কলকাতায় পূজা হচ্ছে ২২ হাজার মণ্ডপে


প্রকাশিত: ০৮:৪০ এএম, ০৮ অক্টোবর ২০১৬

কলকাতা ও শহরতলি মিলিয়ে এবার দুর্গাপূজা হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার মণ্ডপে। আর রাজ্য জুড়ে এ সংখ্যা প্রায় ১ লাখেরও বেশি। পশ্চিমবাংলার রাজধানী কলকাতায় পূজা হচ্ছে ২২ হাজার মণ্ডপে। তবে এর মধ্যে বাড়ির পূজাও রয়েছে।

শুধু কলকাতা কিংবা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নয়; প্রতিবেশী রাজ্য বিহার, ঝাড়খণ্ড কিংবা উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা, আসাম এবং মেঘালয় রাজ্য মিলিয়ে প্রায় এক লাখ দুর্গা পূজার আয়োজন চলছে এ বছর। বরাবরের মতো শারদীয় উৎসবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় বাড়তি নজরদারিও চলছে সর্বত্র।

কলকাতা শহরে এবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ড্রোন ক্যামেরার পাশাপাশি সিসিটিভির ব্যবহার আগের যে কোন সময়ের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। কলকাতা পুলিশের কুইক্ রেসপন্ডস টিম ছাড়াও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে নিরাপত্তার নজরদারি চালাবে পুলিশ।

কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার জানিয়েছেন, পুলিশি নিরাপত্তার সঙ্গে দশনার্থীদের সতর্ক থাকতে হবে। সন্দেহভাজন কোনো কিছু দেখলেই কলকাতা পুলিশের ১০০ নম্বরে ফোন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে সাদা পোশাকের পুলিশ ছাড়াও এবার ভিড়ে মিশে থাকবেন সুন্দরী নারী পুলিশও। জঙ্গি ছাড়াও ইভটিজার ধরতে এসব নারী পুলিশকে মূলত ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

রাজধানী কলকাতায় ১৪ হাজার পুলিশ এবং ৬ হাজার সিভিক পুলিশ নিযুক্ত থাকবেন নিরাপত্তার কাজে। এছাড়াও রাজ্য ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও সক্রিয় থাকবেন ২৪ ঘণ্টা। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতাই মূলত দুর্গাপূজার জন্য প্রসিদ্ধ এবং দেশ বিদেশে পরিচিত। রাজ্যবাসীর নজরের সঙ্গে পূজার এ চার দিন অন্য রাজ্য এমনকি প্রতিবেশি বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর সংখ্যক পর্যটক আসেন এই শহরে। কলকাতা ছাড়াও মেঘালায়ের রাজধানী শিলং এবং ত্রিপুরার আগরতলাতেই দুর্গাপূজার সাক্ষী হতে বাংলাদেশ থেকে দল বেধে পর্যটক আসেন, ঘুরে বেড়ান।

কলকাতার দেশপ্রিয় পার্ক এবার হাজার হাতের প্রতিমা গড়ে আলোচনায় রয়েছে। গত বছর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুর্গা করে আলোচিত হলেও ওই দুর্গা প্রতিমা দেখতে উৎসুক দশনার্থীদের ভিড়ে কলকাতার ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল পঞ্চমীর সন্ধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে ওই পূজা বন্ধ করতে হয়েছিল উদ্যোক্তাদের। এবার অবশ্যই তারা আর সেই রকম ঝুঁকি নেয়নি। হাজার হাতের দুর্গা দেখতেই ভিড় শুরু হয় চতুর্থীর সন্ধ্যা থেকে।

এবার তেলেঙ্গানা বাজারের পূজার থিমের কারণেই পঞ্চমী থেকেই ভিড় সেখানে। বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রাকে পূজা মণ্ডপে কারুকাজের মধ্যদিয়ে তুলে আনা হয়েছে।

