দেশজুড়ে

প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই চলছে ‘হুমগুটি’ খেলা

প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই চলছে ‘হুমগুটি’ খেলা

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই শুরু হয়েছে ২৬৬তম ঐতিহ্যবাহী ‘হুমগুটি’ খেলা।

Advertisement

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় উপজেলার দেওখোলা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের দশমাইল এলাকায় এ খেলা শুরু হয়। এতে হাজারও খেলোয়াড় অংশ নিয়েছেন। খেলার আশপাশের রয়েছে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়।

এর আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় সোমবার (১৩ জানুয়ারি) হুমগুটি খেলা বন্ধ করতে তৎপরতা চালায় পুলিশ। রাত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েও পুলিশ ব্যর্থ হয়। সকাল থেকেই ফুলবাড়িয়া, মুক্তাগাছা, ত্রিশাল, সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ঢাকঢোল ও বাদ্যযন্ত্রের তালে হাজারও খেলোয়াড় ও দর্শনার্থী আসতে থাকেন। ধীরে ধীরে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় খেলার মাঠ।

ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুকনুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ খেলা বন্ধ রাখতে তৎপরতা চালিয়েছে। কিন্তু সকাল থেকেই প্রচুর মানুষ খেলার মাঠে এসে উপস্থিত হন। জনস্রোত ফেরানো সম্ভব না।

Advertisement

তিনি বলেন, খেলায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে এর দায় খেলোয়াড়দেরকেই নিতে হবে। আশপাশে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।

এদিকে হুমগুটি খেলাকে কেন্দ্র করে মাঠে বসেছে মেলা। শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী মানুষ মেলায় আনন্দে মেতেছেন।

ত্রিশাল পৌর এলাকা থেকে আসা আজিজুল হক বলেন, ‘আমার বড় বোনের বাড়ি ফুলবাড়িয়ায়। তাই প্রতিবছর হুমগুটি খেলা দেখতে বোনের বাড়িতে চলে আসি। এবারও বোনের পরিবারের ছোট্ট ছেলেমেয়েসহ কয়েকজনকে নিয়ে খেলা দেখতে এসেছি। এতে আমাদের চেয়ে ছোট্ট ছেলেমেয়েরা বেশি আনন্দ করছে।’

ফুলবাড়িয়া উপজেলার দেওখোলা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের দশমাইল এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আব্দুল আজিজ বলেন, ‘এ খেলাটি আমার বাপ-দাদারাও খেলেছে। তাই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে প্রতিবছর এ খেলার আয়োজন করা হয়। খেলাকে কেন্দ্র করে আমাদের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনরা এসেছেন। তাদের হরেকরকমের পিঠাসহ বিভিন্ন খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে। আমাদের কাছে ঈদের আনন্দের মতো লাগছে ‘

Advertisement

জনশ্রুতি আছে, মুক্তাগাছার তৎকালীন জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী ও ত্রিশালের বৈলরের জমিদার হেমচন্দ্র রায় জমি পরিমাপের বিরোধ সমাধানে তাদের প্রজাদের মধ্যে কৌশল ও শক্তির খেলা বৃত্তাকৃতির বল ‘হুমগুটি’ খেলার আয়োজন করেছিলেন। দুই জমিদারের সীমানা তেলিগ্রাম বড়ইআটা গ্রামে ধানের পতিত জমিতে এ খেলার আয়োজন করা হয়। খেলার শর্ত ছিল, যে জমিদারের প্রজারা প্রায় ৪০ কেজি ওজনের পিতলের বল ‘হুমগুটি’ নিতে পারবেন, সেই জমিদারের জমির পরিমাপ হবে সাড়ে ৬ শতাংশে এক কাঠা। পরাজিত জমিদারের এলাকার জমির পরিমাপ হবে ১০ শতাংশে এক কাঠা।

জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর প্রজারা খেলায় বিজয়ী হন। এরপর থেকে জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর ‘পরগনা’ এলাকায় জমির পরিমাপ হয় সাড়ে ৬ শতাংশে এক কাঠা। জমিদার হেমচন্দ্র রায়ের এলাকার ‘তালুক’ জমির পরিমাপ হয় ১০ শতাংশে এক কাঠা।

সে রেওয়াজ মেনে এখনো প্রতিবছর খেলার আয়োজন করা হয়। খেলোয়াড়রা পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ চার ভাগে বিভক্ত হয়ে খেলতে শুরু করেন। কোনো বছর সন্ধ্যায়, কোনো বছর রাতে, আবার কোনো বছর পরদিন কিংবা কয়েকদিন পরে খেলা শেষ হয়। টেনেহিঁচড়ে কাড়াকাড়ি করে যে বা যারা এই গুটি গুম করে ফেলতে পারবেন, তারাই বিজয়ী।

কামরুজ্জামান মিন্টু/এসআর/জেআইএম