পদ্মার দুই তীরে চলছে পদ্মা সেতুর বিশাল কর্মযজ্ঞ
শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের পদ্মাতীরে চলছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পুরণের কাজ। খোলোস ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ২৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছে সংশ্লিষ্টরা। এর বেশিরভাগই সংযোগ সড়ক, পূনর্বাসন ও প্রকল্প উন্নয়নের কাজ। শুরু হয়েছে মূল সেতু নির্মাণের কাজও।
২০১৮ সালে পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করবে যানবাহন ও ট্রেন, এই কর্মপরিকল্পনা নিয়েই এগুচ্ছে সবকিছু। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নেরর সুবিধার্থে মূল সেতু, নদীশাসন, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড, পূনর্বাসন কেন্দ্র এবং একটি তদারকি পরামর্শক সংক্রান্ত মোট ৬টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে কনষ্ট্রাকশন ইয়ার্ড ও পূনর্বাসন কেন্দ্রের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ।
সেতুর জাজিরা পয়েন্টে মোট ১০.৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের মধ্যে থাকা ৫টি ব্রিজের কাজ এগিয়ে চলছে, ২০ কালভার্টের মধ্যে ১৫টির কাজ সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ। বাকি ৫টির কাজও শেষের দিকে। এছাড়া এই সড়কে থাকা ৮টি আন্ডারপাসের মধ্যে ৩টির কাজ শেষ করেছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। বাকী ৫টির কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। মূল সেতু নির্মাণ কাজও দৃশ্যমান, শিগগিরই শুরু হবে নদী শাষনের কাজ।
পদ্মা পাড়ের এই বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখে দারুন খুশী দক্ষিণবঙ্গের মানুষ। ৬.১৫ কিরোমিটার সেতু প্রকল্পের জন্য ব্যায় ধরা হয়েছে ২৪.৭৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার শর্তে ১০৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর সংযোগ সড়ক ও টোল প্লাজা নির্মাণ কাজ শুরু করেছে যৌথভাবে আব্দুল মোনেম নিমিটেড ও মালয়েশিয়ার এইচ.সি.এম নামের দুইটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সাড়ে দশ কিলোমিটার সংযোগ সড়কসহ প্রকল্পের সকল কাজ তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে।
পদ্মা সেতু সংলগ্ন নাওডোবা গ্রামের হাবিবুর রহমান জানান, বর্তমান কর্মযঞ্জ দেখে মনে হচ্ছে পদ্মা সেতু দিয়ে আমরা শিগগিরই যাতায়াত করতে পারবো। পদ্মা সেতুর কাজে আমাদের ভিটামাটি নিয়ে নিলেও অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে নেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
পদ্মা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক কর্নেল মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই শেষ হবে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ। সেতু নির্মাণের পূর্বেই স্থানীয়রা যাতে যাতায়াতের জন্য সংযোগ সড়কটি ব্যবহার করতে পারে তার জন্য সেতু তৈরি আগেই সড়কটি উন্মুক্ত করে দেয়ার চিন্তা করছে সরকার।
প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে এসে সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছে, ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করবে সরকার। পদ্মার দুই তীরে বিশ্বের উন্নত শহরের আদলে পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের।
আর মাত্র কয়েক বছর অপেক্ষা। তার পরই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত। দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট পদ্মা সেতু প্রকল্পের উপর কোন প্রভাব ফেলবেনা এবং দ্রুতই পদ্মা সেতু এগিয়ে যাবে কাংখিত স্বপ্ন পুরণের দিকে এমনটাই আশা করছে দক্ষিণবঙ্গের ১৯ জেলার মানুষ।
এমএএস/পিআর