নাফ নদী দিয়ে যেভাবে পাচার হচ্ছেন রোহিঙ্গারা


প্রকাশিত: ০৪:০৩ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলেছেন, দালালদের টাকা দিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। জীবন বাঁচানোর জন্যে তারা মিয়ানমার ও বাংলাদেশ দুই জয়গাতেই দালালদের অর্থ দিচ্ছেন।

এ ছাড়া সীমান্তবর্তী নাফ নদী পার হচ্ছেন স্থানীয় জেলেদের সহায়তায়। অর্থের বিনিময়ে কীভাবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আনার কাজ করছে এসব দালাল। সন্ধ্যার পর অন্ধকার নেমে এলে কাজ শুরু হয় নৌকার মাঝি সবুরের (ছদ্মনাম)।

আপাতদৃষ্টিতে তাকে দেখলে মনে হবে, তিনি নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছেন। কিন্তু উদ্দেশ্য তার অন্য। মোবাইল ফোনে আগেই কথা বলে নেন সবুর। মিয়ানমার থেকে যারা বাংলাদেশে আসবে তারা মিয়ানমার সীমান্তে নদীর ওপারে বনের ভেতরে অপেক্ষা করতে থাকেন।

রাত আরো গভীর হলে সবুর নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে তাদেরকে নৌকায় তুলে নেয়। তিনি বলেছেন, নৌকায় যারা উঠেন তাদের মধ্যে অনেক মেয়েকে তিনি দেখেছেন মুখে ও শরীরে কালি এবং কাদা মেখে আছেন। তাদের চেহারা যাতে না বোঝা যায় সে কারণেই এ চেষ্টা।

জনপ্রতি তাকে কেউ তিন হাজার, কেউ দুই হাজার আবার কেউ পাঁচ হাজার টাকা দেয়- বলেন তিনি। প্রতিটা নৌকায় ৫ থেকে ১০ জন করে উঠানো হয়। গত প্রায় দেড় মাসে সবুর এমন ৫০ জনকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন বলে তিনি জানান।

শুধু নদী পার করে দেয়াটাই তার কাজ। তবে তার উপরও লোকজন রয়েছেন যারা মোবাইলে মিয়ানমারের দালালদের সাথে মূল যোগাযোগ করে থাকেন। বাংলাদেশে এ রকম একজন দালাল আব্দুল। মিয়ানমারের দালালদের সাথে তিনি যোগাযোগ রাখেন।

আব্দুল জানান, একদল রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার জন্যে মিয়ানমারের দালালদের সাথে আড়াই লাখ থেকে পাঁচ লাখ কিয়েটের চুক্তি করেন তিনি। তিনি বলেন, প্রথমে টেকনাফ থেকে একজন জেলেকে ঠিক করা হয়; যিনি রাতের অন্ধকারে নদীর ওপাশে যাবেন রোহিঙ্গাদের আনার জন্যে। পরে রাতের বেলা, কাঁটাতারের বেড়ার পাশে যেসব রোহিঙ্গা লুকিয়ে থাকেন, তাদেরকে নিয়ে আসেন তিনি।

দালাল আব্দুল জানান, এ জন্যে তিনি জনপ্রতি ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। তবে সীমান্তে বিজিবির কঠোর সর্তক অবস্থান আর তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসাটাই তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ- বলছিলেন তিনি।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার জেরে এ পর্যন্ত ২১ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা বলছে। আর এসব রোহিঙ্গার অনেকেই বিবিসির কাছে বলেছেন, জীবন বাঁচাতে দালালদের টাকা দিয়ে তারা বাংলাদেশের সীমান্তে এসেছেন।

টেকনাফের একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে পরিবার নিয়ে উঠেছেন এমন একজন ব্যক্তি রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, পরিবারের নারী সদস্যদের সম্মান বাঁচাতে তিনি তাদের নিয়ে পালিয়ে এসেছেন। তার ভাষায় দালালদের দিয়েছেন জন প্রতি ২৬ হাজার মিয়ানমার কিয়েট। বিবিসি।

এসআইএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।