মোদীর পশ্চিমবঙ্গ সফর স্থগিত


প্রকাশিত: ০৫:০৩ এএম, ১৮ মার্চ ২০১৫

পশ্চিমবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দফতরকে জানিয়ে দেওয়া হয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত পশ্চিমবঙ্গ সফর আপাতত বাতিল করা হলো।

অথচ বুধবার দুপুর পর্যন্ত ছবিটা ছিল অন্য রকম। মোদীর এই সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের সঙ্গে কথা হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রধানমন্ত্রী এই সফরে মমতার সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী ছিলেন।

আবার মোদী পশ্চিমবঙ্গে আসবেন জেনে মমতা নিজের উত্তরবঙ্গ সফরই বাতিল করে দিয়েছিলেন। যদিও মোদীর সফর স্থগিত হয়ে যাওয়ার পরে ফের মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফরের তোড়জোর শুরু হচ্ছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।

রাজ্য সরকারের সূত্রের মতে, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা নাগাদ মোদীর সচিবালয় থেকে ফোন করা হয় মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। মোদী যাচ্ছেন জানার পরে মমতা উত্তরবঙ্গ সফর বাতিল করায় তাঁকে ধন্যবাদও জানানো হয়।

কিন্তু একই সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়, রাজ্যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন মাইক বাজানোয় নিষেধাজ্ঞা থাকায় ২৪ মার্চের বদলে প্রধানমন্ত্রী ১ এপ্রিল রাজ্যে যেতে পারেন। আসানসোলে ইস্কোর অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সময় সেখানকার সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় ও অন্য বিজেপি নেতারা মোদীর জন্য একটি জনসভার আয়োজন করতে চান। কিন্তু মাইক বাজানোয় নিষেধাজ্ঞা থাকায় সমস্যা হচ্ছে।

এ কথা জানার পরে রাজ্য সরকারের তরফে আশ্বাস দিয়ে বলা হয়, এমন ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলই সামিয়ানা খাটিয়ে সভা করে। তাছাড়া এই সভার বিষয়টি রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আওতায় আসে। রাজ্য সরকার বিষয়টি নিয়ে কোনো রাজনীতি করতে চাইছে না। ফলে মোদী এলে কোনো সমস্যা হবে না।

রাজ্যের আশ্বাস পাওয়ার পরে ১ এপ্রিল দিনটিই ধার্য হয়। দুপুরের পরে মমতার সচিবালয় থেকে মোদীর অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন গৌতম স্যান্যাল। বর্ধমানের জেলা প্রশাসক সৌমিত্র মোহনের থেকেও নোট এসে গিয়েছিল। যাতে বলা হয়, পুরভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হলেও মোদী এলে তা নির্বাচনী আচরণ বিধির আওতায় পড়ছে না।

কিন্তু পরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানতে পারে, ১ এপ্রিল প্রণব মুখার্জীও যাচ্ছেন কলকাতা সফরে। তিনি ৩ তারিখ পর্যন্ত সেখানে থাকতে পারেন। সাধারণত, কোনো একটি শহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এক সঙ্গে থাকেন না। আবার ৩ এপ্রিলের পর মমতারও নানা জায়গায় যাওয়ার কথা রয়েছে।

তাছাড়া ১ তারিখের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হলেও অন্য পরীক্ষা রয়েছে। তখনো সভা করার ক্ষেত্রে সমস্যা থাকবে। এই সব কিছু ভেবেই মোদীর বাংলা সফর আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদীর সচিবালয়।

বিজেপি সূত্র এই সব কারণ ছাড়াও অন্য আর একটি বিষয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাদের মতে, নয় মাস পরে নরেন্দ্র মোদী কলকাতায় যাচ্ছেন। এটি একটি মেগা-ইভেন্ট হওয়া উচিত। বিজেপির বক্তব্য, রাজ্য সরকার যতই মোদীর সফর চূড়ান্ত করার ব্যাপারে আন্তরিক হোক, এর পেছনে তৃণমূলের অন্য রাজনীতিও রয়েছে। সেটা কী? বিজেপির বক্তব্য, যাবতীয় বিধিনিষেধের মধ্যে সামিয়ানা খাটিয়ে সভা করলেও সেটি বড় আকারে করা সম্ভব নয়। ফলে মোদীর সফর সে ভাবে প্রচার পাবে না।

বিজেপি নেতারা চাইছেন, মোদী পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে মমতার সঙ্গে বৈঠক করার পাশাপাশি পুরভোটের আগে রাজনৈতিক প্রচারও করুন। বিশেষ করে সন্ন্যাসিনীর উপর নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে যখন এমনকি আন্তর্জাতিক স্তরেও হইচই হচ্ছে এবং এই প্রশ্নে শাসক তৃণমূল বেশ বেকায়দায়। এই অবস্থায় বিধিনিষেধের জেরে মোদী যদি সে সব নিয়ে সরব না হতে পারেন, তা হলে উল্টে তৃণমূলেরই লাভ বলে মনে করছে বিজেপির একটি বড় অংশ।

তাদের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য সমন্বয়ের বার্তা দিয়ে মোদীর সফর থেকে অনেক বেশি লাভ ঘরে তুলবে তৃণমূল। তাই এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে মোদীর সফর নিয়ে খুব বেশি আগ্রহী নয় বিজেপি। বরং রাজ্যে পুরনির্বাচনের পরেই এই সফর হওয়া ভালো বলে তাদের মতো।

এই টানাপড়েনের মধ্যে থেকে গেল আরও একটি বিষয়। প্রথমে কথা ছিল রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অসুস্থ প্রেসিডেন্ট স্বামী আত্মস্থানন্দকে দেখতেই কলকাতায় যাবেন মোদী। পরে তার সঙ্গে যোগ হয় আসানসোলে ইস্কোর অনুষ্ঠান। কিন্তু রাজনীতির ঘোলাজলে প্রধানমন্ত্রীর কলকাতায় যাওয়ার মূল উদ্দেশ্যটাই আপাতত ভেস্তে গেল।

বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।