আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জামালপুরে হিন্দুদের ওপরে আক্রমণ, বাড়িঘর-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ এবং জমি দখলের অভিযোগ করে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দের বাড়িতেও হামলা হয়। লুটপাট করা হয় বাড়িতে থাকা মালামাল। বিজন কুমার চন্দের বাড়িতে হামলার বিষয়টি ‘সংখ্যালঘুর বাড়িতে হামলা’ বলে অপব্যাখ্যা দিয়েছে একটি মহল। তবে স্থানীয়রা বলছেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর ক্ষোভ থেকেই এই হামলা।
Advertisement
ইসলামপুর উপজেলার দরিয়াবাদ গ্রামের বীরেন্দ্র চন্দ্র দাস এবং তার দুই ভাই বরেন্দ্র চন্দ্র দাস ও বিদ্যুৎ চন্দ্র দাসের কোটি টাকার জমি জবরদখল করেছেন স্থানীয় ভূমিদস্যুরা। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, জায়গাটি নিয়ে ৫ আগস্টের আগ থেকেই ঝামেলা চলে আসছিল।
স্থানীয় রফিকুল বলেন, ‘বিদ্যুৎ চন্দ্র দাস ছিলেন সাবেক ধর্মমন্ত্রীর ছোটো ভাই মাসুদ খানের অন্যতম সহযোগী। ধর্মমন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে তারা এলাকায় সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন করেছেন। আমাদের এলাকায় হিন্দু-মুসলিম কোনো ভেদাভেদ নেই।’
বিদ্যুৎ চন্দ্র দাস বলেন, ‘সরকার পতনের পর আমাদের জায়গাটি কিছু মানুষ দখল করেছিল। পরে ১৪৪ ধরা জারি করে এসিল্যান্ড ও সেনাবাহিনী এসে উদ্ধার করে দিয়ে যায়। এখন জমিটি আমরা চাষাবাদ করছি।
Advertisement
অংকন কর্মকার নামের একজনের প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর ও ১৫ লাখ টাকার মালামাল চুরির অভিযোগ করা হয়। পরে ইসলামপুর বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি ইসলামপুর পৌর আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি ছিলেন।
আরও পড়ুন বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের ছড়াছড়িএকই বাজারের ব্যবসায়ী হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘অংকন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি শত শত মানুষের ওপর নির্যাতন করেছেন। তারা নিজেরাই ৫ আগস্টে তাদের প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছেন। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এখন অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এই বাজারে আরও শত শত হিন্দুদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে, অন্য কোথাও তো কোনো হামলা হয়নি!’
একই বাজারের জিহাদ হাসান নাবিল বলেন, ‘কিছু আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন সনাতন ধর্মের। ইসলামপুরে পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অংকন কর্মকার তাদের অন্যতম। ৫ আগস্ট তার প্রতিষ্ঠানে হামলা হওয়া মানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা নয়। আরও অনেক সনাতন ধর্মাবলম্বীর প্রতিষ্ঠান রয়েছে, কোথাও কোনো হামলা হয়নি।’
প্রণয় কর্মকারের বসতবাড়িতে হামলার ঘটনায় প্রণয় কর্মকার নিজেই বলেন, ‘আমার বড় ভাই অংকন আওয়ামী লীগের বড় নেতা হওয়ায় আমাদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। আমরা হিন্দু-মুসলিম একে অপরে ভাই ভাইয়ের মতো থাকি।’
Advertisement
প্রণয়ের মা শেফালি রানী কর্মকার বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ করি দেখে আমাদের বাড়িতে হামলা করেছে, হিন্দু দেখে না।’
স্থানীয় গোপাল কর্মকারের বাড়িতেও হামলা হয়েছে। গোপাল বলেন, ‘আমার বড় ভাই অংকন কর্মকার উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় নেতা হওয়ায় আমাদের বাড়িতে হামলা করেছে, অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে আশপাশে অন্য কোনো হিন্দু বাড়িতে হামলা হয়নি।’
গোপালের চাচা অঞ্জন কর্মকার বলেন, ‘আমার ভাতিজা আওয়ামী লীগ করে। এ কারণে আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে।’
এ বিষয়ে জামালপুর পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে বিক্ষিপ্ত ঘটনার অপব্যাখ্যা দিচ্ছে একটি পক্ষ। জামালপুরে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই ভ্রাতৃত্ববোধে আবদ্ধ আছেন। জেলা পুলিশ অত্যন্ত সজাগ রয়েছে। এ জেলায় যেহেতু এখন পর্যন্ত এমন ঘটনা ঘটেনি, ভবিষ্যতেও ঘটবে না।
এসআর/জিকেএস