মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন ফ্লোরিডার হামলাকারী


প্রকাশিত: ০৬:৪৩ এএম, ১৩ জুন ২০১৬

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অঙ্গরাজ্যে বন্দুকধারীর গুলিতে একটি সমকামী নাইটক্লাবে ৫০ জন নিহত হয়েছে। আফগান বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ওমর মতিন ওই হামলা চালান। খবর বিবিসির।  

২০১৩ সাল থেকেই গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই মতিনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতো। রোববার দিবাগত রাতে পালস নাইটক্লাবে তার চালানো হামলাটি আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী গুলিবর্ষণের ঘটনা।

এফবিআইয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশের গুলিতে নিহত ২৯ বছর বয়স্ক ওমর মতিনের উগ্র ইসলামপন্থী ভাবধারার দিকে ঝোঁক ছিল। তবে তার এই হামলা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট কিনা তা এখনো পরিষ্কার নয়।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে রোববার রাতের নাইটক্লাবের ওই হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

হামলাকারীর সঙ্গে জঙ্গিদের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই’র স্পেশাল এজেন্ট রন হার্পার বলেন, হামলাকারী জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে আরো তদন্ত প্রয়োজন।

এদিকে ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। আইএসের বার্তা সংস্থা আমাকের এক খবরে বলা হয়েছে তাদের এক সাহসী যোদ্ধা সমকামী নাইটক্লাবে হামলা চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যা করেছে।

ওই হামলায় নিহতদের স্মরণে প্রেসিডেন্ট ওবামা সোমবার সব রাষ্ট্রীয় দপ্তরে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। নিহতদের স্মরণে যুক্তরাষ্ট্রে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়েছে।

হামলা চালানোর সময় মতিন জরুরী নম্বর ৯১১-এ কল দিয়ে কথিত ইসলামিক স্টেটের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করে। এদিকে, মতিনের বাবা সাদিক মতিন মার্কিন একটি সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন যে হামলাটির সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। তার ছেলে কিছুদিন আগে মায়ামিতে দুজন পুরুষ পরস্পরকে চুম্বন করছে দেখে খুবই ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে।

তবে সে যে একটি হামলার পরিকল্পনা করেছিল সেবিষয়ে পরিবারের কোন ধারণাই ছিল না।

এফবিআইয়ের বিশেষ এজেন্ট রন হপার সাংবাদিকদের বলেন, আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা বলে সহকর্মীদের প্রতি বিরূপ মন্তব্য করায় তাকে ২০১৩ সালে এফবিআই কর্মকর্তারা দুবার জিজ্ঞাসাবাদ করে।

কর্মকর্তারা অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় সেসময় তদন্ত শেষ করা হয়। তবে ২০১৪ সালে আবারো সিরিয়ায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর সাথে যোগাযোগের অভিযোগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

সেবারও এধরণের যোগাযোগের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং তদন্তটি সেখানেই শেষ করা হয় বলে জানান রন হপার।

এফবিআইয়ের নজরে থাকলেও মতিনকে কখনো সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে নজরদারির আনুষ্ঠানিক তালিকায় রাখা হয়নি কেননা তার কাছে একটি বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।

ওমর মতিন ২০০৭ সাল থেকে নিরাপত্তা সংস্থা জি ফোর এস-এর একজন সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করে আসছেন।

মতিনের জন্ম নিউ ইয়র্কে। তবে তার মা-বাবা দুজনই আফগান।

মতিন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তার সাবেক স্ত্রী সিতোরা ইউসুফি জানান, মতিন খুব সহিংস ছিলেন। শুধু তাই নয় মানসিকভাবে অস্থিতিশীল মতিন তাকে নিয়মিত পেটাতেন।

তিনি বলেন, সে আমাকে রোজই মারতো। সে কাজ থেকে ফিরেই হয়তো কাপড় না ধোয়া কিংবা নানা কারণ দেখিয়ে আমাকে মারতে শুরু করত। তবে সে খুব একটা ধার্মিক ছিল না। ওই হামলার পেছনে মতিনের মানসিক অসুস্থতাকেই দায়ী করেছেন তার স্ত্রী।

২০১১ সালে তাদের দুজনের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

টিটিএন/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।