সীমান্ত সুরক্ষায় এয়ার উইং গঠন করবে বিজিবি
সীমান্ত সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এয়ার উইং গঠন করবে বিজিবি। একই সঙ্গে চোরাচালানরোধ, অপরাধীদের ধরতে এবং ধৃত নির্দোষ দেশীয় লোকদের উদ্ধারে বন্ধুপ্রতীম দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় লিয়াজো অফিসও স্থাপন করবে দেশের এই আধা সামরিক বাহিনী।
এছাড়া ভারত ও মায়ানমার সীমান্তে বর্ডার রোড বা সীমান্ত সড়ক ও কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণেও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজিবি। বিজিবি সদর দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সীমান্তবর্তী এলাকায় অব্যাহত নজরদারীর পাশাপাশি দুর্গম ও অরক্ষিত এলাকায় নজরদারী ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় বিওপি (ফাঁড়ি) গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পরিকল্পনার আওতায় ৮০টিরও বেশি বিওপি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৪টি বিওপি নির্মাণ করা হয়েছে। এসব বিওপি বিজিবির অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য সাব-জোন হিসেবে ব্যবহারে পরিকল্পনা রয়েছে। আর এসব বিওপি’র মধ্যে খুব দ্রুত যেন অভিন্ন যোগাযোগ সর্বক্ষণ রক্ষা করা সম্ভব হয় সে জন্য এয়ার উইং গঠন করা হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, অরক্ষিত অঞ্চলে চোরাচালান ও অপরাধরোধে বিজিবির এয়ার উইং চালু করার বিষয়ে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী দুর্গম ও অনিয়ন্ত্রিত সীমান্তবর্তী এলাকায় টহলের জন্য এয়ার উইংয়ে ৪টি হেলিকপ্টার যোগ করা হবে। এরমধ্যে দুইটি হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক টহল দিবে এবং ২টি স্ট্যান্ডবাই থাকবে।
বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সীমান্ত রক্ষার বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়ে এয়ার উয়িং গঠনে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। প্রস্তাবনাটি এখন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
অপরদিকে চোরাচালানরোধ ও অপরাধীদের ধরতে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে পারস্পারিক সম্পর্ক উন্নয়ন, আস্থা বৃদ্ধি ও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষায় সীমান্তে লিয়াজো অফিস (বিএলও) স্থাপনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমান্ত বাহিনীর সঙ্গে স্টাফ অফিসার পর্যায়ে যোগাযোগ চলছে।
এ ব্যাপারে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, কখনোই এককভাবে কোনো দেশ সীমান্তে অপরাধ দমন ও অপরাধীদের আটক করতে পারবে না। এক্ষেত্রে দুই দেশকেই কাউন্টার সহযোগীয়তার জন্য এগিয়ে আসতে হয়। তিনি বলেন, কোনো বাংলাদেশী মিয়ানমার বর্ডার পুলিশ (বিজিপি) অথবা ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ কর্তৃত ধৃত হলে এই লিয়াজো অফিস মাধ্যমে দ্রুত ইনফরমেশন সংগ্রহ করে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর মিয়ানমারের সঙ্গে চীফ লেভেলে আমাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। গত বছর প্রথম আমরা সেই কাজটি করেছি। আগে কোনো অপরাধী বাংলাদেশে প্রবেশ বা কোনো বাংলাদেশীকে মিয়ানমার বর্ডার পুলিশ (বিজিপি) ধরে নিয়ে গেলে কখনো ৩ দিন কখনো বা ১৫ দিনও সময় লাগতো তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে। চীফ লেভেলে আমাদের মধ্যে বৈঠকে এ বিষয় গুলো নিষ্পত্তির জন্য আলোচনা হয়েছে।
সীমান্তবর্তী দেশ মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনের জন্যই লিয়াজো অফিস স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন হচ্ছে জানিয়ে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, চোরাচালানসহ সীমান্ত অপরাধ রোধে বিজিবির ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে ৩৬১ কিলোমিটার ও বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে ১৯৮ কিলোমিটার এলাকায় বিওপি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিওপি না থাকায় ওই সমস্ত এলাকায় টহল দেয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে ওই অঞ্চল অরক্ষিত রয়েছে। এজন্য ওই অঞ্চলগুলোতে বিওপি স্থাপনের কাজ চলছে। এছাড়া ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে বর্ডার রোড বা সীমান্ত সড়ক ও কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণেও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজিবি।
জেইউ