রোহিঙ্গা নির্যাতন জঙ্গিদের উসকে দিতে পারে : যুক্তরাষ্ট্র


প্রকাশিত: ১২:১৮ পিএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬

মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক নির্যাতন চালাচ্ছে; যা আন্তর্জাতিক বিশ্বের নজরের বাইরে ঘটে চলেছে। সেনাবাহিনীর হাতে খুন, ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন রোহিঙ্গারা। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে সাগর পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী দেশে পালানোর চেষ্টা করছেন রোহিঙ্গারা। জীবন নিয়ে পালিয়ে এলেও ধ্বংস করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক উত্তরণের অন্যতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এবার রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মুখ খুলেছে। দেশটি বলছে, কঠোর নিরাপত্তা অভিযানে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাস্তুচ্যুত হয়েছে; নিহত হয়েছে অনেকে। ফলে নিপীড়িত এসব মানুষ মৌলবাদের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। এছাড়া রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি করতে পারে।

গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সংলগ্ন মিয়ানমারের তিনটি চেকপোস্টে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় পুলিশ সদস্যসহ ৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। এরপর রাখাইনে অপারেশন ক্লিয়ারেন্স নামে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী।

মিয়ানমারে কয়েক প্রজন্ম ধরে বসবাস করে এলেও দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে মনে করে। রাখাইন প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকিতে হামলার ঘটনাকে দীর্ঘদিনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের একটি ছোট অংশের পাল্টা প্রতিরোধ হিসেবে দেখছেন অনেকেই।

পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড্যানিয়েল রাসেল রাখাইনে সেনাবাহিনীর কঠোর অভিযানের সমালোচনা করে বলেছেন, মিয়ানমারে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা চরমপন্থী জঙ্গিদের উসকে দিতে পারে।

ড্যানিয়েল রাসেল বার্তাসংস্থা এপিকে বলেন, পরিস্থিতি ভুলভাবে পরিচালিত হলে রাখাইন জিহাহিদের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে; যা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।  

এর আগে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার বর্ণনা দিতে গিয়ে জাতিসংঘ বলেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বন্ধুবিহীন জাতি হচ্ছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা। ২০১২ সালের দেশটিতে অভ্যন্তরীণ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা মুসলিম চরমপন্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ওই সময় বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গাদের সংঘর্ষে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ও এক লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।  

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ছুরি ও গাড়ি হামলা চালায় সোমালিয়ান বংশোদ্ভূত মার্কিন এক শিক্ষার্থী। মার্কিন এই শিক্ষার্থী এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। গত সপ্তাহের শেষ দিকে জাকার্তায় মিয়ানমার দূতাবাসে হামলা পরিকল্পনার অভিযোগে দুই জঙ্গিকে আটক করে কর্তৃপক্ষ।

রাখাইনের সহিংসতা নিয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও অারো কয়েকটি দেশ। স্যাটেলাইটে সংগৃহীত ছবি বিশ্লেষণ করে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, রোহিঙ্গাদের গ্রামের ১২৫০টি বাড়ি-ঘর ধ্বংস করা হয়েছে। এ ছাড়া শত শত রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে মিয়ানমার সরকার এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলছে, গত মাসে পুলিশ চেকপোস্টে হামলার পর সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী।

সূত্র : এপি।

এসআইএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।