মার্কিন প্রতিনিধিদের সফর
আবারও গ্রিনল্যান্ড দখলের ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার (২৪ মার্চ) পুনরায় জোর দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণ অর্থাৎ দখল করতে পারে। বিশ্বের বৃহত্তম এই দ্বীপটিতে একটি উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফর নিয়ে সমালোচনা শুরু হওয়ার পর এমন মন্তব্য করলেন তিনি।
অন্যদিকে, ডেনমার্কের আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির নেতারা উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরকে ‘উস্কানি’ হিসেবে দেখছেন।
সোমবার মন্ত্রিসভার কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি, গ্রিনল্যান্ড ভবিষ্যতে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রিনল্যান্ডের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মুটে এগেডে মার্কিন প্রতিনিধিদলের এই সফরকে ‘প্ররোচনা’ বলে অভিহিত করেছেন ও তার সরকার এই প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে না বলে জানিয়ে। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের হস্তক্ষেপ আমাদের গণতান্ত্রিক নীতির লঙ্ঘন এবং আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, আমরা যোগাযোগ করছি না, বরং ওরাই আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে। তিনি বলেন, তার প্রশাসন গ্রিনল্যান্ডের ‘কিছু মানুষের’ সঙ্গে কাজ করছে, যারা পরিবর্তন চায়। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
মার্কিন সফরটি বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) থেকে শনিবার পর্যন্ত চলবে ও এতে অংশ নেবেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের স্ত্রী উষা ভ্যান্স, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ ও জ্বালানি সচিব ক্রিস রাইট।
গ্রিনল্যান্ডের সরকার বর্তমানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন পর্যায়ে রয়েছে, কারণ ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দল বিজয়ী হয়েছে, যা ধীরে ধীরে স্বাধীনতার পক্ষে জনগণের অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে। দলটির নেতা জেন্স-ফ্রেডেরিক নিলসেন মার্কিন সফরের সময় সম্পর্কে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, আমাদের এমন একটি খেলায় জড়ানো উচিত নয়, যা আমরা বেছে নিইনি।
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোককে রাসমুসেন সফরটিকে ‘সমস্যাজনক’ ও ‘অসম্মানজনক’ বলেও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এটি নিছক সাধারণ কোনো সফর নয় বরং এটি গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার একটি কৌশল।
তবে হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ সফরটির লক্ষ্য ব্যাখ্যা করে বলেছেন, গ্রিনল্যান্ডের আত্মনিয়ন্ত্রণকে সম্মান জানিয়ে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।
গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী ও সবচেয়ে বড় শহর হলো নুক। রোববার (২৩ মার্চ) রাতে শহরটিতে দুটি মার্কিন সামরিক পরিবহন বিমান অবতরণ করে, যা নিরাপত্তা কর্মী ও বুলেটপ্রুফ যানবাহন নিয়ে এসেছে। এছাড়া ৬০ জন ড্যানিশ পুলিশ কর্মকর্তাও সেখানে অবস্থান নিয়েছিলেন।
ওয়াল্টজ এবং রাইট মার্কিন সামরিক ঘাঁটি পিটুফিক পরিদর্শন করবেন, যা ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পথের ওপর অবস্থিত এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কতা ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এরপর তারা ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন ও কুকুরের স্লেজ রেসে অংশ নেবেন।
উষা ভ্যান্স এক ভিডিও বার্তায় বলেন, এই সফরের উদ্দেশ্য হলো আমাদের জাতিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাসকে উদযাপন করা।
ট্রাম্প ২০১৯ সালে প্রথমবার গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দেন ও জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার পর থেকে তিনি আবারও এই দাবি উত্থাপন করেছেন। তিনি সামরিক শক্তি ব্যবহার করেও এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করে নেওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টিও উড়িয়ে দেননি।
তবে গ্রিনল্যান্ড ও ডেনমার্ক উভয় সরকারেই ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা চাই, তবে সার্বভৌমত্বের মৌলিক নিয়ম মেনে। তিনি স্পষ্ট করেন যে, যেকোনো আলোচনায় ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ড উভয় সরকারের অংশগ্রহণ থাকবে।
সূত্র: রয়টার্স
এসএএইচ