জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে তদন্তে ৯টি দল


প্রকাশিত: ০৯:২৭ এএম, ১০ জুলাই ২০১৬

ভারতের ইসলামী বক্তা ও ধর্ম প্রচারক জাকির নায়েকের পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছে নয়াদিল্লি।

বিভিন্ন অভিযোগের কারণে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে তদন্তে ৯টি দল গঠন করছে মন্ত্রণালয়। যাদের মধ্যে চারটি দল তার বক্তব্যের ভিডিও ও সিডির ফুটেজ খতিয়ে দেখবে। তিনটি দল তার সোশ্যাল মিডিয়ার গতিবিধি খতিয়ে দেখবে। আর তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুটি দলের উপর।

বিশেষ এই দলে থাকছেন এনআইএ, ইনটেলিজেন্স ব্যুরো, র এবং রেভিনিউ ইনটিলিজেন্সের প্রতিনিধিরা। জাকিরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নামে পাঠানো অর্থ কোন খাতে খরচ করা হয়েছে বা বিদেশি অনুদান নেওয়ার ক্ষেত্রে আইন মানা হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত ১০ বছরে জাকির কোন কোন দেশে গেছেন, কাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং সেই সফরের জন্য কারা অর্থ ঢেলেছে, সেটাও রয়েছে তদন্তের আওতায়।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে হামলা চালানো জঙ্গিদের মধ্যে দুজন টুইটারে জাকির নায়েককে অনুসরণ করতো। গণমাধ্যমে এই তথ্য প্রকাশের পর থেকেই পিস টিভি এবং জাকির নায়েকের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছিল পুলিশ।

তবে জাকির নায়েক তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ৯০ শতাংশ বাংলাদেশি আমাকে চেনেন। প্রবীণ রাজনীতিক থেকে সাধারণ মানুষ, ছাত্র, শিক্ষকরা রয়েছেন সেই তালিকায়। আর এই বিপুল মানুষের ৫০ শতাংশ আমার গুণমুগ্ধ। এই অবস্থায় জঙ্গিরা যদি আমায় চেনে তাহলে কি আমার খুব বেশি অবাক হওয়ার কথা?

হত্যাকারীরা আমার বক্তব্যের সঙ্গে পরিচিত হতেই পারে। কিন্তু তার মানে এই নয়, আমি তাদের অনুপ্রাণিত করেছি। আমি সাধারণত ধর্মীয় বই অনুসারে বক্তব্য দেই। আমার বক্তব্য শুনে তারা যদি সঠিক ইসলামকে বুঝতে না পারে সেটা তাদের দুর্ভাগ্য।

তিনি আরো বলেন, কেউ যদি দাবি করে সে মানুষ হত্যা করে ইসলামের পথে রয়েছে, সেটা একদমই কোরআনের পরিপন্থী কথা।

দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানিয়েছে, জঙ্গিদের কাছে জাকির নায়েকের টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত বিভিন্ন বক্তৃতার রেকর্ড পাওয়া গেছে। জাকির নায়েকের ওপর অভিযোগ আনা হয়েছে, পিস টিভিতে সম্প্রচারিত জাকির নায়েকের বক্তৃতা জঙ্গিদের উৎসাহিত করছে। তাই তার চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ তো বটেই, জাকিরের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও ভাবা হচ্ছে। ইউএপিএ বা বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে তাকে গ্রেফতারের কথাও ভাবছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ইতোমধ্যেই বাংলাদেশেও পিস টিভি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের ক্যাবল অপারেটরদের সংগঠন কোয়াবের সভাপতি মির হোসেন জানিয়েছেন, তারাও টেলিভিশন চ্যানেলটি সম্প্রচার করতে চান না।

গুলশানের রেস্টুরেন্টের হামলাকারী অন্তত দুজনের অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, জাকির নায়েকের বক্তৃতা শুনে তাদের ছেলেরা জঙ্গি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং মালয়েশিয়ায় পিস টিভি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মির হোসেন জানান, মন্ত্রী তাদেরও জানিয়েছেন, দু-একদিনের মধ্যেই এ বিষয়ে সরকারি নির্দেশ ঘোষণা করা হবে।

জাকির নায়েক বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন। সেখান থেকে দেশে ফিরলেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন গোয়েন্দারা। মুম্বাইয়ে তার অফিসে ইতোমধ্যেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

জাকির নায়েকের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের কাজকর্মও যথেষ্ট সন্দেহজনক বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরবের মতো মুসলিম দেশগুলো থেকে বিশেষ উদ্দেশ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাঠানো হচ্ছে জাকির নায়েকের সংস্থাকে।  

টিটিএন/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।