ভারতের শীর্ষ গোয়েন্দা পদে মনমোহনের জামাই


প্রকাশিত: ০৩:৪৮ এএম, ২৪ জুলাই ২০১৬

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের জামাই অশোক পট্টনায়েককে জাতীয় গোয়েন্দা গ্রিডের (ন্যাটগ্রিড) প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ বিষয়ে অনেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা আপত্তি জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও এ বিষয়ে সম্মতি ছিল না। মনমোহনের সময় ন্যাটগ্রিড তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে এই সংস্থার প্রধান নির্বাহী পদটি দীর্ঘ সময় ধরে খালি ছিল।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সচিব অশোক প্রসাদ গত জানুয়ারি পর্যন্ত ন্যাটগ্রিড প্রধানের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। প্রসাদের অবসরের পর থেকে পদটি শূন্য ছিল। রাজনাথ সিং চেয়েছিলেন প্রসাদকে আবারো ওই পদের দায়িত্ব দেওয়া হোক। এদিকে, ন্যাটগ্রিড প্রধানের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে পট্টনায়েককে আনার বিরোধিতা করেছিলেন একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তাছাড়া গোয়েন্দা বিভাগ তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ নিয়ে আরএসএস বিশেষ উৎসাহী। একারণে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর জামাইয়ের নাম নিয়ে অনেকেই আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন মোদি। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এই সংস্থাটির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নজরদারি করাই ন্যাটগ্রিডের কাজ।

প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই কাজে প্রসাদের তুলনায় বেশি যোগ্য পট্টনায়েক। চিদম্বরম যখন ন্যাটগ্রিড তৈরি করেছিলেন তখন এর ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন তৎকালীন গোয়েন্দা প্রধান নেহচল সাধু। তার বক্তব্য ছিল, এই গ্রিড গঠনের অর্থ হচ্ছে আরও একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে সমান্তরাল ভাবে গড়ে তোলা। এতে দেশের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা আইবির গুরুত্ব কমে যাবে। ন্যাটগ্রিড একটি পাল্টা সংস্থায় পরিণত হবে।

মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি ২০১১ সালে ন্যাটগ্রিডের জন্য ৩ হাজার ৪শ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রায় ৭০ জনকে নিয়োগও করা হয়। তবে নানা বিতর্কে ন্যাটগ্রিডের কাজ শুরু হয়নি। এর মধ্যে ২০১২ সালের জুলাইয়ে চিদম্বরম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছাড়েন। মনমোহনের জামাইকে ন্যাটগ্রিডের প্রধান করার পিছনে অবশ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অন্য ধরনের ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। তারা বলছেন, বর্তমান গোয়েন্দা প্রধান দিনেশ্বর শর্মা অবসর নিচ্ছেন ৩১ অক্টোবর। মোদি যখন ক্ষমতায় আসেন তখন গোয়েন্দা প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন আসিফ ইব্রাহিম। আসিফ ছিলেন ভারতের প্রথম মুসলিম গোয়েন্দা প্রধান। তার পর দায়িত্ব নেন দিনেশ্বর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, পদমর্যাদা অনুযায়ী ২০১৮ সালে আইবি প্রধান হওয়ার দৌঁড়ে থাকতেন পট্টনায়েক।

নিন্দুকেরা অনেকেই বলছেন, পট্টনায়েক যাতে আইবি প্রধান না হতে পারেন তার জন্যই এ ভাবে তাকে ন্যাটগ্রিডের দায়িত্ব দিয়ে মূল দৌঁড় থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় এই যুক্তি মানতে নারাজ। তারা বলছেন, গোটা পৃথিবীতে সন্ত্রাসের ভাষা বদলাচ্ছে। ভারতেও ক্রমশ জাল ছড়াচ্ছে আইএস। এই পরিস্থিতিতে সরকারের শীর্ষ কর্তাদের বিশ্বস্ত না হলে এত গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব দেওয়া হতো না।

ভারতের সব গোয়েন্দাবাহিনীর যত ডেটাবেস আছে তা সংগ্রহ করে ন্যাটগ্রিড। সমস্ত সরকারি সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কর সংক্রান্ত নথি, ভিসা ও ইমিগ্রেশনের রিপোর্ট, র, আইবি, আর্থিক দুর্নীতি দমন শাখাসহ মোট ১১টি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের দায়িত্ব থাকে ন্যাটগ্রিডের হাতে। এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অশোক পট্টনায়েককে আনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই দাবি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের।

টিটিএন/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।