করোনাভাইরাসে মরবে সাড়ে ৬ কোটি মানুষ, সতর্ক করেছিলেন বিজ্ঞানীরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:২৩ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০২০
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য খাতের বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান জন হপকিনস সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির বিজ্ঞানী এরিক টনার চীনের উহান শহরে রহস্যজনক করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের খবরে হতবাক হননি। কারণ তিন মাস আগে টনারের নেতৃত্বে একদল মার্কিন গবেষক বিশ্বজুড়ে এ ধরনের করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
তারা বলেছিলেন, নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাসের প্রভাবে ১৮ মাসের মধ্যে বিশ্বে সাড়ে ছয় কোটির বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা এবং নিউমোনিয়ার মতো অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হতে পারে মানুষ। ২০০৩ সালের দিকে চীনে আরেক প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোমের (সার্স) সংক্রমণ ব্যাপক আকার ধারণ করে। চীনে আট হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, প্রাণ যায় অন্তত ৭৭৪ জনের।
টনার বলেন, আমি অনেক দিন ধরেই আশঙ্কা করছিলাম, একটি নতুন ধরনের করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। চীনের উহানের এই ভাইরাস এখনও মহামারি আকার ধারণ না করলেও থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত, নেপালে ইতোমধ্যে পৌঁছেছে।
চীনে এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৫৬ জনের মৃত্যু ও আরও ২ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শনিবার দেশটির জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই ভাইরাস দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
টনার বলেন, আমরা এখনও জানি না এই ভাইরাস কতটা ক্ষতিকর। আমরা জানি এটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু কি পরিমাণ মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন তা আমরা জানি না। প্রাথমিকভাবে এটা বোঝা যাচ্ছে যে, এই ভাইরাস সার্সের চেয়ে একটু দুর্বল। আর এটাই স্বস্তির জায়গা। তবে সার্সের চেয়ে এটি দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ করতে পারে।
বিশ্বজুড়ে নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছয় মাসের মধ্যে হতে পারে বলে তিন মাস আগে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির বিজ্ঞানীরা। বিশ্বের প্রায় প্রত্যেক দেশেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে বলে তারা ধারণা করেছিলেন। একই সঙ্গে ১৮ মাসের মধ্যে সাড়ে ৬ কোটি মানুষ করোনাভাইরাসের কারণে মারা যেতে পারেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
মার্কিন এই স্বাস্থ্য খাতের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা বিশ্বজুড়ে নতুন ধরনের একটি করোনাভাইরাস কীভাবে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে তার একটি কাল্পনিক চিত্র উপস্থাপনা করেছিলেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, দাতব্য সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটসের সহায়তায় এই গবেষণা করেন বিজ্ঞানীরা। কাল্পনিক এই গবেষণায় ব্রাজিলের শুকর খামার থেকে যদি একটি করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে কী ঘটবে সেটি জানার চেষ্টা করেন তারা। উহানের করোনাভাইরাস সেখানকার একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়ে।
কী বলা হয়েছিল সেই গবেষণায়
জন হপকিনস সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, নতুন করোনাভাইরাস হবে আধুনিক যে কোনও ভ্যাকসিন প্রতিরোধী। এটা হবে সার্সের চেয়েও ভয়াবহ প্রাণঘাতী। কল্পিত এই মহামারী শুরু হবে দক্ষিণ আমেরিকার দারিদ্রপীড়িত অঞ্চলে। এই ভাইরাসে আক্রান্তরা ফ্লু অথবা নিউমোনিয়ায় ভুগতে পারেন। সেখান থেকে ধীরে ধীরে তা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। ভ্রমণ বাতিল হয়ে যাবে ৪৫ শতাংশ। মানুষ প্রচুর ভুয়া সংবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে। ছয় মাস পর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে এই ভাইরাস। এর এক বছর বিশ্বে সাড়ে ছয় কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। টনার বলেন, এটা আমরা যে বিশ্বে বসবাস করছি, তারই একটি অংশ। আমরা এখন মহামারির যুগে বসবাস করছি।
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?
এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে।
সেক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কি-না তা এখনো অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে।
সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার।
এসআইএস/এমএস