হুমকির মুখে মাচু পিচু
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একদিকে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত, অন্যদিকে খরায় হুমকির মুখে ইনকা সভ্যতার নিদর্শন পেরুর মাচু পিচু। দেশটি`র বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বন্যা-ভূমিধ্বস এবং খরার কারণে দাবানলে কালের গর্বে হারিয়ে যেতে পারে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত এ নিদর্শন। একই সঙ্গে সেখানকার আদিবাসীরা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে পূর্বপুরুষদের চাষাবাদ পদ্ধতি ও জীবনাচার।
পর্যটকের পদচারণায় সবসময় মুখরিত থাকে এ দুর্গ নগরী। ইনকা সভ্যতার নান্দনিক এ নিদর্শন দেখতে গড়ে প্রতিবছর ১০ লাখ মানুষ ঘুরতে যায় পেরুর মাচু পিচুতে।
কিন্তু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭ হাজার ৮শ ৭৪ ফুট উঁচুতে অবস্থিত মাচু পিচু`র ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে বিশেষজ্ঞদের মনে। সংরক্ষণবাদীদের শঙ্কা, স্পেনের আগ্রাসনের সময়ে রক্ষা পেলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বিশ্বের সপ্তাচার্যের অন্যতম এ স্থাপনা।
সময়ে অসময়ে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত আর খরা-দুই-ই, মাচু পিচুর বিভিন্ন নিদর্শন ক্ষয়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পেরুর সংরক্ষিত এলাকা বিষয়ক প্রকৌশল উপদেষ্টা মার্কোস পাস্তর বলেন, আমাদের বিপরীত দুই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, একদিকে প্রচণ্ড খরা হচ্ছে। এর মাত্রা আরও বেশি হলে সৃষ্ট দাবানলের আগুন গ্রাস করবে মাচু পিচুর অনেক স্থাপনা। অন্যদিকে, প্রবল বর্ষণ আর তুষারপাত আমাদের ভাবাচ্ছে। সাধারণত যে হারে বৃষ্টিপাত হয় তা দ্বিগুণ বা এর বেশি হলে ভূমিধ্বসে অনেক স্থাপনা মাটির সঙ্গে মিশে যাবে।
মার্কোস পাস্তর জানান, বর্ষা মৌসুমে সাধারণত মাচু পিচুতে দু`হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এতে সাড়ে ছয় ফুট পানি জমে।
২০১০ সালে বন্যা ও ভূমিধ্বসে মাচু পিচুতে আটকা পড়ে ৪ হাজার পর্যটক। তাদের বিমানে করে সরিয়ে নেয়া হলেও এ ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু হয়। ওই সময় ভূমিধ্বসে কিউসকোর সঙ্গে মাচু পিচুকে সংযুক্তকারী রেললাইনের বড় অংশ ধসে যায়।
বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত মাচু পিচু`র হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা`র পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন সেখানকার আদিবাসীদের জীবনাচারণেও এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। কৃষিকাজসহ পূর্বপুরুষদের জীবন পদ্ধতি থেকে সরে আসতে হচ্ছে তাদের।
পেরুর কুয়েরেস ওয়াচিপেরি নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য ওয়াল্টার কুয়েরতেওয়ারি দারিকিউবি বলেন, কৃষিকাজ, পশু শিকার কিংবা মাছ ধরা, এমনকি আমাদের গোত্রের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে জলবায়ু পরিবর্তন। কেননা, আমরা বুঝে উঠতে পারি না, কখন গ্রীষ্ম আর কখন শীতকাল?
১৪৫০ সালের দিকে নির্মিত ইনকাদের মাচু পিচু রক্ষায় এরই মধ্যে পেরুর সরকার পরিবেশবান্ধব নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিকভাবে গ্রিন হাউস নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে হয়ত ইনকা সভ্যতার মানুষদের মতো এক সময় ইতিহাস হয়ে যাবে তাদের নিদর্শনও।