জাতীয়

নির্বাচন নিয়ে ফখরুলের বক্তব্য রাজনৈতিক, সরকারের সঙ্গে দূরত্ব নেই

নির্বাচন নিয়ে ফখরুলের বক্তব্য রাজনৈতিক, সরকারের সঙ্গে দূরত্ব নেই

চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একদিন আগেই যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটিকে তার বা বিএনপির ‘রাজনৈতিক বক্তব্য’ বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘কোনো দূরত্ব নেই’ বলেও দাবি করেছেন তিনি।

Advertisement

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সচিবালয়ে ন্যাচারাল ক্যাপিটাল ম্যাপিং বা দেশের পাহাড় ও টিলাসহ প্রাকৃতিক সম্পদের মানচিত্র প্রণয়ন কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটির মনোভাবের কথা তুলে ধরে গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বারবার বলছি, নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এটি গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

‘আমরা মনে করি, এ বছরের মাঝামাঝি অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। এ কারণে আমরা সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এ বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবস্থা নিতে পারি’- বলেন বিএনপি মহাসচিব।

Advertisement

আরও পড়ুন

জুলাই-আগস্টের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব: ফখরুল সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান বিএনপির

জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়ার এমন আহ্বানে বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো টানাপোড়েন বা দূরত্ব তৈরি হয়েছে কি না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রিজওয়ানা হাসান বলেন, এটি গ্যাপের প্রশ্ন না। পুরো প্রক্রিয়াটি যদি আপনি খেয়াল করেন, যে সংস্কার কমিশনগুলো কাজ করছে, সব রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ তাদের লিখিত মতামত দিয়েছে। কাজেই সংস্কারের ধারণাটিকে তারা গ্রহণ করেছে। তারাই প্রথম থেকে বলে আসে সংস্কার প্রয়োজন আছে।

তিনি বলেন, এখন যে কোনো একটি রাজনৈতিক দল তার রাজনৈতিক বক্তব্য রাখতেই পারে। তার একটা অডিয়েন্স আছে। সে তার মতো করে কথা বলবেন। এখানে গ্যাপের বিষয় নয়।

‘রাজনৈতিক দলগুলো যে বক্তব্য দেয় সেগুলো তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য। এখানে বিরোধের জায়গা নেই। তারা জিনিসটা একভাবে দেখেন, আমরা হয়তো আমাদের একটা কর্মপরিকল্পনায় আছি। সবকিছু নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত আসবে।’

Advertisement

এই উপদেষ্টা বলেন, বিএনপি মহাসচিব রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র হিসেবে কথা বলেছেন। আমরা আমাদের জায়গা থেকে কথা বলেছি। আশা করা যাচ্ছে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবো।

জাতীয় পার্টির সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয় কি না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকটি জিনিস সমান্তরালভাবে চলছে। একটি হচ্ছে সংস্কার, আরেকটি নির্বাচনের রোডম্যাপ, অন্যটি হচ্ছে বিচারের দাবি। এই যে মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডগুলো হলো, শত শত কিশোর-কিশোরী তাদের দৃষ্টিশক্তি হারালো, এগুলোর বিচার না হওয়া পর্যন্ত যাদের এগুলোর ব্যাপারে অভিযুক্ত করা হয়, তাদের সঙ্গে আলোচনার স্পেস কতটুকু, সেটি এখনো একটি বড় প্রশ্ন?

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব অভিন্ন নদীতে অবশ্যই আমাদের স্বার্থটা রক্ষা করতে হবে। গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০২৬ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবো। আমাদের যে প্রস্তুতি সেটি আমরা শুরু করে দিয়েছি।

আরও পড়ুন

সংস্কার বাস্তবায়ন করতে চাই, নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলের ঐক্যের ওপর

তিনি বলেন, অনেক সময় আপনারা শুনবেন তিস্তা মহাপরিকল্পনা চাই বা চাই না। তিস্তা মহাপরিকল্পনায় কী আছে- আপনারা কখনো দেখেছেন? না দেখে চাই কেন, আবার চাই না-ওবা কেন? 

‘আমার কথা হচ্ছে তিস্তা নদীতীরবর্তী লোকজন কী চায়- সেটার ওপর ভিত্তি করে আমরা তিস্তার ব্যাপারে একটা পরিকল্পনা করবো। এটিকে আমরা পরিকল্পনা বলবো, মহাপরিকল্পনা বলবো, নাকি কর্মসূচি বলবো- সেটা পরের কথা। আমরা এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছি, তিস্তার ব্যাপারে যে দেশই সহযোগিতা করুক না কেন, জনগণের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। জনগণ যা চায় পরিকল্পনায় তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। জনগণের সঙ্গে আলোচনাটা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় করবে।’

আগামী মাসের শুরুতে স্থানীয় জনগণের পরামর্শ নেওয়ার কাজ শুরু হবে বলেও জানান পানিসম্পদ উপদেষ্টা।

শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ভারতকে চিঠি পাঠানোর অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা যেটুকু বিভিন্ন মাধ্যমে বুঝেছি, এখন পর্যন্ত ভারতের অবস্থান তাকে (শেখ হাসিনা) ফিরিয়ে দেওয়া হবে না। আনুষ্ঠানিক উত্তর আমরা যখন পাবো, তখন আপনারা জানতে পারবেন।

আরএমএম/এমকেআর