চাকরি হারাচ্ছেন মোটারা


প্রকাশিত: ০৪:২৫ এএম, ১৮ জানুয়ারি ২০১৫

চাকরি হারাচ্ছেন মোটারা। তবে দেশে নয় ইউরোপে। সম্প্রতি ইউরোপের মানুষের মধ্যে মুটিয়ে যাওয়ার মাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলেছে এবং এভাবে মুটিয়ে যাওয়ায় মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে। বর্তমানে ইউরোপে অতিরিক্ত মেদ-ভুঁড়িবিশিষ্ট লোকদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হচ্ছে।

ব্রিটিশ ওবেসিটি সোসাইটির জেন ডেভিড অ্যালমন্ড বলেন, অফিসে স্থূলদেহী কর্মীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে তাদের বসার জন্য প্রয়োজন দেখা দিয়েছে বড় মাপের চেয়ার, চওড়া টেবিল, ঘোরাফেরার জন্য অতিরিক্ত খোলামেলা জায়গা। আমার মনে হচ্ছে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে যাচ্ছে। তাই এখনই সময় এসেছে এ বিষয়ে মানুষের সতর্ক হওয়ার।

বিচারকরা বলেন, মুটিয়ে যাওয়া মানেই দুর্বলতা নয়। তবে স্থূলতার কারণে কেউ যদি দীর্ঘদিন শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন, কাজ করতে না পারেন তখন তার ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নেয়া যেতে পারে।

কার্সস্টেন কালটফ্ট একজন স্থূলদেহী। ওজন প্রায় ১৬০ কেজি। চাকরি করতেন একটি প্রতিষ্ঠানে। মোটা হওয়ার কারণে তার পক্ষে স্বাভাবিক কাজকর্ম করা সম্ভব হচ্ছিল না। হাঁটাচলা করতে তার কষ্ট হতো। এই অভিযোগে ১৫ বছর চাকরি করার পর চার বছর আগে মালিক তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন।

কালটফ্টের অভিযোগ, অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়ার জন্যই মালিক তাকে চাকরি থেকে বাদ দিয়েছেন। সেজন্য তিনি মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। কালটফ্ট বিবিসিকে জানান, আমি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি সেখানে আমার কাজ করতে হয় শিশুদের সঙ্গে। আমি এতটাই স্থূল যে, আমার পক্ষে নিচু হয়ে শিশুদের জুতা পরিয়ে দেয়া, জুতার ফিতা বেঁধে দেয়া সম্ভব নয়। তাই মেঝেতে বসেই তাদের সঙ্গে খেলি, কাজ করি। এতে আমার কোনো অসুবিধা হয় না। নিজেকে আমি আদৌ কাজের অযোগ্য মনে করি না।

তিনি আরও বলেন, একজন লোক মোটা এ অভিযোগে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে, বিষয়টি আমি মানতেই পারি না। যদি তিনি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেন, তো অসুবিধা কোথায়! তিনি মামলা করায় ডেনিশ আদালত ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিজ (ইসিজে) রুল জারি করেন, মুটিয়ে যাওয়ায় তিনি কীভাবে কাজ করতে অযোগ্য হলেন তার কারণ দর্শাতে।

রুলে আরও বলা হয়, অতিরিক্ত মোটা হওয়ার জন্য একজন কর্মী যদি কর্মক্ষেত্রে অন্যদের মতো সমান কাজ করতে না পারেন তখন মুটিয়ে যাওয়াকেই তার কর্মক্ষমতা নষ্টের কারণ বলে মনে করা হবে। ইসিজের এ আদেশ ইইউ সদস্যভুক্ত সব দেশের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ আদেশ জারি করা হয়েছে ইউরোপের মালিকদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে। এ বিচারের সঙ্গে মানুষের বডি ম্যাস ইনডেক্স এবং তার মুটিয়ে যাওয়ার মধ্যে সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই। কিন্তু এটি খুবই শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ যে, একজন স্থূলকর্মীকে তার ওজন তাকে কাজ করতে বাধা দান করে। এভাবে কৌশলে কর্মস্থলকে মোটাশূন্য করা হচ্ছে।

মোটাসোটা মানুষকে নিয়ে মহা সমস্যা। তাদের জন্য ব্যবস্থা করতে হবে বড় চেয়ার, বিশেষ গাড়ি এবং কেউ যেন তাকে বিরক্ত না করে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। দোকান, সিনেমা হল সর্বত্র বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে। বড় চেয়ার না হলে তারা বসতে পারেন না। খোলামেলা জায়গা না হলে হাঁটতে-চলতে পারেন না। সাধারণ গাড়ির সিটে তারা বসতে পারেন না। তাদের কথা মাথায় রেখে প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল ক্লাবের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, দু’সিটকে এক সিট করার। কিন্তু নন-লীগ ক্লাবের পক্ষ থেকে তেমন আয়োজন নেয়া হচ্ছে না। আরও সহজভাবে বলতে হয় স্থূলতা দিনে দিনে জটিল সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ব্রিটিশ ওবেসিটি সোসাইটির চেয়ারপারসন জেন ডেভিড অ্যালমন্ড বলেন, স্থূলতা কর্ম অক্ষমতার আলাদা কোনো শ্রেণী নয়। তিনি বিবিসিকে বলেন, আমি মনে করি মালিকপক্ষ যদি তড়িঘড়ি করে অফিসের চেয়ার-টেবিলের সাইজ বাড়ায় এবং স্থূলদের জন্য অতিরিক্ত খোলা জায়গা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় তবে সেটা আরও বাজে অবস্থার সৃষ্টি করবে। তারচেয়ে বরং অফিসের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন আনাই ভালো। স্থূলতা যে কর্মহীনতার কারণ তা বলা যাবে না। তবে এর জন্য কর্মক্ষেত্রে যে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। যুক্তরাজ্যের প্রতি চারজনের মধ্যে একজন স্থূলদেহের অধিকারী। তাদের বসার চেয়ার, ব্যবহারের টেবিল, ঘরের আসবাবপত্র, বাথরুমের দরজা সবকিছুই নতুন করে বানানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে গিয়ে বসতে অসুবিধা হচ্ছে, সিনেমা দেখতে হলে গিয়ে বসতে পারছেন না। খোলামেলা জায়গার অভাবে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে পারেন না। এসব সমস্যায় পড়েছেন যুক্তরাজ্যের ২৫ ভাগ মানুষ। তাদের দেখভালের জন্য কাজ করছে ব্রিটিশ ওবেসিটি সোসাইটি।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।