দেশজুড়ে

প্রজেক্টরে মুজিববর্ষের লোগো, পণ্ড হয়ে গেলো নেসকোর সভা

প্রজেক্টরে মুজিববর্ষের লোগো, পণ্ড হয়ে গেলো নেসকোর সভা

রংপুরে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাইয়ের (নেসকো) প্রিপেইড মিটার স্থাপন বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রেজেন্টেশনে বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ মুজিববর্ষের লোগো ব্যবহার করা নিয়ে তুমুল হট্টগোল হয়েছে। একপর্যায়ে পণ্ড হয়ে গেছে মতবিনিময় সভা। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানানো হয়েছে।

Advertisement

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে নেসকো কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সোমবার দুপুরে রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রিপেইড মিটার স্থাপন বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে নেসকো। সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল সভাপতি হিসেবে স্বাগত বক্তব্য দেন।

এরপর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে নেসকোর আওতাধীন এলাকায় স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্পের প্রেজেন্টেশন দেন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুল মুরসালিন। তার প্রেজেন্টেশনের শুরুতেই স্ক্রিনে ভেসে ওঠে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত মুজিব শতবর্ষের লোগো, যা চোখে পড়া মাত্রই প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে পুরো সভাকক্ষ।

Advertisement

এসময় উপস্থিত জাতীয় নাগরিক কমিটি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটি, বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থ সুরক্ষা কমিটি, সাধারণ গ্রাহকসহ অংশ নেওয়া অংশীজনরা তীব্র প্রতিবাদ জানান। একইসঙ্গে বিতর্কিত প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধের কথা তুলে এ ঘটনাকে পরিকল্পিতভাবে ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের নকশা হিসেবে উল্লেখ করেন তারা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বলেন, নেসকো প্রিপেইড মিটার স্থাপন বিষয়ে মতবিনিময় সভার প্রেজেন্টেশনে মুজিববর্ষের লোগো ব্যবহার করে অন্তর্বর্তী সরকার ও ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। এটা কোনো ভুল নয় বরং পূর্বপরিকল্পিত। তারা ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগী। তারা ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে প্রমোট করতে চাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, নেসকোর সব ফ্যাসিবাদী কর্মকর্তাকে অপসারণ করতে হবে। বিভিন্ন প্রকল্পের দুর্নীতির তদন্ত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে আমরা মাঠে নামতে বাধ্য হবো।

জাতীয় নাগরিক কমিটির রংপুরের সংগঠক আলমগীর নয়ন বলেন, নেসকো সুকৌশলে সভায় মুজিববাদ বহালের অপচেষ্টা করেছে। এর সঙ্গে উপস্থাপনকারী নেসকোর প্রধান প্রকৌশলীসহ অন্য সবাই জড়িত। আমাদের কাছে তথ্য আছে নিয়োগের সময় তিনি ১০ নম্বরে ছিলেন। সেখান থেকে লাফ দিয়ে এক নম্বর হয়ে নিয়োগ পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের সরাসরি মেকানিজমে তিনি নিয়োগ পেয়েছেন। তাকে দ্রুত অপসারণ করতে হবে।

Advertisement

রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, প্রিপেইড মিটার প্রকল্পটি ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের অর্থ লোপাটের একটি প্রকল্প। এর মাধ্যমে বিদেশে হাজার হাজার কোটি পাচার করেছে পতিত সরকার। আমরা আন্দোলন করছি এই মিটার স্থাপন না করার জন্য। কিন্তু তারপরও নেসকো প্রকল্পের নামে অর্থ তছরুপের জন্যই জনগণের দাবি উপেক্ষা করে মিটার লাগাচ্ছিল। তারা যে ফ্যাসিস্টের অনুসারী সেটা প্রমাণ হলো সভায় মুজিববর্ষের লোগো ব্যবহার করে। আমরা এই মিটার স্থাপন বন্ধের পাশাপাশি যারা ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন নেসকো থেকে তাদের অপসারণ চাই।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত নেসকো রংপুরের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, এই ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। কীভাবে এটা হলো তা জানার জন্য আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, এই ঘটনার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকবে।

তিনি বলেন, প্রিপেইড মিটার স্থাপন নিয়ে জনগণের দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই আমরা সভাটির আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু সভায় তাদের প্রেজেন্টেশনে মুজিবর্ষের লোগো ছিল। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। সবাই আমরা এটার প্রতিবাদ করেছি। আমরা মনে করছি সভাকে বিতর্কিত করার জন্যই এটা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছি। এছাড়াও প্রিপেইড মিটার কার্যক্রম বন্ধের জন্যও আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছি।

উল্লেখ্য, প্রিপেইড মিটারের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে তা স্থাপন বন্ধের দাবিতে দুই সপ্তাহ ধরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, গণসংযোগ, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন প্রতিবাদমুখর কর্মসূচি পালন করছেন রংপুরবাসী। তবে জনস্বার্থ উপেক্ষা করেই নেসকো কর্তৃপক্ষ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মিটার স্থাপনের কাজ অব্যাহত রাখে, যা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে বিদ্যুৎসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানটি।

জিতু কবীর/এফএ/এমএস