মধ্য কলকাতার বেনিয়াপুকুরের ৬০-৬১ পলি­র দুর্গাপূজার মণ্ডপ তৈরি হয়েছে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী মাটির ভাড় দিয়ে। প্রায় আড়াই লক্ষ ভাড় দিয়ে ওই মন্দির তৈরি করা হয় সাড়ে তিন মাস ধরে। ভাড়ের চা খাওয়ায় অভ্যস্ত কলকাতাবাসীর কাছে এবার ভাড়ের মণ্ডপ দেখার সুযোগ এসেছে; তাই এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাইছেন না দশনার্থীরা।

কলকাতার অদূরে রাজারহাটের স্নো পার্কে প্রতিমা গড়া হয়েছে বরফ দিয়ে। মাইনাস ছয় ডিগ্রি তামমাত্রার একটি বিশাল অডিটেরিয়াম তৈরি করে সেখানে দেবী দুর্গার সঙ্গে রয়েছেন তার গোটা পরিবার। দশনার্থীদের অবশ্য ওই মন্দিরে ঢুকতে ভাড়া করে শীতের পোশাক গায়ে চড়াতে হচ্ছে।

কলকাতায় বরাবরই ভিভিআইপিদের পূজা মন্ডপ নিয়ে দশনার্থীদের বাড়তি আগ্রহ থাকে। বিশেষ করে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ক্লাব একডালিয়ার পূজা, যুব-কল্যাণ মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাসের পূজা সুরচি সংঘ, পৌর উন্নয়ন বিষয়কমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের পূজা চেতলা আগ্রনী এবং শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতরা উদয়ন সংঘের পূজা নিয়ে তুমুল চর্চা চলছে সবখানে।

তবে রাজনীতিকদের পূজার চেয়ে এবার আলোচনায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মহালয়ার সন্ধ্যা (৩০ সেপ্টেম্বর) থেকে মহাষষ্ঠী (৭ অক্টোবর) পর্যন্ত এক সপ্তাহে দক্ষিণ থেকে উত্তর, পূর্ব থেকে পশ্চিম কলকাতায় প্রায় ৭০ টি পূজা মন্ডপের উদ্বোধন করেন মমতা ব্যানার্জি। নদীয়ার তৈরি করা মমতার আদলে তৈরি দেবী দুর্গার দশ হাতের মতোই বাস্তবের মমতা ব্যানার্জি এই কাজ করেছেন বলে অনেকেই হাসির ছলে বলছেন।

কলকাতার পূজা মণ্ডপ উদ্বোধনের আগে মুম্বাইয়ের তারকাদের ভিড় চোখে পড়তো। তবে ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতার আসার পর মুম্বাইয়ের সেলিব্রেটিরা এখন আর তেমন সুবিধা করতে পারছেন না। কেননা অধিকাংশ বড় পূজার উদ্বোধন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

এদিকে, ত্রিপুরার আগতলায় ছাত্রবন্ধু ক্লাবে এবার ভারতের সবচেয়ে মুল্যবান দুর্গা প্রতিমার পূজা হচ্ছে। প্রায় চার কোটি রুপির সোনা ও হীরা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দেবী দুর্গাসহ তার পরিবারের চার সদস্যকেও। ক্লাবের সম্পাদক অশোক ঘোষ জানান, গত বছর কলকাতায় ৩ কোটি রুপির হীরা দিয়ে শ্রীভূমের দুর্গা পূজা হয়েছিল। এবার ছাত্রবন্ধু ক্লাব ৪ কোটি রুপির খরচ করে সেই রেকর্ড ছাড়াল। কলকাতার একটি নামী অলঙ্কার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সোনা-হীরার দুর্গার স্পন্সর করেছে বলেও জানান তিনি। কলকাতার হাবড়ার শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পোদ্দার প্রায় সাড়ে চার মাস ধরে ওই প্রতিমা গড়েছেন।

এসআইএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।