পেপসি ও কোকা-কোলাসহ ৫ কোমল পানীয়তে ক্ষতিকর সিসা


প্রকাশিত: ০৬:২১ এএম, ২৩ নভেম্বর ২০১৬

দুটি বহুজাতিক সংস্থার তৈরি পাঁচটি কোমল পানীয়র নমুনাতে অতিরিক্ত সিসা, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়ামের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া গেছে বলে রাজ্যসভায় জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ফগন সিং কুলস্তে এক লিখিত জবাবে জানিয়েছেন, স্প্রাইট, মাউন্টেন ডিউ, সেভেন আপ, পেপসি ও কোকা-কোলা- এই পাঁচটি কোমল পানীয়র নমুনা জমা দেয়া হয়েছিল কলকাতার ন্যাশনাল টেস্ট হাউসে। সেখানে পরীক্ষার পর এসব পানীয়তে অতিরিক্ত সিসা, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়াম ধরা পড়েছে।

ক্যাডমিয়াম, সিসা, ক্রোমিয়ামের মতো ভারি ধাতু শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে জমা হলে তা বিষের মতো কাজ করতে শুরু করে। ওই বিষক্রিয়ায় ফুসফুসের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, কাচের বোতল ছাড়া অন্য কোনো বোতলে কোমল পানীয় কেনার পর অনেকেই অভিযোগ করেছেন, বোতলের ভেতর অতিরিক্ত মাত্রায় ভারি ধাতু জমে থাকতে দেখা গেছে।

ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত বছরের এপ্রিলে ওইসব পানীয়ের নমুনা পরীক্ষা করার জন্য কলকাতার অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড হাইজিনকে নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্র। সেখান থেকে নমুনা যায় ন্যাশনাল টেস্ট হাউসে।

পরীক্ষার পর দেখা গেছে, ওই পাঁচ কোমল পানীয়র প্লাস্টিকের বোতল থেকে ক্ষতিকর পদার্থ নির্গত হচ্ছে। তাপমাত্রা যতো বাড়ছে, ক্ষতিকর ধাতুর পরিমাণও ততো বাড়ছে।

অতিরিক্ত সিসা কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বেরোতে চায়। এতে কিডনির উপরে চাপ পড়ে। রক্তে সিসার পরিমাণ অতিরিক্ত হারে বেড়ে গেলে কিডনি বিকল হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।

এছাড়া রক্তে ক্যাডমিয়ামের পরিমাণ অতিরিক্ত হয়ে গেলে, তা হিমোগ্লোবিনের রাসায়নিক গঠনই বদলে দেয়। হিমোগ্লোবিনে লোহার জায়গা নিয়ে নেয় ক্যাডমিয়াম। এর ফলে শরীরে অক্সিজেন বহন ক্ষমতা কমে যায়। বিভিন্ন কোষে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ঢুকতে পারে না। ফলে মস্তিষ্ক, কিডনি, ফুসফুসের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর স্বাভাবিক কাজকর্ম নষ্ট হয়। ক্যাডিয়ামের বিষক্রিয়ায় ফুসফুসের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।

অতিরিক্ত মাত্রার ক্রোমিয়াম খাদ্যনালির কোষের রক্তজালিকাগুলো ফাটিয়ে দিয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে বলে জানিয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিজ্ঞানের এক শিক্ষক। তিনি বলেন, রঙের কারখানায় যারা কাজ করেন, তাদের অনেকেরই শরীরে ক্রোমিয়াম বিষক্রিয়া হয়। এর ফলে লোহিত রক্তকণিকা ভেঙে যেতে পারে, কিডনির কাজকর্ম বিপর্যস্ত হতে পারে এবং ফুসফুসের ক্যান্সারও হতে পারে। তবে এই বিষক্রিয়া কতটা গুরুতর হবে, তা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার উপরে।

কোমল পানীয়গুলোর নমুনায় সিসা, ক্যাডমিয়াম এবং ক্রোমিয়ামের মতো ভারি ধাতু অতিরিক্ত পরিমাণে থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলেও ওই পানীয়গুলোর উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ হবে কিনা, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী কিছু জানাননি। এছাড়া শুধু প্লাস্টিকের বোতলে থাকা পানীয় নিয়েই পরীক্ষা করা হয়েছে। কাচের বোতল নিয়ে পরীক্ষা করা হয়নি।

কোকা-কোলা এবং পেপসির কাছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ঘোষণা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। দুই সংস্থার তরফ থেকেই জানানো হয়েছে, কেন্দ্রের বক্তব্য খতিয়ে দেখে তারা প্রতিক্রিয়া জানাবেন। পরে পেপসিকো ইন্ডিয়ার তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এসব খবর ভিত্তিহীন। আমাদের সব পণ্যে ভারি ধাতু ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারতের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস রেগুলেশনসের নির্ধারিত মাত্রা বজায় রাখা হয়।’ তবে কোকা-কোলার তরফ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

টিটিএন/এনএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।