বিশেষ টার্গেটের পেছনে ষড়যন্ত্রকারীদের বিশেষ উদ্দেশ্য কী?


প্রকাশিত: ১০:১০ এএম, ০২ জুলাই ২০১৬

১৯৪৭-এ ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাকিস্তানের কাছে থেকে ১৯৭১ সালে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। এই পুরো পর্ব জুড়েই বাংলাদেশের রাজনীতির উত্থান-পতন বেশ চোখে পড়ার মতোই। কখনো সামরিক শাসন, কখনো  ইসলামাবাদের ষড়যন্ত্র, কখনো দেশের মধ্যে থাকা উগ্র মৌলবাদের বিষ বারবার জর্জরিত করেছে বাংলাদেশকে।

সেই ভয়ঙ্কর পিচ্ছিল আর দুর্গম পথে হাঁটতে হাঁটতেই বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। গণতন্ত্রের পক্ষে, সর্বধর্ম সহিষ্ণুতার পক্ষে। এমন এক জেগে ওঠার, উঠে দাঁড়ানোর সন্ধিক্ষণেই আবার যেন সব উল্টেপাল্টে, লণ্ডভণ্ড করে দিতে চাইছে কেউ কেউ। শুধু গণতন্ত্রের পথেই নয়, এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক বিকাশেও উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনার দরজায় দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। এমন সময়েই, গত দেড় বছর ধরে ঘটে চলেছে একের পর এক হত্যাকাণ্ড যা আঘাত করছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মাচরণের স্বাধীনতাকে। এক বার দেখে নেয়া নেয়া যাক সেই তালিকার দিকে।

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫: একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকার রাস্তায় জঙ্গিদের হাতে খুন হন মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিত রায়। তার স্ত্রী রফিকা আহমেদ বন্যার সামনেই কুপিয়ে খুন করা হয় তাকে। কেটে নেওয়া হয় বন্যার হাতের বুড়ো আঙুল।

৩০ মার্চ, ২০১৫: ঢাকার বেগুনবাড়ি অঞ্চলে নিজের বাড়ির কাছেই ধারালো ছুরির শিকার হন ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু। ধর্মকারী ও ইস্টিশন নামে দু’টো ব্লগে নিয়মিত কলম লিখতেন বাবু।

২১ মে, ২০১৫: সিলেটে চার জঙ্গিরা কুপিয়ে হত্যা করে নাস্তিক ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে। মুক্তমনা ব্লগে নিয়মিত লেখার পাশাপাশি গণজাগরণ মঞ্চের সদস্য ছিলেন অনন্ত বিজয় দাশ।

৭ অগাস্ট, ২০১৫: মু্ক্তমনা, ইস্টিশন, ফেসবুকে নিজের মতামত নিয়মিত প্রকাশ করতেন ব্লগার নিলয় নীল। ১৫ মে অনন্ত বিজয় দাশের স্মরণসভায় থেকে ফেরার পথে দুষ্কৃতীরা অনুসরণ করেছিল তাকে। পুলিশের কাছে নিজের জীবনশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন নিলয়। কিন্তু লাভ হয়নি। তিন মাসের মধ্যেই মৌলবাদীদের চাপাতিতে খুন হন তিনি।

৩১ অক্টোবর, ২০১৫: শাহবাগের জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে ভর দুপুরে হামলা চালায় মৌলবাদীরা। কুপিয়ে হত্যা করা হয় প্রকাশক ফয়সল আরফিন দীপনকে। একই দিনে এর পরই লালমাটিয়া এলাকার শুদ্ধস্বর প্রকাশনার দফতরে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত হন প্রকাশক আহমেদ রশিদ টুটুল, রণদীপম বসু ও তারেক রহিম।

৬ এপ্রিল, ২০১৬: ঢাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক পা দূরে জঙ্গিদের হাতে খুন হন আইনের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদ। মু্ক্তমনা ব্লগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সামাদ। হত্যার দায় স্বীকার করে আল কায়েদা।

২৩ এপ্রিল, ২০১৬: প্রকাশ্য রাস্তায় চরমপন্থীদের হাতে খুন হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী।

১৪ মে, ২০১৬: বান্দারবনের বৌদ্ধ বিহারে ৭০ বছর বয়সী বৌদ্ধ ভিক্ষু উ গাইন্দ্যাকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

৫ জুন, ২০১৬: একই দিনে দুই হত্যাকাণ্ড। ভোর ৬টার দিকে চট্টগ্রামের রাস্তায় পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানুম মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বাবুল আক্তার জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। একই দিনে দুপুর ১২টা নাগাদ নাটোরের এক খ্রিস্টান ব্যবসায়ী ৬০ বছরের সুনীল গোমেজকে তার মুদির দোকানে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

৭ জুন, ২০১৬: ঝিনাইদহের মন্দিরের পুরোহিত ৭০ বছর বয়সী আনন্দগোপাল গঙ্গোপাধ্যায়কে গলা কেটে খুন করে জঙ্গিরা। দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট।

১০ জুন, ২০১৬: পাবনার হেমায়েতপুরে অনুকুল চন্দ্র ঠাকুর সেবাশ্রমের সেবক নিত্যরঞ্জন পান্ডেকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

১ জুলাই, ২০১৬:  ঝিনাইদহের শ্রী শ্রী রাধা মদনগোপাল মঠ মন্দিরের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

২ জুলাই, ২০১৬: সাতক্ষীরার ব্রহ্মরাজপুরের ইসকন মন্দিরের পুরোহিত ভবসিন্ধু বরকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে দুষ্কৃতীরা। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তিনি।

এতদিন পর্যন্ত জঙ্গিদের টার্গেট ছিলেন হয় মুক্তমনা মানুষ নতুবা দেশের সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীরা! ঢাকায় শুক্রবার রাতের হামলা কিন্তু একেবারে অন্য রকম। গুলশান এলাকাজুড়ে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস। যে স্প্যানিশ রেস্তোরাঁয় হামলা হয়েছে, তাতে বিদেশিরাই বেশি যান! এই বিশেষ টার্গেট বাছার পেছনে কি ষড়যন্ত্রকারীদের বিশেষ কোন উদ্দেশ্য আছে? ঢাকা তথা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ন্যান্য দেশের কাছে ব্ল্যাকলিস্টেড করে তোলাই কি উদ্দেশ্য? তাই যদি হয়, শেখ হাসিনা সরকারের সামনে কিন্তু এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

এসআইএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।