সু চির নীরবতায় বাড়ছে রোহিঙ্গাদের কান্না


প্রকাশিত: ০২:২৯ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০১৬

রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বকারী ইউরোপের একটি সংগঠন বলছে, রাখাইন প্রদেশে গত অক্টোবরে নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে হামলায় সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের কৌশলে ব্যবহার করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। দেশটিতে চলমান রোহিঙ্গা নিধনকে বৈধতা দিতে ৯ অক্টোবরের ওই হামলা সাজানো ছিল বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।

ইউরোপিয়ান রোহিঙ্গা কাউন্সিলের (ইআরসি) চেয়ারম্যান বলেছেন, ৯ অক্টোবরের হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪০০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে, নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং মসজিদ ও বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়েছে। দরিদ্রতা, স্বীকৃতির অভাব ও সেনাবাহিনীর ফাঁদে পড়ায় রোহিঙ্গাদের মাঝে হতাশা বাড়ছে।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিধনে নেমেছে মিয়ানমার।

Rohingya

এদিকে দেশটির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রধান ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনায় নীরব ভূমিকা পালন করেছেন। সেনাবাহিনীর নির্যাতনে রোহিঙ্গাদের কান্না বাড়লেও এ বিষয়ে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেননি তিনি।

সু চির নীরবতায় রাখাইনে ‘ক্লিয়ারেন্স মিলিটারি অপারেশন’ পরিচালনা করছে দেশটির সেনাবাহিনী। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সু চির নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইউরোপে বসবাসকারী রোহিঙ্গা নেতারা। আয়ারল্যান্ডে ইআরসি নেতাদের আয়োজনে এক সেমিনারে সু চির নীরবতা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

ইআরসির চেয়ারম্যান খাইরুল আমিন তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলু নিউজ এজেন্সিকে বলেন, নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালানো রোহিঙ্গা তরুণদের কাছে অপ্রচলিত অস্ত্র বিক্রি করে পুলিশ।

কারণ তারা মনে করেছিল, এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে অথবা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে পারবে।  

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা তরুণরা এসব অস্ত্র পেলে কী ঘটবে তা পুলিশ ও সামরিক বাহিনী জানতো। সুতরাং আমরা বলতে পারি, তারা (আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী) আক্রান্ত হওয়ার জন্যই তরুণদের সহায়তা করেছিল।

ROHINGYA

ওই রোহিঙ্গা নেতা আরো বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চলমান অভিযানে আড়াই হাজারেরও বেশি বাড়ি-ঘর, মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে। তিনটি গ্রাম পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৪০০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে সেনাসদস্যরা। হাজার হাজার রোহিঙ্গা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন।

খাইরুল আমিন বলেন, ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়ে পড়েছে। তরুণ এবং বৃদ্ধরা জঙ্গল, ধানখেত অথবা পাহাড়-পর্বতে লুকিয়ে রয়েছেন। শিশু ও নারীদের বাড়িতে রেখে এসব রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

রাখাইনের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও রোহিঙ্গারা আশ্রয়ের আশায় বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।

ইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ সরকার তাদের ইতোমধ্যে ফেরত পাঠানো শুরু করেছে। মঙ্গলবার ৪০০ রোহিঙ্গাকে নৌকাযোগে মিয়ানমারে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।

‘তারা কান্না করছে। এটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। আমরা যতটুকু জানি ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং এক হাজার রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক করা হয়েছে।’

ROHINGYA

১৯৮২ সালে মিয়ানমারে একটি আইন পাস হয়; কয়েক প্রজন্ম ধরে দেশটিতে রোহিঙ্গারা বসবাস করে এলেও ওই আইনে তাদের সে দেশের নাগরিক হিসেবে অস্বীকার করা হয়। সেই সময়ই তাদের আইনি প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রহীন ঘোষণা করা হয়।

এর আগে ২০১২ সালের মাঝের দিকে রাখাইনে জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় এক লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়। সহিংসতায় ৫৭ মুসলিম ও ৩১ বৌদ্ধের প্রাণহানি ঘটে। ধ্বংস করা হয় রোহিঙ্গাদের আড়াই হাজার বাড়ি-ঘর।

ওই রোহিঙ্গা নেতা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমি বলতে চাই, দয়া করে আমাদের বাঁচানোর চেষ্টা করুন। আমাদের সহায়তা করুন; যাতে সহিংসতার মাধ্যমে নিজেদের রক্ষার পথ বেছে নিতে না হয়।

সূত্র : আনাদোলু নিউজ অ্যাজেন্সি ও রোহিঙ্গা ভিশন।

এসআইএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।