আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে সমাপ্ত হিলারি-ট্রাম্পের প্রথম বিতর্ক


প্রকাশিত: ০৪:৪০ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে এই বিতর্ক শুরু হয়। ৯০ মিনিটের ওই বিতর্কে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেছেন এনবিসি টিভির উপস্থাপক লেস্টর হল্ট। নিউইয়র্কের হেম্পস্টেড শহরের হফস্ট্রা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটনের ওই বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের বিতর্কের ৯০ মিনিট সময়কে প্রায় ১৫ মিনিট করে ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য বিতার্কিকরা দুই মিনিট করে সময় পেয়েছেন।

এই বিতর্কের এক সপ্তাহ আগেই বিতর্কের বিষয়বস্তু ঘোষণা করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতি, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা এবং নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়গুলো বিতর্কে স্থান পেয়েছে।

হিলারি ও ট্রাম্পের এই বিতর্কটি ১৯৮০ সালে কার্টার ও রিগানের পর মার্কিন টেলিভিশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দেখা বিতর্ক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিতর্কটি প্রায় ১০ কোটি মানুষ দেখেছে।
 
hillary

বিতর্ক-পূর্ববর্তী ম্যাকক্লাচি ম্যারিস্টের জনমত জরিপ অনুযায়ী, ভোটারদের মধ্যে হিলারিকে সমর্থন জানিয়েছে ৪৫ শতাংশ আর ট্রাম্পের সমর্থনে রয়েছে ৩৯ শতাংশ মানুষ। বেশির ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারই হিলারির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। ট্রাম্পের পক্ষে রয়েছেন মাত্র ৩ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার।

অর্থনীতি, হিলারির বিতর্কিত ই-মেইল, ট্রাম্পের ট্যাংক রিটার্ন, আইএস ইত্যাদি প্রসঙ্গ নিয়ে তুমুল বিতর্কে লিপ্ত হয়েছেন এই দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। সে সময় দু’পক্ষের সমর্থকরা গভীর উত্তেজনায় ওই বিতর্ক উপভোগ করেছেন।

সমর্থকদের এক প্রশ্নে জবাবে বেশ বিনয়ী আচরণ করতে দেখা গেছে ট্রাম্পকে। অবশেষে ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে, হিলারি নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি হিলারিকে সমর্থন করবেন।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার মত নন হিলারি ক্লিনটন। তাকে দেখতে প্রেসিডেন্টের মত মনে হয় না। কেননা হিলারির সেরকম দৃঢ় মনোবল নেই বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়ে হিলারি বলেন, ‘আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন ১১২টি দেশে ভ্রমণ করেছি, শান্তি চুক্তি নিয়ে কাজ করেছি, এমনও হয়েছে যে আমি টানা ১১ ঘণ্টা কংগ্রেসের বৈঠকে অংশ নিয়েছি। আমার মনোবল সম্পর্কে তার সংশয় কি করে আসে? এ বিষয়ে তিনি আমার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’

হিলারির এমন জবাবে ট্রাম্প ফের বলেন, হিলারির অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে সেগুলো খুবই বাজে অভিজ্ঞতা।

বিতর্কে হিলারি ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, এই ব্যক্তি নারীদের শূকর, কুকুর এবং বোকা বলে ডাকেন। যেখানে প্রতিটি দেশে সদ্য সন্তান জন্মদানকারী মাকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ দেয়া হয়। সেখানে তার ধারণা নারীরা গর্ভবতী হলে তা নিয়োগ কর্তাদের জন্য বেশ অসুবিধার। তার মানে এমন একজন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হলে গর্ভবতী নারীদের চরম বিপদে পড়তে হবে।

তবে ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে বলা হিলারির এসব মন্তব্য অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমি এ ধরনের কোনো কিছুই বলিনি। আমি শুধু হিলারি এবং তার পরিবারের বিপক্ষে কিছু কঠিন কথা বলেছি।

hillary

ট্রাম্প হিলারিকে আক্রমণ করে বলেন, আপনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের জন্ম হয়। এখন তারা ৩০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন আপনি তাদের কীভাবে থামাবেন? আমার মনে হয় না আপনি সেটা পারবেন। আমি ইরাক যুদ্ধকেও কখনো সমর্থন করিনি। তবে এ ধরনের সহিংসতা আপনিই পছন্দ করেন।

ট্রাম্প বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যা হচ্ছে তা ভয়ানক। এগুলো নির্বোধদের কাজ। হিলারির চাইতে আমার বিচারবুদ্ধি বেশি। তার থেকে আমার মানসিক সক্ষমতাও বেশি। বিজয়ী হওয়ার মত সব রকমের ক্ষমতা আমার রয়েছে।

এদিকে ট্রাম্পকে আক্রমণ করে হিলারি বলেন, তিনি কেন তার ট্যাক্স রিটার্ন প্রকাশ করলেন না? তিনি কি কিছু লুকাতে চাইছেন? 
 
হিলারি বলেন, তিনি জানেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে খুব পছন্দ করেন। তিনি আরো বলেন, আমি রীতিমত অবাক হয়েছি যে জনসম্মুখে তিনি আমার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার জন্য পুতিনকে আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, এর আগে ক্লিনটনের মুছে ফেলা ই-মেইলগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য রাশিয়াকে আহ্বান জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। তার ওই বক্তব্যের কথা উল্লেখ করেই এমন মন্তব্য করেন হিলারি।

তবে ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহারের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন হিলারি। তিনি স্বীকার করেছেন সেটা তার ভুল ছিল।  

আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে সমাপ্ত হয়েছে হিলারি-ট্রাম্পের প্রথম বিতর্কটি। তারা আরো দুটি বিতর্কে অংশ নেবেন।



টিটিএন/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।