‘বিদেশি মদদে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদের প্রধান শিকার পাকিস্তান’


প্রকাশিত: ০৫:৫০ এএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

‘পাকিস্তান নিজেই বিদেশি মদদে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদের প্রধান শিকার। বহু সেনা প্রাণ হারিয়েছেন সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে। বাইরের দেশ থেকে এই সন্ত্রাসে উসকানি দেওয়ার পাশাপাশি এর অর্থও যোগানো হয়।’ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভাষণে এমনই অভিযোগ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ।

কাশ্মীর নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হবার আশংকাকে বিশ্ব নেতারা উপেক্ষা করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার দেশ ভারতের সঙ্গে সংঘাতের অবসান চায়। তবে কাশ্মির সংকট জিইয়ে রেখে দুই দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পাক প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ভারত বিপুল অস্ত্রভান্ডার গড়ে তুলছে। সেক্ষেত্রে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি ঠেকাতে পাকিস্তান প্রয়োজনীয় সব কিছুই করবে বলে জানান তিনি।

দুই চির-বৈরী দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে গত সপ্তাহের জঙ্গি হামলায় ১৮ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর।

ভারত এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে, এমন জল্পনা চলছে পাকিস্তানের গণমাধ্যমে। এরকম আশংকা থেকে পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ দেশটির উত্তরাঞ্চলের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।

এমন এক প্রেক্ষাপটে নিউইয়র্কে চলা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তিনি এসব কথা বললেন।

পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দেশ ঐ এলাকায় কৌশলগত স্থিতিবস্থা আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভারতের সঙ্গে অস্ত্র প্রতিযোগিতা চায় না পাকিস্তান।

জাতিসংঘ ভাষণে নওয়াজ বলেন, ‘জঙ্গিবাদ এখন একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। একে বিস্তৃত পরিসরে বিবেচনায় নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকেও এর আওতায় বিচার করতে হবে।’

‘জার্ব ই আজাব’ অপারেশনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় অব্যাহত ভূমিকা রেখে যাচ্ছে পাকিস্তান।

কাশ্মিরের সেনা ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার জন্য ‘পাকিস্তান দায়ী’ ভারতের এমন দাবি নাকচ করে পাকিস্তান পাল্টা অভিযোগ করেছে, কাশ্মীরে তীব্র সহিংস গণবিক্ষোভ থেকে দৃষ্টি ফেরানোর চেষ্টা করছে ভারত।

নওয়াজ অভিযোগ করেন, ৫ লাখেরও বেশি সেনা দিয়ে ভারত জোর করে কাশ্মির দখল করে রেখেছে, ভারত সেখানে নির্মম নির্যাতন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার লড়াই শুরু করেছে কাশ্মিরের তরুণরা।

বক্তৃতায় কাশ্মির প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে নওয়াজ শরীফ সেখানে মানবাধিকার হরণ এবং ভারতের ভূমিকা খতিয়ে দেখার আহ্বানও জানান।

একই সঙ্গে কাশ্মিরে আটক সকল রাজবন্দীর মুক্তি এবং দ্রুততার সঙ্গে সেনা প্রত্যাহারও দাবি জানান তিনি।

পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবকিছুর পরও ভারতের সঙ্গে শর্তহীন সংলাপে পাকিস্তান তৈরী রয়েছে। তবে তিনি অভিযোগ করেন আলোচনায় বসার মত অগ্রহণযোগ্য শর্ত দিয়েছে ভারত।

তিনি বলেন ‘সংঘাত দক্ষিণ এশিয়ার গন্তব্য হতে পারে না। পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে শান্তি চায়। তবে কাশ্মির সংকটের নিরসন ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা অসম্ভব।’

হিজবুল মুজাহিদিন সংগঠনের নিহত নেতা বুরহান ওয়ানিকে নিয়ে জাতিসংঘ অধিবেশনে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুরহানের মৃত্যু কাশ্মীর আন্দোলনকারীদের প্রেরণা জুগিয়েছে।

এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, অন্যায়ভাবে বুরহানকে হত্যা করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন নওয়াজ শরীফ।

উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর (রবিবার) ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ভারি অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত একদল লোক কাশ্মিরের উরিতে লাইন অব কন্ট্রোলের কাছে সামরিক বাহিনীর একটি প্রশাসনিক স্থাপনায় হামলায় চালায়। ওই হামলায় ১৭ সেনা সদস্য ও ৪ হামলাকারী নিহত হন। এ  হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মোহাম্মদকেই সন্দেহ করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।