আয়, তাদের আয়করের হার কমে হচ্ছে পাঁচ শতাংশ; এর আগে যা ছিল ১০ শতাংশ।

বাকিদের কর হার কমেনি। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর দাবি, এই ধাপে করের হার কমার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সুবিধা পাবেন সকলেই। করের বোঝা কমবে অন্তত সাড়ে ১২ হাজার টাকা।

তবে এ জন্য রাজস্বে যে খেসারত গুণতে হবে, তার কিছুটা অন্তত পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছেন জেটলি। তিনি বলেছেন, যাদের বছরে আয় ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকার মধ্যে, তাদের আয়করের উপরে সারচার্জ দিতে হবে আরও ১০ শতাংশ। এছাড়া আয় কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলে ওই সারচার্জ ১৫ শতাংশ দিতে হবে।

এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণার মধ্যে রয়েছে, তিন লাখ টাকার বেশি নগদ লেনদেন বন্ধ করে দেয়া। বিদেশি লগ্নি আসার পথ আরও মসৃণ করতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ উন্নয়ন পর্ষদ তুলে দেয়া, ডাকঘরে পাসপোর্ট সেবা, কর বা ঋণ ফাঁকি দিয়ে কেউ বিদেশে পালালে ভারতে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে নতুন আইন আনার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

সব কিছুর পরও রাজকোষ ঘাটতি জিডিপির ৩.২ শতাংশের মধ্যে ও রাজস্ব ঘাটতি ১.৯ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অরুণ জেটলি। রাজনৈতিক দলে নগদ চাঁদা দেয়ার রাস্তা প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবারের বাজেটে। যদিও কেন তা পুরোপুরি বন্ধ করা হল না, সে প্রশ্ন রয়েছে।

জেটলি অবশ্য বলেছেন, এ থেকে রাজনৈতিক দলকে মোটা চাঁদা দিতে হবে চেক মারফত কিংবা ডিজিটাল পথে হেঁটে। কেনা যাবে তাদের ছাড়া ঋণপত্রও (বন্ড)। আয়কর রিটার্ন নিয়ম মেনে জমা করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে।

কাজের সুযোগ তৈরির জন্য চাপ বাড়ছে মোদি সরকারের উপর। সে কথা মাথায় রেখে ছোট ও মাঝারি শিল্পের জন্য করপোরেট করের বোঝা কমানোর কথা বলেছেন জেটলি। তা নেমে এসেছে ২৫ শতাংশে। কম আবাসনের আবাসন তৈরিকে দেয়া হয়েছে পরিকাঠামো শিল্পের তকমা। করের বোঝা কমানোর কথা বলা হয়েছে ব্যাংকের জন্যও। কিন্তু, দিনের শেষে প্রশ্ন উঠেছে শিল্পে বড় লগ্নি টানার মতো ঘোষণা কোথায়? সরকার এত ঢাকঢোল পিটিয়ে মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের কথা বলে। কিন্তু, তার জন্য উপযুক্ত ঘোষণা জেটলির বাজেটে সে ভাবে চোখে পড়ল কি?

সামনে দেশটির উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোট। তাই স্বাভাবিকভাবেই গ্রাম ও গরিবের জন্য কল্পতরু হওয়ার চেষ্টা করেছেন জেটলি। ১০০ দিনের কাজে রেকর্ড ৪৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। যদিও গত বারের খরচের থেকে তা বেড়েছে সামান্যই। কৃষকদের ঋণ দেয়ার লক্ষ্য বাঁধা হয়েছে রেকর্ড ১০ হাজার কোটি টাকা।

সব গ্রামে বিদ্যুৎ, অন্তত এক কোটি কাঁচা বাড়ি পাকা করা এবং গ্রামে পাকা রাস্তা তৈরির গতি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি এবারও দেয়া হয়েছে নিয়ম মেনে। তবে যা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছিল, সেই সবার অ্যাকাউন্টে নিঃশর্তে টাকা পাঠানোর কোনও প্রকল্প এ দিন অন্তত শোনা যায়নি।

প্রথা ভেঙে এবারই প্রথম রেল ও সাধারণ বাজেট হয়েছে একসঙ্গে। যুক্তি, সম্পূর্ণ পরিবহণ ক্ষেত্রকে একসঙ্গে দেখতে এতে সুবিধা হবে। সেই অনুযায়ী রেল নিয়ে বাজেট ঘোষণা বিপুল সময় এ দিন অন্তত বরাদ্দ করেননি জেটলি। খুঁটিনাটিতে না গিয়ে শুধু বলেছেন, আগামী দিনে রেলের আর্থিক স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা বাড়ানোয় জোর দেবেন তারা। পরিবহণের জন্য বরাদ্দ মোট ২ লাখ ৪১ হাজার কোটি রূপি। গুরুত্ব পেয়েছে হাইওয়ে নির্মাণও। তার জন্য ৬৪ হাজার কোটি তুলে রাখার কথা জানিয়েছেন জেটলি। মোটা বরাদ্দ জুটেছে প্রতিরক্ষা, তফসিলি জাতি উন্নয়ন, গ্রামোন্নয়নে।

এদিকে, ২০১৭ সালের বাজেটকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিশাহীন, অর্থহীন বলে মন্তব্য করেছেন। আনন্দবাজার।

এসআইএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।