ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পক্ষে নন মোদি
লোকসভার ভোটের আগে পাকিস্তান নিয়ে লাগাতার গর্জন করেছেন মোদি। জঙ্গি হামলার পরে মনমোহন সিং সরকারকে উপহাস করে বলেছেন, পাকিস্তানকে প্রেমপত্র নয়, তাদের ভাষাতেই কড়া জবাব দিতে হবে। ফলে পঠানকোট, উরির ঘটনার পরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, কড়া জবাবটা তাহলে কি?
তবে কোঝিকোড়ে দলীয় সভায় নরেন্দ্র মোদিকে কিছুটা নরম সুরেই কথা বলতে শোনা গেল মোদিকে। তিনি বলেছেন, তার সরকার পাকিস্তানকে কূটনৈতিক ভাবে একঘরে করার পথেই হাঁটবে। ঠিক যে পথে হাঁটত আগের কংগ্রেস সরকার।
উরির সেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলায় ১৮ সেনার মৃত্যুর পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি প্রবল হয়েছে গোটা দেশে। বিজেপি এবং সংঘ পরিবারের একাংশও সেই পথে চলার পক্ষপাতী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে থাকা মোদি বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন, জনসভায় দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গরম গরম কথা বলা এক জিনিস আর ময়দানে নেমে তাদের মোকাবেলা করা আর এক জিনিস।
উরির ঘটনার পরেই মোদি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে সামরিক কর্মকর্তারা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, দু’টি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ কোনও অবস্থাতেই ভালো সিদ্ধান্ত নয়। সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে আমেরিকা, ব্রিটেন বা জার্মানির মতো শক্তিধর দেশ যতই ভারতের পাশে দাঁড়াক, যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে তারাই বাধা দেবে। এমনকী সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে জঙ্গি ঘাঁটি ভেঙে দিয়ে আসাও সম্ভব নয় বলে মোদিকে জানিয়ে দিয়েছেন সেনাকর্মকর্তারা।
দিল্লিতে সেনাকর্মকর্তাদের সঙ্গে আরও একটি বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর কোঝিকোড়ে বিজেপির জাতীয় পরিষদের বৈঠক উপলক্ষে জনসভায় তিনি বলেছেন, শান্তি ও শুভবুদ্ধিই কেবল আমাদের ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করতে পারে। যুদ্ধে দুর্দশা বাড়ে।
মোদির এই কথা নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে। মোদি বিরোধীদের বক্তব্য, যুদ্ধ যে কোনও সমাধান নয় সেটা তো জানা কথাই। তাহলে এত দিন কেন যুদ্ধের সম্ভাবনার কথা উস্কে দিয়েছেন মোদি? হতাশা চাপা থাকছে না বিজেপির মধ্যেও। তবে সরকারিভাবে মোদির দল অবশ্য বলছে, প্রকৃত রাষ্ট্রনেতার মতোই আচরণ করেছেন মোদি।
মোদি এখন আপ্রাণ চেষ্টা করছেন কৌশলে যতটা সম্ভব নিজের অবস্থান রক্ষা করার। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, পাকিস্তানকে গোটা বিশ্বে এক ঘরে করে তিনি সেনা হত্যার বদলা নেবেন। অন্যদিকে, আবার সে দেশের শাসনকর্তাদের এড়িয়ে সরাসরি আম-জনতার সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির চেষ্টা করছেন তিনি। যার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের নেতারা সন্ত্রাসবাদীদের লিখে দেওয়া বক্তৃতা পড়েন, বিশ্ব তাদের কাছ থেকে কিছু প্রত্যাশা করে না। এর পরেই পাক জনতার উদ্দেশে মোদী আহ্বান করে বলেছেন, নেতাদের প্রশ্ন করুন, ভারত গোটা বিশ্বে সফটঅয়্যার রফতানি করে আর আপনাদের দেশ কেন সন্ত্রাস?
কিন্তু মোদির এই কৌশল ঘিরেও প্রশ্ন উঠেছে। কংগ্রেস নেতা রেণুকা চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তো পাকিস্তানের বিরোধী দলনেতার মতো কথা বলছেন! পাকিস্তানের জনতাকে লড়িয়ে দিতে চাইছেন পাক সরকারের বিরুদ্ধে। নিজের দায় এড়াতে এ কী কৌশল?’
টিটিএন/এমএস