সংসার চালাতেই দস্যু হচ্ছে তারা


প্রকাশিত: ১০:০৪ এএম, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

নাইজেরিয়ায় জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। এ বিষয়ে আল জাজিরা পিপল অ্যান্ড পাওয়ারের একটি অনুসন্ধানী  প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তেলসমৃদ্ধ দেশটির বদ্বীপে জলদস্যুরা ক্রমাগত হিংস্র হয়ে উঠছে। তারা সাগর পথে নৌকা বা তেলের জাহাজ ছিনতাই করে লোকজনকে জিম্মি করে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ দাবি করছে। টাকা না পেলে জিম্মি করে রাখা লোকদের মেরে ফেলতে এক মুহূর্তও দ্বিধা করে না দস্যুরা।

কয়েক বছর আগে ১১ জনকে জিম্মি করেছিল সোমালি দস্যুরা। একটি কার্গো জাহাজ ছিনতাই করে ওই জাহাজে থাকা সবাইকে জিম্মি হিসেবে আটকে রাখা হয়েছিল। এরা সবাই ছিলেন মালয়েশিয়ার নাবিক। তাদের মুক্তির জন্য মোটা অংকের অর্থ দাবি করা হয়েছিল।

জিম্মিদের মধ্যে একজন দস্যুদের হাতে আটক অবস্থায় থাকা সেই সব দুঃসহ স্মৃতি বর্ণনা করেছেন। তিনি জানান, ২০১০ সালের নভেম্বরের ২৬ তারিখ ভারত মহাসাগর থেকে তাদের জাহাজটি ছিনতাই করা হয়।

তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের কাছে ২০০ কোটি টাকা দাবি করেছিল। তারা আমাদের প্রতিনিয়ত নির্যাতন করত। আর আমাদের বলতো আমাদের পরিবারের কাছে টাকা চাইতে। আমাদের পরিবার টাকা দিতে না পারলে আমাদের মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেয়া হতো।’

জিম্মি থাকা অবস্থায় একজনকে গুলি করে হত্যা করে দস্যুরা। এছাড়া দস্যুদের নির্যাতনে পাঁচ ক্রুর মৃত্যু হয়। এরপর দস্যুদের হাত থেকে বাকিদের মুক্ত করে জাতিসংঘের বিমানে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেয়া হয়। সেসময় আরো দুটি বিমান তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য পাহারা দিয়ে নিয়ে যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে সাগরপথে দস্যুদের হাতে জিম্মি বা অপহরণের ঘটনা খুব বেশি ঘটছে। শতকরা ৮০ ভাগ বৈদেশিক বাণিজ্য সাগর পথে হয়। আর সমুদ্রপথে ইউরোপ এবং এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সোমালিয়া। ফলে এই পথ দিয়ে যাতায়াতকারী জাহাজ বা নৌকার ওপর খুব সহজেই হামলা চালাতে পারে দস্যুরা। প্রতি বছর এই পথ দিয়ে প্রায় ১৮ হাজার জাহাজ চলাচল করে।

সম্প্রতি দস্যুদের নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে পিপল অ্যান্ড পাওয়ার। ওই ভিডিওতে এক দস্যুকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘এখান থেকে পালিয়ে যাও নইলে তোমার মাথা গুলি করে উড়িয়ে দেবো। তোমরা সব কিছু শোষণ করতে এসেছো। তোমরা চাও না আমরা কাজ করি তাই না? তোমাদের কারণেই আমাদের এ কাজ করতে হচ্ছে। তোমরা সব কিছু শোষণ করেছো। তোমাদের মত লোকদেরকেই আমরা টার্গেট করি। কারণ আমরা জানি তোমাদের আটকে রাখলে অনেক টাকা পাওয়া যাবে।’

ওই দস্যুকে রিপোর্টার প্রশ্ন করেন, ‘আচ্ছা আমাকে অপহরণ করলে কত টাকা পাবে?’ উত্তরে ওই দস্যু বলেন, ‘তোমাকে? ধরো ৫০ মিলিয়ন নায়রা পাওয়া যাবে।’ তাকে আবারো জিজ্ঞেস করা হলো, ‘এই টাকা দিয়ে কি করবে? এর উত্তরে সে জানালো, ‘এই টাকা দিয়ে অস্ত্র আর স্পিড বোট কিনব। আর বাকি টাকা পরিবারের জন্য খরচ করব। কারণ আমাদের তো কোনো চাকরি নেই। এ কারণেই তো আমরা এই নোংরা কাজ করছি। আমার পাঁচ ছেলে-মেয়ে। দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আমি ওদের কি খাওয়াব? ওদের পড়াশুনার খরচ কোথায় পাবো? আর বাড়ি ভাড়াই বা কোত্থেকে দেবো? যারাই এখানে আসবে তাদেরই আমাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে।




টিটিএন/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।