ব্রেক্সিট : ব্রিটেনের ভাগ্য সিদ্ধান্তহীন ১১ শতাংশ ভোটারের হাতে


প্রকাশিত: ০৬:৫৮ এএম, ২৩ জুন ২০১৬

ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না থাকা নিয়ে ঐতিহাসিক গণভোট শুরু হতে যাচ্ছে ব্রিটেনে। ভোটপূর্ব বিভিন্ন জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, উভয় পক্ষ কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। সর্বশেষ এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে সমর্থন রয়েছে ব্রিটেনের ৪৫ শতাংশ ভোটারের, এর বিপরীতে ইইউতে থাকার পক্ষে রয়েছে ৪৪ শতাংশ ভোটার।

ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক ডেইলি মেইল ও টেলিভিশন আইটিভির এক জরিপে বলা হয়েছে, ইইউতে থাকতে চায় ৪৮ শতাংশ ভোটার, বিপরীতে ইইউ ত্যাগের পক্ষে ৪২ শতাংশ। থাকা না থাকা নিয়ে খুব কাছাকাছি অবস্থানে থাকা ভোটারদের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে সিদ্ধান্তহীন ১১ শতাংশ ভোটার। এই ১১ শতাংশ ভোটার বলছেন, তারা কোন পক্ষে ভোট দেবেন সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।

কেন ইইউ ছাড়তে চায় ব্রিটেন?

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরেছে ভোটাররা। লণ্ডনের মেয়র বোরিস জনসন ও বিচারমন্ত্রী মাইকেল গোভ সহ ডানপন্থী সংরক্ষণশীল নেতারা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার কারণে ব্রিটিশ সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে রয়েছে। সম্ভবত এটিই সবচেয়ে সাধারণ একটি যুক্তি।

brexit

গত কয়েক দশক ধরে ইইউর বেশ কয়েকটি চুক্তি সদস্য দেশগুলোর ক্ষমতা ইইউর প্রাণকেন্দ্র ব্রাসেলসে স্থানান্তরিত করেছে। ইইউর প্রতিযোগিতার নীতি, কৃষি, কপিরাইট এবং প্যাটেন্ট আইন সদস্য দেশগুলোর নীতিমালাকে অগ্রাহ্য করে করা হয়েছে।

ইইউর নীতিমালা কখনো কখনো হাসির খোরাক জোগাড় করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বোরিস জনসন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ইইউর নীতির কারণে আপনি পরিত্যক্ত চা ব্যাগ পুণরায় ব্যবহারের জন্য উৎপাদন করতে পারবেন না অথবা যেসব শিশুর বয়স আট বছরের নিচে তারা বেলুন উড়াতে পারবে না।

ব্রিটিশ রক্ষণশীলদের অনেকেই ইউরোপীয় আমলাতন্ত্রের সঙ্গে ওয়াশিংটনের আমলাতন্ত্র একই ধাঁচের হিসেবে দেখছেন।

কর্পোরেট স্বার্থের দিকে ঝুঁকে পড়েছে ইইউ। শুধু তাই নয়, ব্রিটেনের আমূল সংস্কারেও বাঁধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে ব্রেক্সিটের পক্ষের নেতাদের। তৃতীয় এই যুক্তি উপরের দুটির বাস্তব প্রতিচ্ছবি। যেখানে ব্রিটেনের সংরক্ষণশীল অনেকেই বলছেন, ইইউ ব্রিটেনে বামপন্থী সরকারি নীতি চাপিয়ে দিচ্ছে।

তবে, ব্রিটেনের বামপন্থীরা এ বিষয়টিকে দেখছেন ভিন্ন দৃষ্টিতে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গণতন্ত্রবিরোধী সরকার কাঠামো কর্পোরেট এলিট শেণিকে অধিক ক্ষমতা দিচ্ছে। এছাড়া বামদের বড় ধরনের সাফল্য অর্জনে বাধা হিসেবে দাড়াচ্ছে। ইইউ-বিরোধী গণতান্ত্রিক ও সংস্কারপন্থী প্রচারাভিযানের পরিচালক এনরিকো টরটোলানো কোয়ার্টজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইইউ হচ্ছে গণতন্ত্র ও সংস্কার বিরোধী।

ইইউর গঠনের ধারণা অতীতে ভালো থাকলেও বর্তমানে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ১৯৭৩ সালে ইইউতে যোগ দেয়ার পর ব্রিটেন গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ব্রিটেন। ব্রিটেনের অর্থনীতিবিদ অ্যান্ড্রু লিলিকো বলেন, কনজারভেটিভ দলের অন্তত ১৩০ জন এমপি ইইউ ত্যাগের পক্ষে তাদের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। তাদের মানসিকতায় কেন এই পরিবর্তন? ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপি মন্দা শুরু হয়েছে। কিন্তু ইইউর অন্যান্য দেশের চেয়ে ব্রিটেনে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ব্রিটেনে বেকারত্বের হার ২০ শতাংশের ওপরে পৌঁছেছে। স্পেন, গ্রিস ভয়াবহ ঋণ সংকটে পড়েছে।

brexit

বিশ্বমন্দা শুরুর সাত বছর পর আজও স্পেন ও গ্রিসে বেকারত্বের হার ২০ শতাংশের ওপরে। অনেক অর্থনীতিবিদের অভিযোগ, ইইউর মুদ্রা ইউরোর কারণে এটি হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়া না যাওয়ার পক্ষে ভোটাভুটিতে অংশ নেবে দেশটির ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৯৯ হাজার ৫৩৭ জন ভোটার। স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় শুরু হয়ে তা একটানা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। ৪০ হাজার কেন্দ্রে এই ভোট অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার সকালের (বাংলাদেশ সময় বিকাল) দিকে ম্যানচেস্টার টাউন হল থেকে ফল ঘোষণা করা হবে।

সর্বশেষ অন্তত চারটি জনমত জরিপের ফল বলছে, দুই পক্ষই সমান-সমান অবস্থানে রয়েছে। ডেইলি মেইলের  জরিপ বলছে, ইইউতে থাকা না থাকার চাবিকাঠি সিদ্ধান্তহীন ১১ শতাংশ ভোটারের ওপর নির্ভর করছে।

এসআইএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।