সাংবাদিককে রেখেই গ্রুপ চ্যাট
ভুল করে ইয়েমেনে হামলার পরিকল্পনা ফাঁস করলো ট্রাম্প প্রশাসন

মেসেজিং অ্যাপ ‘সিগন্যালের’ গ্রুপ চ্যাটে এক সাংবাদিককে রেখেই সামরিক অভিযান নিয়ে আলোচনা করেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। সোমবার (২৪ মার্চ) ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা তাদের সামরিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করার গ্রুপ চ্যাটে ভুল করে এক সাংবাদিককে রেখেছিলেন। আর তাতেই ফাঁস হয়ে যায় গোপন পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য।
সিগন্যাল মেসেজিংয়ে ট্রাম্প মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য ছাড়াও ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। সেই গ্রুপে দ্য আটলান্টিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গকেও রাখা হয়েছিল। প্রথমে এই সাংবাদিক ভেবেছিলেন, এই গ্রুপ কোনোভাবেই আসল হতে পারে না।
গোল্ডবার্গ জানান, ১৩ মার্চ তিনি হঠাৎ করেই সিগন্যাল নামের এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপে একটি চ্যাট গ্রুপে যুক্ত হন। ওই গ্রুপের নাম ছিল 'হুথি পিসি স্মল গ্রুপ'। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ তার ডেপুটি অ্যালেক্স ওয়ংকে নির্দেশ দেন একটি ‘টাইগার টিম’ গঠন করতে, যার কাজ হবে হুথিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের সমন্বয় করা।
গোল্ডবার্গ দাবি করেন, গত ১৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে হুতিদের উপর আক্রমণ চালায়। তার কয়েক ঘণ্টা আগে গোল্ডবার্গ গ্রুপে মেসেজ দেখেন, বিমান হামলা চলছে। হামলার আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ওই গ্রুপে অপারেশন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পোস্ট করেন। সেখানে সম্ভাব্য হামলার লক্ষ্যবস্তু, ব্যবহৃত অস্ত্র ও হামলার ধাপে ধাপে পরিকল্পনার তথ্য উল্লেখ ছিল। তিনি এটিকে ‘অবিশ্বাস্যভাবে অবহেলামূলক’ একটি ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন।
গোল্ডবার্গের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওই চ্যাট গ্রুপে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফ, জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড, ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট, হোয়াইট হাউজ চিফ অব স্টাফ সুজি ওয়াইলস এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিনিয়র কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
এছাড়া, ন্যাশনাল কাউন্টারটেররিজম সেন্টারের মনোনীত পরিচালক জো কেন্টও এই চ্যাটে যুক্ত ছিলেন, যদিও তিনি তখনো সিনেটের অনুমোদন পাননি।
চ্যাটের আলোচনায় ইউরোপের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়া নিয়েও মন্তব্য করা হয়। গোল্ডবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাইক ওয়াল্টজের নামে থাকা এক অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়, এখন বা কয়েক সপ্তাহ পর- যখনই হোক, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকেই এই শিপিং রুটগুলো পুনরায় নিরাপদ করতে হবে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি ইউরোপকে আরও উদ্ধার করতে চাই না। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ তাতে সাড়া দিয়ে বলেন, ভিপি, ইউরোপের ওপর আমাদের নির্ভরতার প্রতি আপনার ক্ষোভ আমি পুরোপুরি সমর্থন করি। এই নির্ভরতা একদমই লজ্জাজনক।
গোল্ডবার্গ তার প্রতিবেদনে আরও জানান, ১৪ মার্চ ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ওই চ্যাটে হামলার সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, আমি নিশ্চিত নই যে প্রেসিডেন্ট কি বুঝতে পারছেন, এটি ইউরোপ সংক্রান্ত তার বর্তমান নীতির সঙ্গে কতটা সাংঘর্ষিক।
তিনি আরও বলেন, এর ফলে তেলের মূল্য বাড়তে পারে ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। তবে আমি দলে ঐক্য রাখতে চাই। আপাতত এ নিয়ে বেশি কথা বলছি না।
এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর ভ্যান্সের কার্যালয় থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এই প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতিকে পুরোপুরি সমর্থন করেন। প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে আলোচনার পর এখন সম্পূর্ণ ঐক্যমত্যে পৌঁছেছেন।
এ বিষয়ে হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ জানিয়েছেন, চ্যাট গ্রুপটি ‘আসল’ ছিল ও বিষয়টি এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল ছিল ও আমরা পর্যালোচনা করছি কীভাবে একটি ভুল নম্বর চ্যাট গ্রুপে যুক্ত হলো।
তবে তিনি দাবি করেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাতীয় নিরাপত্তার কোনো ধরনের হুমকি তৈরি হয়নি। হিউজ বলেন, হুথিদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সফল হয়েছে, এবং এতে কোনো সামরিক ঝুঁকি তৈরি হয়নি।
অন্যদিকে, মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা পুরো ঘটনা নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। হাউজের অন্যতম প্রধান ডেমোক্র্যাট সদস্য হাকিম জেফরিস বলেছেন, কংগ্রেসের উচিত বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা ও এ ধরনের ঘটনা যেন আর না হয়, তা নিশ্চিত করা।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
এসএএইচ