কাতারে নতুন শ্রম আইনের খসড়া চূড়ান্ত


প্রকাশিত: ০৪:২০ এএম, ০৪ আগস্ট ২০১৬

বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত নিজেদের শ্রম আইনে বড় ধরনের সংশোধনী এনেছে কাতার সরকার। নতুন শ্রম আইনের সব চুক্তিনামা চূড়ান্ত করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়। সংশোধিত নতুন শ্রম আইন যা আগামী অক্টোরব মাস থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। বুধবার শ্রম মন্ত্রণালয় নতুন শ্রম চুক্তিনামা কিভাবে কার্যকর হবে সেই বিষয়টির খসড়া চূড়ান্ত করেছে।

গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর বহু প্রতিক্ষিত স্পন্সর চেঞ্জ আইন-এর অনুমোদন দেয় কাতারের কেবিনেট। স্পন্সর চেঞ্জ আইনটি কাতার সরকার গত বছর ১৪ ডিসেম্বর অফিসিয়েল গেজেট আকারে প্রকাশ করে।

গেজেটে বলা হয়েছে, চলতি বছরে ১৪ ডিসেম্বর আইনটি কার্যকর হবে। স্পন্সর চেঞ্জ আইনটি দুই মাস এগিয়ে অক্টোবর থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে। যাদের হাউস তথা ঘরের ভিসা আছে তারা এই আইনের আওতার বাহিরে থাকবে। তবে অক্টোবরে শ্রম আইন কার্যকর হলে কাতার ছেড়ে গেলে ঘরের ভিসার লোক পরের দিন নতুন ভিসা নিয়ে কাতারে প্রবেশ করতে পারবেন। কাতার ছেড়ে যাওয়া বা আবার নতুন করে কাতারে প্রবেশের ২ বছরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। অক্টোবর থেকে কেউ কাতার ছেড়ে গেলে, পরের দিন নতুন ভিসা নিয়ে কাতারে প্রবেশ করতে পারবেন।

katerকাতারের মিনিস্ট্রি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ডেভোলপমেন্ট, লেবার অ্যান্ড সোস্যাল অ্যাফেয়ার্স নতুন আইনকে কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তারই অংশ হিসেবে নতুন চুক্তিনামা একটি ইলেকট্রনিক ফরমে সাজানো হয়েছে।

খসড়ার ভাষ্য অনুযায়ী যেসব কর্মী নতুন ভিসায় কাতারে আসবে তারা তাদের কাজ শুরু করার আগে নতুন চুক্তি নামাতে স্বাক্ষর করবে। নতুন আইন কার্যকর হওয়ার আগে তা কিভাবে বাস্তবায়িত হবে তা শ্রম মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তারা ব্যাখ্যা করবেন।

নতুন আইনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব কর্তব্য ও অধিকার সম্পর্কে কি বলা হয়েছে, তা অবগত করার জন্য শ্রম মন্ত্রণালয় গণস্বচেতনতামূলক ক্যাম্পিং করবে। যা বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও মিডিয়ার মাধ্যমে করা হবে।

বুধবার থেকে শ্রম মন্ত্রণালয় ইলেক্ট্রনিক চুক্তিনামার পরীক্ষামূলক কাজ শুরু করেছে।

২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ কাতার। দেশটিতে চলছে বিশাল নির্মাণযজ্ঞ। ২০১৩ সালে কাতারে বিদেশি কর্মীদের জীবনধারা নিয়ে প্রকাশিত এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় বলা হয়েছিল, দেশটিতে নির্বিচারে শ্রমশোষণ চলে। আধুনিক দাস হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছিল বিদেশিকর্মীদের।

মূলত এরপর থেকে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তোপের মুখে কাতার সরকার। ফুটবলের বিশ্ব সংস্থা ফিফাও নড়েচড়ে বসে।

শ্রম আইনে সংশোধনের মূল কারণ মনে করা হচ্ছে ফিফার মন রক্ষা করা।

নতুন আইনে ‘কফিল’ বা ‘কফালা’ এবং খুরুজ শব্দগুলোকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। চাকরিদাতা এবং কর্মকর্তা বা কর্মচারী শব্দের ব্যবহার করা হবে। আর বিদেশি শ্রমিকরা একটি চুক্তিনামার ভিত্তিতেই দুই পক্ষের সুস্পষ্ঠ সম্মতিতেই নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চাকরি করবেন। নতুন নিয়োগদাতার অধীনে যেতে আগের নিয়োগদাতার অনুমতি লাগবে না।

নতুন আইনে খুরুজ বা এক্সিট পারমিট সিসটেম রহিত না করে একটি নতুন নিয়ম করা হচ্ছে। সেই নিয়মের অধীনে যদি কোনো চাকরিদাতা তার অধীনস্তকে এক্সিট তথা দেশের বাহিরে যেতে না দিতে চান, তাহলে তার সফরের কমপক্ষে ৩দিন আগে এডভাইজারি কাউন্সিলকে অবগত করতে হবে। কিন্তু চাকরিদাতা তার কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ রাখতে পারবেন না। বরং তিনি তার বিরুদ্ধে পাবলিক প্রসিকিউশনে অভিযোগ করতে পারবেন।

সকল শ্রমিক যারা ইতোমধ্যে কাতারে কাজ করছেন তাদের কাজের চুক্তি এই বছরের মধ্যে নতুন করে করতে হবে, যেদিন নতুন চুক্তি হবে সেদিন থেকেই তার কাজের দিন হিসেব শুরু হবে, কাজের চুক্তি শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত হতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চুক্তি হলে তা কোনোভাবেই ৫ বছরের বেশি হবে না।

কোনো শ্রমিক যে নিয়োগদাতার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সে যদি মারা যায় বা ওই প্রতিষ্ঠান যদি বিলুপ্ত হয়ে যায় তবে সেই প্রবাসী শ্রমিককে শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে নতুন নিয়োগদাতার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে। পূর্ব অনুমতি ছাড়া কোনো নিয়োগদাতা যদি তার কোনো কর্মী বা শ্রমিককে অন্য কারো কাজে লাগায় তাহলে সেই নিয়োগদাতার ৫০ হাজার কাতার রিয়াল জরিমানা এবং ৩ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।

কোনো নিয়োগদাতা যদি কোনো শ্রমিকের পাসপোর্ট নিজের কাছে রাখে তার জন্য ১০ হাজার কাতার রিয়াল থেকে ২৫ হাজার কাতার রিয়াল পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

একে/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।