বৈশ্বিক সন্ত্রাসের শিকার মুসলমানরা


প্রকাশিত: ১০:৩০ এএম, ২০ জানুয়ারি ২০১৫

ফরাসি ব্যঙ্গাত্মক সাময়িকী শার্লি এবদুর অফিসে হামলার মতো বড় ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব এখন ইসলামপন্থীদের হামলার বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক। কিন্তু প্যারিস হত্যাকাণ্ডের পর সেখানকার একজন ইমাম বিবিসিকে বলেছেন, বিশ্বে সংঘটিত সন্ত্রাসী ঘটনাগুলোর যারা শিকার হচ্ছেন, তাদের ৯৫ শতাংশই মুসলিম।

কিন্তু বিশ্বের বড় সন্ত্রাসী হামলাগুলো যেমন শার্লি এবদুতে হামলা, লন্ডনে ৭/৭, মাদ্রিদে ট্রেনে হামলা এবং অবশ্যই ৯/১১-এর কথা চিন্তা করলে প্যারিসের ইমাম হাসান শাগউমির এ দাবি হয়তো পশ্চিমাদের অবাকই করবে।

মূলত দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই এসব হামলাগুলো করা হয়েছিল এবং হামলাকারীরা সফলও হয়েছিল। সেখানে আক্রান্তদের বেশির ভাগই মুসলিম ছিল না। তাহলে ৯৫ শতাংশের এ দাবি কতটা সত্যি?

বিবিসির একটি অনুষ্ঠানে এ বিষয়টি দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, ৯৫ শতাংশের এ সংখ্যাটি মূলত মার্কিন সরকারের একটি ডকুমেন্ট থেকে এসেছে, যেটি ছিল তাদের ন্যাশনাল কাউন্টার টেরোরিজম সেন্টার ২০১১ সালের রিপোর্ট।

এতে বলা হয়েছে, যেখানে ধর্মসংক্রান্ত সন্ত্রাসী ঘটনাগুলো চিহ্নিত করা গেছে সেখানে গত পাঁচ বছরে ৮২ থেকে ৯৭ শতাংশ সন্ত্রাস সংক্রান্ত মৃত্যুগুলোর মধ্যে মুসলিমরাই ভুক্তভোগী হয়েছে।

বিষয়টি হলো ধর্মসংক্রান্ত সন্ত্রাস। বৈশ্বিক সন্ত্রাস বা গ্লোবাল টেররিজম নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলার আগে দেখতে হবে বেশির ভাগ ঘটনার সাথে ধর্মের সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না।

ম্যারিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির দি গ্লোবাল টেররিজম ডেটাবেজ এখন যুক্তরাষ্ট্রের এ সংক্রান্ত তথ্যের অফিসিয়াল উৎস। এ ডেটাবেজটির সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে সন্ত্রাসকে সংজ্ঞায়িত করার। পরিকল্পিত, সহিংস ও হুমকি এবং সরকার করছে না এমন ঘটনাগুলো সেখানে স্থান পায়। এতে আরো বিবেচনা করা হয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা ধর্মীয় লক্ষ্য অর্থাৎ শুধু ভিকটিমই নন, যার উদ্দেশ্য থাকে আরো বৃহৎ পরিসরে বার্তা দেয়া।

যদিও ম্যারিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির এ বিষয়ক টিমটি মূলত মিডিয়া রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে থাকে এবং তারা প্রায়ই ভিকটিমদের ধর্ম বিষয়ক তথ্য রাখে না। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সেখানে পাওয়া যায়। যেগুলো অতটা ধর্মের ওপর নয়, বরং ভৌগোলিক।

২০০৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলাগুলো মধ্যে ৫০ শতাংশ এবং ৬০ শতাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তিনটি দেশে- ইরাক, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে। ম্যারিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির টিমের প্রধান এরিন মিলার বলেন, এগুলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। আমরা জানি ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ হামলা ছিল অভ্যন্তরীণ।

যেহেতু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে হয়েছে, সেহেতু মোটামুটিভাবে হামলাকারী ও হামলার শিকার উভয়ই মুসলিম। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ১০ বছরে ব্রিটেনে চার শ’ হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার বেশির ভাগই উত্তর আয়ারল্যান্ডে হয়েছে। এর বেশির ভাগেই কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্রে ১৩১টি ঘটনার মধ্যে প্রায় ২০টিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আর ফ্রান্সে ৪৭টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ইরাকে প্রায় ১২ হাজার হামলার ঘটনায় আট হাজার ঘটনাতেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এরিন মিলার বলছেন, এসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, ৯৫ শতাংশ সংখ্যাটি কিছুটা বেশি, কিন্তু আনুমানিক সঠিক।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।