যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়া


প্রকাশিত: ০৩:৩৩ এএম, ০৮ নভেম্বর ২০১৬

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববাসীর কৌতূহলের যেন শেষ নেই। সারাবিশ্বের দৃষ্টি এখন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো একজন নারীর হোয়াইট হাউসে প্রবেশের সুযোগ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের আগে মুসলিম ও অভিবাসীবিরোধী যেসব বক্তব্য রেখেছেন, তা শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, বহির্বিশ্বেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মার্কিন নাগরিকেরা সাধারণত অভ্যন্তরীণ বিষয়কেই বেশি গুরুত্ব দেয়। নির্বাচনে এর বড় প্রভাব পড়ে। এবারের নির্বাচনে মুসলমান ও অভিবাসী ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়া পৃথিবীর অন্যান্য দেশের চেয়ে আলাদা। দেশটির সংবিধানের অনুচ্ছেদ-২-এর দ্বাদশ সংশোধনী অনুযায়ী প্রতি চার বছর পর পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবার এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থীকে অবশ্যই তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। এক. প্রার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে। দুই. তাকে অন্তত ৩৫ বছর বয়সী হতে হবে। তিন. অন্তত ১৪ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বাস করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে দীর্ঘ এক মাসব্যাপী ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচিত হন। এজন্য আইওয়া রাজ্যে রাজনৈতিক নেতাদের সমিতিতে নির্বাচন-সম্পর্কিত আলোচনা হয়। সর্বোচ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হয়।

পরবর্তী ধাপে মূল নির্বাচনে ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া (ওয়াশিংটন নগরী) কোনো অঙ্গরাজ্যের অংশ নয়।

ভোটাররা তাদের ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ও একজনকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন। একজন ভোটার নিজের পছন্দের প্রেসিডেন্টের জন্য ভোট দেয়ার সময় একই সঙ্গে ইলেক্টোরাল প্রতিনিধির জন্যও ভোট দেন।

মূলত ভোটাররা ইলেক্টোর নির্বাচনের জন্য ভোট দেন। কারণ কাগজে-কলমে এ ইলেক্টোরদের ভোটেই নির্বাচিত হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট।

প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের পপুলার ভোটের মাধ্যমেই ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদের নির্ধারণ করা হয়। এরা মনোনীত একজন প্রার্থীকে সমর্থনের অঙ্গীকার করেন।

ইলেক্টোরাল কলেজ :
ইলেক্টোরাল কলেজের ৫৩৮ সদস্য রয়েছে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে কোনো রাজ্য থেকে কতজন সদস্য হবেন -তা নির্ধারিত হয়।

বেশিরভাগ রাজ্যেই প্রার্থীরা সাধারণ ভোটারদের যতো বেশি ভোটই পান না কেনো, তাতে কোনো লাভ হয় না। ধরা যাক, নিউইয়র্কে ৯৯ শতাংশ ভোটার হিলারি ক্লিনটনকে ভোট দিয়েছেন, তিনি ওই রাজ্যের পুরো ২৯টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পাবেন। যদি তিনি ওই রাজ্যের ৫১ শতাংশ ভোটও পান, তবুও তিনি ২৯টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পাবেন।

ইলেক্টোরাল কলেজের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করা হয়ে থাকে দলীয় ভিত্তিতে। ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজের মধ্যে যিনি ন্যূনতম ২৭০টি পাবেন, তিনিই বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষিত হবেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে তার রানিং মেট নির্বাচিত হয়েছেন বলে বিবেচিত হবেন।

হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে একটি রাজ্যের প্রতি সদস্য এবং প্রতিটি রাজ্যের দুজন সিনেটরের জন্য একজন ইলেক্টোর রয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়া সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য হওয়ায় এখানে ৫৫ জন ইলেক্টোর রয়েছে। অন্য রাজ্যগুলোর মধ্যে টেক্সাসে ৩৮ জন ইলেক্টোর এবং নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডায় ২৯ জন করে ইলেক্টো রয়েছে।

অন্যদিকে কম জনসংখ্যা অধ্যুষিত আলাস্কা, ডিলাওয়্যার, ভারমন্ট ও ওইয়োমিংয়ে মাত্র তিনজন করে ইলেক্টোর রয়েছে। ডিস্টিক্ট অব কলাম্বিয়ায় তিনজন ইলেক্টোর রয়েছে।

ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যরাই ১৯ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন। সফল প্রার্থীকে ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে অবশ্যই ২৭০টি ভোট পেতে হবে।

কোন কোন রাজ্য ঐতিহাসিকভাবে প্রতি নির্বাচনেই ডেমোক্রেট দলের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে আসছে। অন্য রাজ্যগুলো রিপাবলিকান প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছে।

তবে বেশ কয়েকটি রাজ্যের ভোটাররা নির্দিষ্ট কোনো দলকেই সমর্থন দেয় না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্যগুলোতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ইলেক্টোর রয়েছে। এই রাজ্যগুলোকেই নির্বাচনের ব্যাটলগ্রাউন্ড বা ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে ধরা হচ্ছে। এই অঙ্গরাজ্যগুলো এবং এর ইলেক্টোরদের সংখ্যা হচ্ছে- ফ্লোরিডা (২৯), পেনসিলভেনিয়া (২০) এবং ওহাইয়ো (১৮)টি।

এদের মধ্যে ওহাইও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬৪ সাল থেকে এই রাজ্যের ভোটেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্ধারিত হয়ে আসছে। ফলে ওহাইও রাজ্যের দিকে বেশি ঝোঁক প্রার্থীদের।

আজ ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে মার্কিন নাগরিকেরা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ৪৩৫ জন সদস্যকে নির্বাচিত করার জন্য ভোট দেবেন। এরা দুই বছরের মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন।

এছাড়াও ভোটারেরা ১০০ সিনেটরের মধ্যে ৩৪ জনকে নির্বাচিত করতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এরা ছয় বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটারেরা এ দিন ১২টি অঙ্গরাজ্যের গভর্নরকেও নির্বাচিত করবেন।

এআরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।