প্রাণ বাঁচাতে পোশাক ধার করে নারী পুলিশের পলায়ন


প্রকাশিত: ১১:২১ এএম, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭

ঘন ঘন বোমা বিস্ফোরণের শব্দ, চিৎকার, লাঠি হাতে কখনো জনতার দিকে তেড়ে যাচ্ছে পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা। কখনো জনতার ছোড়া ইট থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ব্যস্ত তারা।

এই যখন পরিস্থিতি, তখন প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে ভয়ে জড়োসড়ো ছয় নারী কনস্টেবল। গুলি-বন্দুক-কাঁদানে গ্যাসের সেল এমনকি একটি লাঠিও নেই হাতে।

মঙ্গলবার বিকাল প্রায় সাড়ে ৪টা। ভাঙড়ের বাদামতলায়, পাওয়ার গ্রিড থেকে খানিক দূরে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। আর পেছনে পড়ে থাকা ছয় নারী পুলিশ কর্মী ভাবছেন, কীভাবে রক্ষা পাবেন নিজেরা। এর আগে পুলিশের গুলিতে স্থানীয় দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। বাড়ি বাড়ি ঢুকে পুলিশ গ্রামবাসীদের পিটিয়েছে, হুমকি দিয়েছে বলেও গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। পরে দফায় দফায় জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে উঠে পশ্চিমবাংলার ভাঙর এলাকা।

ছয় নারী পুলিশ কর্মী বুঝে নেন, এই পরিস্থিতিতে সহকর্মীদের দিকে এগোতে গেলে আরো বিপদ। বাঁচতে গেলে অন্য পথ ধরতে হবে।

এবার ভাঙরের উল্টো দিকে উড়িয়াপাড়া-গাজিপুরের পথ ধরেন তারা। কখনো হেঁটে, আবার দৌড়ে, হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছেন মাটিতে। আবার উঠে কোনো রকমে ঢুকে পড়েন গ্রামের ভেতরে। আশপাশের পরিস্থিতি দেখে বুঝে নেন, গ্রাম তখন কার্যত পুরুষশূন্য। বাড়ির ছেলেরা পুলিশ তাড়াতে ব্যস্ত।

সামনের একটি বাড়িতে ঢুকে পড়েন ছয় নারী পুলিশ কর্মী। পুলিশ দেখে হতভম্ব বাড়ির নারীরাও। কিন্তু এই পুলিশের সেই তর্জন-গর্জন নেই, বরং নিজেরাই আশ্রয় চাইছেন। গ্রামের এক নারীর কথায়, ‘ওদের তখন বিধ্বস্ত অবস্থা। পোশাক অগোছালো। শীতের বিকালেও ঘেমে একাকার।

যে পুলিশের বিরুদ্ধে এত রাগ জমেছে গ্রামের লোকের, তাদের মুখে প্রাণভিক্ষার আবেদন শুনে গ্রামের মেয়ে-বৌরা হকচকিয়ে যান। কিন্তু ঠিক করে ফেলেন, পুলিশের উর্দি গায়ে থাকলেও এরা তো আসলে তাদের মতো নারীই। মেয়ে হয়ে মেয়েদের পাশে দাঁড়ানোই এখন কর্তব্য।

সেইমতো নারী পুলিশ কর্মীদের পানি দেয়া হয়। আশ্বাস মেলে, কোনো চিন্তা নেই। এখানে কেউ আপনাদের ক্ষতি করবে না।

এক নারী কনস্টেবলের মাথায় বুদ্ধি খেলে, নিরাপদে গ্রাম ছাড়তে গেলে পোশাক বদলানো জরুরি। ঠিক হয়, পুলিশের খাকি উর্দি বদলে ফেলবেন সকলে। পাঁচজনের ব্যাগে শালোয়ার-কামিজ, শাড়ি ছিল। কিন্তু বারুইপুর থানার এক নারী কনস্টেবলের কাছে সাদা পোশাক নেই। তিনি গ্রামের এক নারীকে ডেকে বলেন, আমাকে একটি কাপড় দিতে পারেন?

বাড়ির বউ এগিয়ে দেন রাতের পোশাক (নাইটি)। পোশাক বদলে নেন সকলে। এরপরে গ্রামের মেয়েরাই পথ দেখিয়ে সকলকে এগিয়ে দেন। পরে পুলিশের গাড়ি দেখতে পেয়ে ধড়ে প্রাণ ফেরে ছয় নারী কনস্টেবলের।

রুমা বিবি নামে গ্রামের এক নারী বলেন, ‘পুলিশ আমাদের মেরেছে-ধরেছে সে কথা ঠিক। কিন্তু গ্রামের মেয়েরা মিলে ঠিক করে, পুলিশের উর্দি পরা হলেও ওই মেয়েদের প্রাণে বাঁচাতেই হবে।’

গ্রামের নারীরা এই সৌজন্যতা না দেখালে মঙ্গলবার সুস্থ্য ভাবে ফেরা তাদের পক্ষে সহজ ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন ওই নারী কনস্টেবলরা। পাশাপাশি পুরুষ সহকর্মীদের ব্যবহারে ক্ষুণ্ণ তারা। এক নারী কনস্টেবল বলেন, ‘আমরা যে নিরস্ত্র অবস্থায় পেছনে পড়ে আছি, বিপদের সময়ে সে কথা কেউ ভাবেনি। দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সে কথা জানিয়েছি।’ আনন্দবাজার।

এসআইএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।