এরদোয়ানের রাশিয়া সফর : কোন পথে বিশ্ব রাজনীতি?


প্রকাশিত: ০৩:৩২ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০১৬

রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গে প্রতিপক্ষ ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। গত নভেম্বরে সিরিয়ার আকাশে রাশিয়ার যুদ্ধবিমানে তুরস্কের সেনারা গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করার পর এই প্রথম দুই শক্তিশালী নেতা সাক্ষাৎ করেছেন মঙ্গলবার।

এরদোয়ানের রাশিয়া সফর ইতোমধ্যে বিশ্ব রাজনীতির গতি নিয়ে আলোচনায় ঝড় তুলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়েও বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে দেখা দিতে পারে নতুন মোড়।

নভেম্বরে সিরিয়ার আকাশে তুরস্কের বিমান ভূপাতিত করার ঘটনায় রাশিয়ার দুই সেনার প্রাণহানি ঘটে। দুই দেশের মাঝে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তুরস্কের ওপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। শুধু তাই নয়, ক্রেমলিন এ ঘটনার কড়া প্রতিশোধ নেবে বলেও ঘোষণা দেয়। সেই সময় পুতিন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে বলেন, আজকের এই ক্ষতি সন্ত্রাসের সহযোগীদের দ্বারা পেছন থেকে ছুরিকাঘাত। তিনি বলেন, তুরস্কের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। পুতিন যে সে সময় মজা করেই এসব কথা বলেননি তা এখন দৃশ্যমান।

sirya

পরবর্তীতে আঙ্কারার সঙ্গে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা, তুরস্ক থেকে খাদ্য আমদানি বন্ধ, তুরস্ক ভ্রমণে রুশ নাগরিকদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ, রাশিয়া থেকে তুরস্কে বিমান চলাচল স্থগিত করেন পুতিন। রুশ শাসকের এসব পদক্ষেপ আঙ্কারার অর্থনীতিতে মারাত্মক আঘাত হানে।

তুরস্কের ওপর খড়্গ হস্ত হয়ে ওঠে ক্রেমলিন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা গোয়েন্দা বিমান থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। যেখানে দাবি করা হয়, সিরিয়া এবং ইরাকে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে জাহাজে তেল আমদানি করছে তুরস্ক।

সে সময় মস্কোর কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের পরিবারের সদস্যরা নিবিড়ভাবে এই অবৈধ ব্যবসায় জড়িত এবং তারা এর মাধ্যমে লাভবান হচ্ছেন। তবে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এ অভিযোগ জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেন।

putin

কয়েক মাস পরও এটি মনে হয় যে, পুতিন ও এরদোয়ানের এ তিক্ততা কখনোই শেষ হবে না : সিরিয়ার ওপর আধিপত্যের লড়াইয়ে দুই কট্টরপন্থীর স্বৈরাচারী ইচ্ছার লড়াই।   

কিন্তু হঠাৎ দুই দেশের সম্পর্কে কিছু পরিবর্তন লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। অপ্রত্যাশিত হলেও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের ইচ্ছের কথা জানিয়ে ক্রেমলিনে চিঠি লেখে। চিঠিতে ভূপাতিত বিমানের পাইলটের পরিবারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তুরস্ক। লন্ডনের চাথাম হাউজের থিংক ট্যাঙ্ক ও তুরস্ক বিশেষজ্ঞ ফাদি হাকুরা মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, হতাশা থেকেই তুরস্ক রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের চেষ্টা শুরু করে।  

তিনি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করা প্রয়োজন। তুরস্কের পর্যটন শিল্পের গতি ফিরিয়ে আনতে রাশিয়ান পর্যটক দরকার। এ ছাড়াও সিরিয়ায় হারানো প্রভাব আরো একবার পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করতে তুরস্কের জন্য রাশিয়াকে প্রয়োজন। এসবের জন্য কাজ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। রাশিয়া সফরের আগে এরদোয়ান এক বিবৃতিতে বলেন, রাশিয়াকে ছাড়া সিরিয়া সংকটের সমাধান হতে পারে না। আমরা একমাত্র রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে সিরিয়া সংকটের সমাধান করতে পারি।

russia 
এরদোয়ানের চিঠি দেয়ার একদিন পর দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কৃষ্ণ সাগরের সচি রিসোর্টে বৈঠকে বসেন। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন পুতিন। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হচ্ছে।  

এরপর পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নেয়। অপ্রত্যাশিত হলেও দুই দেশের সম্পর্ক নতুন তাৎপর্যে রূপ নেয়। গত ১৫ জুলাই তুরস্কের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর বিরোধীদের ওপর ব্যাপক মাত্রায় নিপীড়ন চালানোর সুযোগ পান এরদোয়ান। অনেক তুর্কি মনে করেন, তাদের পশ্চিমা মিত্ররা অভ্যুত্থান ও পরবর্তী কর্মকাণ্ডে নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং গণ-গ্রেফতারের বিরুদ্ধে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর অবস্থান ও পদক্ষেপ প্রশ্নবিদ্ধ। পশ্চিমারা অভ্যুত্থানকারীদের সমর্থন জানালেও পুতিন এরদোয়ানকে ফোন করে পাশে থাকার কথা জানান।

তবে তুরস্কের কর্মকর্তারা যে পশ্চিমাদের থেকে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে যাচ্ছেন সে অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তারা। তবে রাশিয়ায় এরদোয়ানের আন্তরিক সফর সিরিয়া এবং ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে তাদের মিত্র তুরস্ক। মস্কোয় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা আলেক্সান্ডার শিমুলিন বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব এবং ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিভক্তি তৈরি করাই হতে পারে রাশিয়ার একমাত্র এবং পরিকল্পিত একটি উদ্দেশ্য।

সূত্র : সিএনএন, দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট, বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান।

এসআইএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।